যেমন কাটে খবরের ফেরিওয়ালাদের ঈদ

খালিদ হোসেন
খালিদ হোসেন খালিদ হোসেন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৫৪ পিএম, ১০ জুলাই ২০২২

আজ ঈদুল আজহা। সবাই যখন ঈদ আনন্দে মেতেছেন তখন গণমাধ্যমকর্মীদের অনেকেই নিজের পরিবার-পরিজনের সঙ্গে না থেকে সেই আনন্দের খবর পৌঁছে দিতে ব্যস্ত। ঈদ উপলক্ষে অফিস-আদালত, বিপণিবিতানসহ সবকিছু বন্ধ থাকলেও খোলা গণমাধ্যম অফিসগুলো। যেকোনো বিশেষ দিনেই গণমাধ্যমের ব্যস্ততা আরও বেড়ে যায়। ফলে নিজের ইচ্ছে চাপা দিয়েই দায়িত্ব পালন করতে হয় গণমাধ্যম কর্মীদের।

ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি জাহানারা পারভীন এবারের ঈদুল আজহাতে ছুটি না কাটিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ঈদে অফিসের পরিবেশ উৎসবমুখর থাকে। শহরে চলাচলেও সুবিধা। পথে যানবাহন কম থাকে। রিপোর্টের কাজে এখানে-সেখানে আসা যাওয়া করা সহজ হয়। ঈদে অনেক বছর ধরে অফিস করি। এটাও একটা অভিজ্ঞতা।

বিজ্ঞাপন

নাগরিক টিভির প্রধান প্রতিবেদক ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির যুগ্ম সম্পাদক শাহানাজ শারমিন বলেন, আমাদের পেশাটা অন্য দশটা পেশা থেকে ব্যতিক্রম। তাই সবার উৎসব কেমন কাটে, কোথায় সমস্যা, কে বাড়ি পৌঁছালো না, কে ঈদে ছুটি-বোনাস পায়নি, কোথায় দুর্ঘটনা ঘটলো- এসব খবর সবাইকে জানাতে কখন যেন নিজের উৎসব শেষ হয়ে যায়। এভাবেই কাটে খবরের ফেরিওয়ালাদের দিনরাত, সহকর্মীরা হয়ে ওঠে আপনজন।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) প্রযোজক ইকবাল ফরহাদ বলেন, ঈদের আনন্দ উপভোগ করি সহকর্মীদের সঙ্গে। কাজের মধ্যেই চলে ঈদ উদযাপন। অনেক বছর এমন হওয়ায় এটা এখন অভ্যাসের মতো সয়ে গেছে। তবুও সন্তানসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে সময় কাটাতে না পারার আক্ষেপ আছে। এবার ঈদের পরপর আমার ভাগ্নির বিয়ের অনুষ্ঠান আছে। পরিবারের সবাই গ্রামের বাড়ি গেছে। আমি ছুটি পাইনি। কোরবানিও গ্রামে দিয়েছি। তাই ঢাকায় নিজের কাজ কম। বাসার সামনের মসজিদে ঈদের নামাজ পড়ে অফিসে চলে এসেছি। সব মিলিয়ে চলছে জীবন, আলহামদুলিল্লাহ।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার হাসনায়েন তানভীর বলেন, মানুষ বাড়ি যায় আমরা তাকিয়ে দেখি, নিউজ কাভার করি। আবার ঈদের নামাজ বা কুশল বিনিময় সে খবরও সংগ্রহ করি। এটাই আমাদের কাজ। আর এই কাজের মধ্যে আনন্দ খুঁজে নেই। আন্যদিকে কর্মক্ষেত্রের সহকর্মীরাও পরিবারের সদস্য হয়ে উঠেছেন। তাই বিশেষ দিনে কাজ করতে এখন খুব একটা খারাপ লাগে না।

