ভিডিও EN
  1. Home/
  2. নারী ও শিশু

কর্মক্ষেত্রে পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নারী

প্রকাশিত: ০৬:১৭ পিএম, ০৭ মার্চ ২০১৬

আজ বিশ্ব নারী দিবস। ‘অধিকার ও মর্যাদায় নারী পুরুষ সমানে সমান’ এই স্লোগানে জেন্ডার বৈষম্য দূর করে নারীদের এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোসা. সাদিরা খাতুন। বাংলাদেশ পুলিশ সদর দফতরে ডিসিপ্লিন শাখায় কর্তব্যরত তিনি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থানার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে উঠে আসা এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আগের মতো আর নারীদের পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। তবে কর্মক্ষেত্রে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার কারণে নারীরা এখনো পিছিয়ে রয়েছে।

রোববার পুলিশ সদর দফতরে নিজ কার্যালয়ে জাগো নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে কর্মক্ষেত্রে নারীদের যোগ্যতা, বৈষম্য, পদায়ন, অধিকার ও মর্যাদার বিষয়ে কথা বলেন তিনি। পাঠকদের উদ্দেশ্যে এর চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।

জাগো নিউজ : কেমন আছেন?
সাদিরা খাতুন : জ্বি ভালো আছি। নারী দিবসকে কেন্দ্র করেই ছুটোছুটি করতে হচ্ছে। ব্যস্ততার মধ্যেও পিছিয়ে থাকতে চাই না। মিডিয়া কাভারেজ বলে কথা (হেসে)।

জাগো নিউজ : ৮ মার্চ নারী দিবস। দিবস আসে দিবস যায়। নারীদের প্রতি বৈষম্য কি কমেছে? আপনার কি মনে হয়?
সাদিরা খাতুন : আমার মা এবং আমার মধ্যে এক জেনারেশনের পার্থক্য। মায়ের আমলে নারীদের যে অবস্থা ছিল তা থেকে অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে এখনকার নারীরা। কিন্তু আপনি যদি নারী ও পুরুষের মধ্যে পার্থক্য বা তুলনা করেন তাহলে বলবো অনেক পিছিয়ে রয়েছে নারীরা। এর মানে এই নয় নারীরা অযোগ্য। একটা প্রচ্ছন্ন আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিকও পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে দীর্ঘদিনের মজ্জাগত বৈষম্যই নারীদের পিছিয়ে থাকার মূল কারণ। মূল কথা টোটাল সিস্টেমই লস্ট।

জাগো নিউজ : পুলিশে অতিরিক্ত এসপির দায়িত্ব পালন করছেন। তাও আবার পুলিশ সদর দফতরে। খুব কাছ থেকেই নিজ বাহিনীতে নারীদের অবস্থাটা আপনি অবজার্ভ করতে পারছেন। পুলিশে নারীদের কি অবস্থা?
সাদিরা খাতুন : ১৯৭৪ সালে প্রথম পুলিশে নারী সদস্যদের সংযুক্ত করা হয়। এরপর মাঝখানে দীর্ঘদিন নারী পুলিশ সদস্যদের পদায়ন ও নিয়োগ বন্ধ ছিল। এরপর এক যুগ পর নারীদের আবারো পুলিশে সুযোগ দেয়া হয়। ২৫ তম বিসিএস দিয়ে যখন আমি পুলিশে যোগদান করি তখন পুলিশে নারীদের সংখ্যানুপাত ছিল ১ শতাংশ। এখন পুরুষের তুলনায় রয়েছে মাত্র ৪ শতাংশের কিছু বেশি। তাহলে বুঝুন পুলিশে নারীদের অবস্থা। আগের তুলনায় পুলিশে নারীদের সংখ্যা বাড়লেও সময় ও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনেক পিছিয়েই রয়ে গেছে।

জাগো নিউজ : নারীদের সমঅধিকার ও মর্যাদা পাওয়ার ক্ষেত্রে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাকে আপনি কতোটা দায়ী করবেন?
সাদিরা খাতুন : সবার পারিবারিক চিন্তা-চেতনা ও জেন্ডার সেন্স এক নয়। লিঙ্গ সংবেদনশীলতা সবার মধ্যে এখনো আসেনি। আর এর মূল কারণ পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা। তবে আমার শ্বশুড় বাড়ি ও বাবা মা কেউই আমার ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় নি। বাধা দিলে হয়তো আরও অন্য ২০/৫০ নারীর মতো পিছিয়েই থাকতাম।

