আগস্টে ৩২০ ভুল তথ্য শনাক্ত

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:৪৩ পিএম, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

চলতি বছরের আগস্ট মাসে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ৩২০টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে বাংলাদেশের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার।

রিউমর স্ক্যানারের ওয়েবসাইটে আগস্ট মাসে প্রকাশিত ফ্যাক্টচেক থেকে গণনাকৃত এই সংখ্যার মধ্যে রাজনৈতিক বিষয়ে সবচেয়ে বেশি (২০২) ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রমাণ মিলেছে, যা মোট ভুল তথ্যের প্রায় ৬৩ শতাংশ। এছাড়া জাতীয় বিষয়ে ৬৩টি, আন্তর্জাতিক বিষয়ে ১৫টি, বিনোদন ও সাহিত্য বিষয়ে ১৪টি, ধর্মীয় বিষয়ে ১১টি, শিক্ষা বিষয়ে নয়টি, প্রতারণা বিষয়ে ৩টি, খেলাধুলা বিষয়ে ২টি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে একটি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে আগস্ট মাসে।

রিউমর স্ক্যানার বাংলাদেশের সিনিয়র ফ্যাক্টচেকার তানভীর মাহতাব আবীরের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

ভুল তথ্যের মধ্যে ভিডিও কেন্দ্রিক ভুলই ছিল সবচেয়ে বেশি, ২১৮টি। এছাড়া তথ্য কেন্দ্রিক ভুল ছিল ৬৪টি এবং ছবি কেন্দ্রিক ভুল ছিল ৩৮টি। শনাক্ত হওয়া ভুল তথ্যগুলোর মধ্যে মিথ্যা হিসেবে ২১৯টি, বিকৃত হিসেবে ২৫টি এবং বিভ্রান্তিকর হিসেবে ৭৫টি এবং সার্কাজম হিসেবে ১টি ঘটনাকে সাব্যস্ত করা হয়েছে।

প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আগস্ট মাসে ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে, সংখ্যার হিসেবে যা ২৭১টি। এছাড়া ইনস্টাগ্রামে ১৪৭টি, টিকটকে ৮৬টি, ইউটিউবে ৫৪টি, এক্সে ২৭টি, থ্রেডসে অন্তত ৩টি ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। ভুল তথ্য প্রচারের তালিকা থেকে বাদ যায়নি দেশের গণমাধ্যমও। ২২টি ঘটনায় দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।

বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক অপতথ্য প্রচারের বিষয়টি গেল বেশ কয়েক মাস ধরে আলোচনায়। আগস্টে ১১টি সাম্প্রদায়িক অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে ৬টি ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশি পরিচয়ধারী অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে অপতথ্য প্রচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

রিউমর স্ক্যানার টিমের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, আগস্টে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে জড়িয়ে ৫টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। ভুলতথ্যগুলোর ধরন বুঝতে এগুলোকে রিউমর স্ক্যানার ২টি আলাদা ভাগে ভাগ করেছে। সরকারের পক্ষে যায় এমন ভুল তথ্যের প্রচারকে ইতিবাচক এবং বিপক্ষে যায় এমন ভুলতথ্যের প্রচারকে নেতিবাচক হিসেবে ধরে নিয়ে রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, এসব ভুলতথ্যের সবগুলোতেই সরকারকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

আগস্ট মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে ১০টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। সবগুলোতেই তাকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া, সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও ড. আসিফ নজরুলকে জড়িয়ে ২টি করে (সবগুলোই নেতিবাচক) এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে জড়িয়ে ১টি (নেতিবাচক) ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে সর্বত্র। গেল বেশ কয়েক মাসে এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অপতথ্যের প্রচার বৃদ্ধি পেয়েছে। আগস্টে এ সংক্রান্ত ৮টি অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে।