ঢাকা পোস্টের সিনিয়র রিপোর্টার এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের দপ্তর সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান বলেন, পরিবার-পরিজন নিয়ে অন্যরা যখন ঈদ উদযাপন করে, তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা থাকেন নিরাপত্তা দিতে আর চিকিৎসকরা থাকেন সেবা দিতে। তেমনি সাংবাদিকরা দেশের মানুষকে তথ্যসেবা দিতে ছুটে বেড়ান। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার সুযোগ থাকে না। অথচ সাংবাদিকরা প্রত্যাশিত অধিকার ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত।

ইংরেজি দৈনিক দ্যা বিজনেস স্টান্ডার্ড-এর রিপোর্টার জয়নাল আবেদীন শিশির বলেন, গ্রামে বাবা-মার সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে না পারায় সকালে কিছুটা মন খারাপ ছিল। কিন্তু সকালে রাস্তায় বের হলে পুরো ঢাকায় ফাঁকা রাস্তায় যাতায়াতে ব্যাপক আনন্দ অনুভব হয়। শহরের অলি-গলিতে ধনীদের কোরবানি ও গরিবদের মধ্যে মাংস বিতরণের দৃশ্য ছিল অন্য রকম অনুভূতি। নগরের ধনী-গরিব সবার চোখে-মুখেই আনন্দের ছাপ ফুটে উঠেছে। সব মিলিয়ে আজকের ঢাকা ছিল মানবিক ঢাকা।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

এসএ টিভির রিপোর্টার মাইন উদ্দিন আরিফ বলেন, ঈদে গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে আমার যে অভিজ্ঞতা সেটি পুরানো না। মানুষ যখন গ্রামের বাড়িতে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে যায় তখনও আমরা রাজধানীতে বসে সে মানুষগুলোর তথ্য জাতির সামনে তুলে ধরি। তবে কখনো কখনো খারাপ লাগে যখন দেখি সবাই মা-বাবার সঙ্গে ঈদ উদযাপন করছে, আনন্দে মেতে উঠছে- অথচ আমরা সেটা পারছি না। তবে এর মধ্যেও একটা ভালোলাগা আছে, কারণ আমরা কাজ করি দেশের মানুষের জন্য। অফিসের সহকর্মীদের সঙ্গেই আমাদের ঈদ কাটে, আনন্দ করি। ভালো লাগে এখানেই। ঈদের দিনও খবরের পেছনে আমাদের অনেক ব্যস্ততা। আর এর মধ্যে আনন্দ খুঁজে পাই।

দ্যা রিপোর্ট ডট লাইভের স্টাফ রিপোর্টার অধরা ইয়াসমিন বলেন, আমি ঢাকার স্থানীয় হওয়ায় বরাবর ঢাকাতেই ঈদ করি। তবে সাংবাদিকতা করার ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে ঈদের দিনও ডিউটি করতে হয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। কর্মস্থল মানেই তো দ্বিতীয় পরিবার। স্বাভাবিক একটু খারাপ লাগবে, তবে খুব বেশি খারাপ লাগছে না। সহকর্মীদের সঙ্গে আড্ডা আর কাজ- উভয় মিলে ভালোই কাটছে।

এসএ টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক জাহিদুর রহমান খান বলেন, সাংবাদিকদের দেশ ও জাতির জন্য কাজ করতে হয়। যে কারণে কাজই আমাদের ঈদ। সকাল থেকেই অফিস করছি, কাজ করছি, অফিসে আছি।

বিজ্ঞাপন

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

দৈনিক আমাদের নতুন সময়ের নির্বাহী সম্পাদক সালেহ বিপ্লব বলেন, গণমাধ্যমে আসার আগে থেকেই জানা ছিল, সাংবাদিকদের ছুটি কম। আসার পর জানলাম, এক ঈদে ছুটি পাবো, আরেক ঈদে ডিউটি। পত্রিকাতে দুটো ঈদেই ছুটি কাটানো যেতো আমাদের শুরুর সময়টাতে, এখন আর সম্ভব না অনলাইন ভার্সন আসার কারণে। ফলে গণমাধ্যমে দুই ঈদে দুই গ্রুপ ছুটি পায়। এভাবেই চলে গণমাধ্যমকর্মীদের জীবন।

কেএইচ/কেএসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।