নূরজাহান বেগম মারা গেছেন


প্রকাশিত: ০৫:০৪ এএম, ২৩ মে ২০১৬

ভারত উপমহাদেশের নারীদের প্রথম সাপ্তাহিক ‘বেগম’ এর সম্পাদক নূরজাহান বেগম ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সোমবার সকালে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে(আইসিইউ) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।

তার বড় মেয়ে ফ্লোরা নাসরিন খান গণমাধ্যমকে বলেন, সকাল সাড়ে ৮টায় কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে তিনি মারা যান। ডাক্তাররা চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু এর মধ্যে দ্বিতীয়বার উনার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়।

নূরজাহান বেগমের নাতনি প্রিয়তা ইফতেখার গণমাধ্যমকে জানান, গত ৫ মে বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের কেবিনে ভর্তি করা হয়। এ সময় তিনি ঠিকভাবে শ্বাস নিতে পারছিলেন না। দু’দিন পর গত ৭ মে দুপুরে তার অবস্থার আরও অবনতি হয়। পরে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নিয়ে ‘লাইফ সাপোর্টে’ রাখা হয়। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে চির বিদায় নেন বেগম খ্যাত নূরজাহান।


এদিকে, নূরজাহান বেগমের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক জানিয়েছেন বলে তার উপ প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকন জানিয়েছেন।
 
১৯৪৭ সালে ২০ জুলাই কলকাতা থেকে প্রথমবারের মতো প্রকাশ পায় মহিলাদের জন্য সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘বেগম’। যার সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন বেগম সুফিয়া কামাল।
 
নারী জাগরণের পথিকৃৎ হিসেবে বেগম রোকেয়া, বেগম সুফিয়া কামালের পর যাঁর নাম আসে তিনি নূরজাহান বেগম।
 
১৯৫০ সালে ৩ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে ‘বেগমে’র যে চতুর্থ বর্ষ সংখ্যাটি বের হয় তার সম্পাদনায় ছিলেন নূরজাহান বেগম।

বেগম নিয়মিত সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশ হতো। মুসলমান পুরুষরাই যেখানে হিমশিম খাচ্ছিলেন সাহিত্য সংস্কৃতি এবং শিল্পচর্চায়। সেখানে নূরজাহান বেগমের অনমনীয় ব্যক্তিত্ব, সাংস্কৃতিক সচেতনতা, শিল্পবোধ এবং নিরলস কর্মপ্রচেষ্টার মাধ্যমে ‘বেগম’কে তার গন্তব্যে পৌঁছাতে এতটুকু পিছপা হননি।
 
বেগমের সম্পাদনার দায়িত্ব নেয়ার পরপরই শুরু হয় ’৫২ এর ভাষা আন্দোলন। শাসক শোষকগোষ্ঠীর নির্মম কষাঘাতে বাংলা ভাষার ওপর চলে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। শুধুমাত্র ‘বেগম’ পত্রিকাই নয় মহিলাদের প্রতিষ্ঠিত ‘বেগম ক্লাব’কেও এগিয়ে নেয়ার পথ চলার নূরজাহান বেগম দিশারীর দায়িত্ব পালন করেন। ‘বেগম ক্লাব’ বেগম সুফিয়া কামাল শুরু করলেও শেষ অবধি নূরজাহান বেগমই এই ক্লাবের সামগ্রিক দায়ভার গ্রহণ করেন।
 
বেগম পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সওগাত পত্রিকার সম্পাদক ও নূরজাহান বেগমের বাবা মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন। বেগম-এর প্রথম সংখ্যা ছাপা হয়েছিল ৫০০ কপি। মূল্য ছিল চার আনা। এটি ভারত উপমহাদেশের প্রথম নারী সাপ্তাহিক পত্রিকা।
 
বাংলাদেশে নারী সাংবাদিকতার অগ্রদূত ও সাহিত্যিক নূরজাহান বেগম ১৯২৫ সালের ৪ জুন চাঁদপুর জেলার চালিতাতলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪২ সালে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৪৪ সালে কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ থেকে তিনি আইএ এবং ১৯৪৬ সালে একই কলেজ থেকে তিনি বিএ পাস করেন। ১৯৫২ সালে কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলার প্রতিষ্ঠাতা রোকনুজ্জামান খানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
 
নারীর অবস্থার উন্নয়ন ও সাহিত্যক্ষেত্রে অবদানের জন্য নূরজাহান বেগম বহু পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন। ১৯৯৭ সালে তিনি রোকেয়া পদক পান। এ ছাড়া বাংলাদেশ মহিলা সমিতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, লেখিকা সংঘ, কাজী জেবুন্নেসা মাহাবুবুল্লাহ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ সাংবাদিক ফোরাম, রোটারি ক্লাব প্রভৃতি সংগঠন থেকে তিনি স্বর্ণপদক পেয়েছেন।

জেইউ/এএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।