জাগো নিউজ : পুলিশে নারী সদস্যদের অবস্থান সম্পর্কে যদি বলতেন?
সাদিরা খাতুন : পুলিশে মেয়েদের সংখ্যাটা তো আগেই উল্লেখ করেছি। আর যেসব নারী সদস্য রয়েছেন তাদের নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে কাজ করতে হয়। আমি বিসিএস দিয়ে পুলিশে যোগ দিয়ে পদে পদে বাধার সম্মুখীন হয়েছি। নারীদের প্রমাণ করতে হয় পুরুষের ন্যায় আমরাও পারি। কিন্তু একজন পুরুষ পারবে কি পারবে না তা খেয়াল করা হয় না। কোনো অপারেশন কাজে কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কাজে নারীদের সক্ষমতার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে জানার চেষ্টা চলে। কিন্তু পুরুষের ক্ষেত্রে তা হয় না। এখানেও সুক্ষ্ম মনস্তাত্ত্বিক বৈষম্যের শিকার নারীরা। জেন্ডার সেনসেটিভিটি না থাকায় এমনটি হচ্ছে।

জাগো নিউজ : মেধার কারণে অবস্থানগত ও মর্যাদায় নারীরা কি পিছিযে যাচ্ছে? আপনি মনে করেন?
সাদিরা খাতুন : কেন আপনি নারীদের কম মেধাবী বলবেন? নারীরা মেধার বিকাশের সুযোগই তো পাচ্ছেন না। তাই বলে কি নারীদের মেধা নেই। অবশ্যই আছে। জেন্ডারভেদে যেসব নারী সুযোগ পেয়েছে তারাই অনেক ভালো অবস্থানে গেছেন। নিজের বলে গল্প করছি না, এটাই সত্যি যে আমি নারী। ২৫তম বিসিএস এ আমি প্রশাসন ক্যাডারে তৃতীয় স্থানে ছিলাম। সব ক্যাটাগরিতে আমি ছিলাম ১৪ নম্বরে। মেয়েরা আগের চেয়ে ভালো করছে। অনেকে মনে করে কোটায় নারীরা বেশি সুযোগ পাচ্ছে। আসলে তা নয়। কোটা সিস্টেমটাই বা আসলো কেন? বৈষম্য যুগের পর যুগ চলেছে জন্য তো আজ কোটা সিস্টেম দিয়ে নারীদের এগিয়ে আনার চেষ্টা করেছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজই।

জাগো নিউজ : বেশ কয়েক বছর ধরে নারীরা উদ্যোগী হচ্ছে। ব্যবসা, চাকরি, শিক্ষা ও রাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রে নারীদের উদ্যোগকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
সাদিরা খাতুন : অবশ্যই এটা ভালো দিক। মেয়ে কেনইবা বলছেন। দেখুন মানুষ হিসেবে। নারী ও পুরুষ জেন্ডার কেন্দ্রিক চিন্তা না করে মানুষ হিসেবে ভাবতে হবে। উদ্যোগ পুরুষ নিলে নারীরাও পারবে। নারীদের বেশ কিছু উদ্যোগ সফলতা ও প্রশংসা পেয়েছে। পুলিশের নারী সদস্যরা শান্তি রক্ষা মিশনে গিয়ে অনেক ভালো করছে। প্রশংসা কুড়িয়েছে।

জাগো নিউজ : এবারের নারী দিবসে নারীদের এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে আপনার ব্যক্তিগত অভিমত যদি ব্যক্ত করতেন?
সাদিরা খাতুন : নারীদের এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে পুরুষদের আগে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের পৌরোষিচিত মানসিকতা বদলে ফেলে নারীদের এগিয়ে নিতে হবে। আজকেও বলতে হচ্ছে ‘মর্যাদা ও অধিকারে নারী পুরুষ সমানে সমান’। এই স্লোগানই তো বলে দেয় নারীরা পিছিয়ে। পিছিয়ে পড়া নয়, অগ্রগামী হতে নারীদের ভেতরকার ভীতি ও সংকীর্ণতা ঝেরে ফেলে মেধার পরিচয় দিতে হবে। এই দিনই শুধু পালন নয় ৩৬৫ দিনই হবে নারীদের এগিয়ে যেতে দিন।

জাগো নিউজ : ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কিছু বলুন।
সাদিরা খাতুন : ১৯৯৬ সালে এসএসসি (মেট্রিক) ও ১৯৯৮ সালে এইচএসসি পাশের পর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) থেকে ২০০৪ সালে ফিশারিজ বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছি। এরপর ২০০৬ সালে মাস্টার্স শেষ করি। মাস্টার্সের রেজাল্টে দিতে না দিতেই বিসিএস দিয়ে পুলিশে যোগদান। স্বামী-বাচ্চাদের নিয়ে গুলশানে থাকি।

জাগো নিউজ : নারী দিবস উপলক্ষে শুভ কামনা। ভালো থাকবেন।
সাদিরা খাতুন : জাগো নিউজকেও ধন্যবাদ। আশা করছি জাগো নিউজও তাদের পাতায় নারীদের নিয়ে আলাদা কাজ করবে।

জেইউ/এসএইচএস/বিএ

আরও পড়ুন