রিউমর স্ক্যানার আগস্ট মাসের ফ্যাক্টচেকগুলো বিশ্লেষণে দেখেছে, এই সময়ে সক্রিয় রাজনীতিতে থাকা দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), তার অঙ্গসংগঠন এবং নেতাকর্মীদের জড়িয়ে সবচেয়ে বেশি অপতথ্য (৪৫টি) প্রচার করা হয়েছে। এর মধ্যে দল হিসেবে বিএনপিকে জড়িয়ে ২৩টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে, যার প্রায় ৯১ শতাংশ ক্ষেত্রেই দলটিকে নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টির সুযোগ রেখেছে। এই সময়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে ২টি (অর্ধেকই নেতিবাচক) অপতথ্যের প্রচার করা হয়েছে। এর বাইরে ছাত্রদলকে জড়িয়ে এই সময়ে ৫টি (৮০ শতাংশই নেতিবাচক) ও যুবদলকে জড়িয়ে ২টি (সবগুলোই নেতিবাচক) অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে।

বিএনপির পর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, তার অঙ্গসংগঠন এবং নেতাকর্মীদের জড়িয়ে সবচেয়ে বেশি (২৫টি) অপতথ্যের প্রচার করা হয়েছে। এর মধ্যে দল হিসেবে জামায়াতকে জড়িয়ে ১৩টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। এসবের সবগুলোতেই দলটিকে নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টির সুযোগ রেখেছে। দলটির ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে এই সময়ে ৯টি (সবগুলোই নেতিবাচক) অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে।

এছাড়া, আগস্ট মাসে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও দলটির নেতাকর্মীদের জড়িয়ে ১৬টি অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে দল হিসেবে এনসিপিকে জড়িয়ে ১০টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে, যার সবগুলোই দলটিকে নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টির সুযোগ রেখেছে।

কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, তার অঙ্গ-ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন এবং নেতাকর্মীদের নিয়ে আগস্টে ৯২টি অপতথ্যের প্রচার করা হয়েছে। এর মধ্যে দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে জড়িয়ে ৩২টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৯৭ শতাংশ ক্ষেত্রেই দলটির প্রতি ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টির সুযোগ ছিল। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে এই সময়ে ২৩টি অপতথ্য (প্রায় ৯৬ শতাংশই ইতিবাচক) প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। এছাড়া নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়া দলটির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে জড়িয়ে এ মাসে ১৩টি অপতথ্য (৮৫ শতাংশই ইতিবাচক) ও যুবলীগকে জড়িয়ে ৯টি অপতথ্য (৮৯ শতাংশই ইতিবাচক) শনাক্ত করা হয়েছে।

ভুল তথ্যের রোষানল থেকে রক্ষা পাচ্ছে না রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোও। আগস্টে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে জড়িয়ে আটটিসহ এই বাহিনীকে জড়িয়ে ২১টি ভুল তথ্যের প্রচার দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলমকে জড়িয়ে ১টিসহ এই বাহিনীকে জড়িয়ে ২৩টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।

আগস্টে শনাক্ত হওয়া ভুল তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, এই সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি ভুয়া কনটেন্ট শনাক্ত হয়েছে ৩৮টি। একই সময়ে ডিপফেক কনটেন্ট শনাক্ত করা হয়েছে ৩টি।

আগস্ট মাসে ৬টি ঘটনা বা ইস্যু দেখেছে বাংলাদেশ। গত ৭ আগস্ট গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যা, ১৫ আগস্ট দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী, আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন, সিলেটে পাথর লুটের ঘটনা, পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইসহাক দারের বাংলাদেশ সফর, ২৯ আগস্ট ঢাকায় জাতীয় পার্টি (জাপা) ও গণ অধিকার পরিষদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘিরে একাধিক ভুয়া তথ্যের প্রবাহ লক্ষ্য করা গেছে।

এর মধ্যে শেখ মুজিবর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে সর্বাধিক (২১টি) ভুয়া তথ্যের প্রচার দেখা গেছে। এছাড়া, ডাকসু নির্বাচন ইস্যুতে ৮টি, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর ঘিরে ৬টি এবং অন্য তিন ইস্যুতে ৪টি করে ভুয়া তথ্য শনাক্ত হয়েছে।

গণমাধ্যমের নাম, লোগো, শিরোনাম এবং নকল ও ভুয়া ফটোকার্ড ব্যবহার করে ভুল তথ্য প্রচারের পরিমাণ হ্রাস পেতে দেখা যাচ্ছে। আগস্ট মাসে এই পদ্ধতির ব্যবহার করে ১৯টি ঘটনায় দেশের ১২টি সংবাদমাধ্যমকে জড়িয়ে ১৯টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে।

এমএমএআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।