৪৪ শতাংশ শিশুকে প্রথম ছয় মাস শুধু বুকের দুধ খাওয়ানো হয়
অর্ধেকেরও কম নবজাতককে জন্মের প্রথম ঘণ্টায় বুকের দুধ খাওয়ানো হয়। ফলে তারা রোগ ও মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়ে। আর মাত্র ৪৪ শতাংশ শিশুকে জীবনের প্রথম ছয় মাস শুধু বুকের দুধ খাওয়ানো হয়, যা ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশে উন্নীত করার যে লক্ষ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতি নির্ধারণী পরিষদ নির্ধারণ করেছে, তার চেয়ে কম।
সোমবার (১ আগস্ট) বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ উপলক্ষে ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল ও ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক ড. টেড্রোস আধানম ঘেব্রেইসুসের যৌথ বিবৃতি এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, যেহেতু বৈশ্বিক নানা সঙ্কট লাখ লাখ শিশুর স্বাস্থ্য ও পুষ্টির জন্য অব্যাহতভাবে হুমকি তৈরি করে চলেছে, তাই জীবনে সম্ভাব্য সবচেয়ে ভালো শুরু হিসেবে শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর অপরিহার্যতা এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
এবারের ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহে’র প্রতিপাদ্য ‘শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য এগিয়ে আসুন: শেখান এবং সহযোগিতা করুন’। বুকের দুধ খাওয়ানো বিষয়ক নীতিমালা ও কর্মসূচিগুলোর সুরক্ষা, প্রচারণা ও সহায়তার জন্য আরও বরাদ্দ দিতে ইউনিসেফ এবং ডব্লিউএইচও বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। বিশেষ করে জরুরি পরিস্থিতিতে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় থাকা পরিবারগুলোর জন্য।
আফগানিস্তান, ইয়েমেন, ইউক্রেন, হর্ন অব আফ্রিকা ও সাহেলসহ যেসব অঞ্চলে জরুরি পরিস্থিতি বিদ্যমান সেখানে নবজাতক ও ছোট শিশুদের নিরাপদ, পুষ্টিকর ও সহজলভ্য খাদ্যের উৎসের নিশ্চয়তা দেয় বুকের দুধ। এটি রোগব্যাধি এবং শিশুর কৃশকায় হয়ে যাওয়াসহ সব ধরনের অপুষ্টির বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। মাতৃদুগ্ধ নবজাতকের প্রথম টিকা হিসেবেও কাজ করে, যা তাদের শৈশবকালীন সাধারণ অসুস্থতা থেকে সুরক্ষা দেয়। তা সত্ত্বেও মানসিক বিপর্যস্ততা, শারীরিক ক্লান্তি, নিজের জন্য আলাদা জায়গা ও গোপনীয়তার অভাব এবং জরুরি পরিস্থিতিতে মায়েদের জন্য ভালো স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকার কারণে অনেক শিশু বুকের দুধ খাওয়ার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
মায়ের দুধ পান সুরক্ষিত রাখা, এ সম্পর্কে প্রচারণা চালানো ও সহযোগিতা করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু প্রাকৃতিক, টেকসই ও প্রথম খাদ্য ব্যবস্থা হিসেবে আমাদের গ্রহকে রক্ষা করার জন্যই নয়, লাখ লাখ শিশুর বেঁচে থাকা, বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর এ কারণেই কিছু প্রচেষ্টাগুলো জোরদারে ইউনিসেফ ও ডব্লিউএইচও, সরকার, সুশীলসমাজ ও বেসরকারি খাতের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
• মাতৃদুগ্ধ পানে সহায়ক নীতিমালা ও কর্মসূচিতে বিনিয়োগ করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া, বিশেষত নাজুক ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার প্রেক্ষাপটে।
• স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটিতে থাকা স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কর্মীদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা বাড়ানো, যাতে তারা সফলভাবে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ার জন্য মায়েদের মানসম্পন্ন পরামর্শ ও প্রায়োগিক সহায়তা দিতে পারে।
• মাতৃদুগ্ধের বিকল্প শিশু খাদ্য বিপণনের আন্তর্জাতিক নীতিমালা সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিশুর যত্নে নিয়োজিত ব্যক্তি ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ফর্মুলা খাতের অনৈতিক বিপণনের প্রভাব থেকে সুরক্ষিত রাখা, মানবিক সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে থাকা ব্যক্তি ও স্বাস্থ্যকর্মীদেরসহ।
• পরিবার-বান্ধব নীতিমালা বাস্তবায়ন করা, যা মায়েদের বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় সময়, স্থান ও সহায়তা প্রদান করে।
আইএইচআর/জেএস/জিকেএস