ইতালি ভ্রমণে ঘুরে দেখুন বিখ্যাত ৫ জাদুঘর
বিশ্বের প্রাচীনতম গীর্জাসমূহ ও বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক বিস্ময়েরও আবাসস্থল ইতালি। দক্ষিণ-মধ্য ইউরোপের দেশ ইতালি বেশি বিখ্যাত খাবার-দাবার, গ্রিক মন্দিরসমূহ ও রোমান সাম্রাজ্যের জন্য। খাবার আর মন্দিরের বিষয়টি বাদ দিলে ইতালিতে আছে বিশ্বের কিছু আকর্ষণীয় ও নজরকাড়া জাদুঘর, যেগুলোতে আছে সেরা চিত্রকলার সংগ্রহ। এই জাদুঘরগুলো চমৎকারভাবে উপস্থাপন করে ইতালিয়ান চিত্রকলা ও সংস্কৃতিকে। তাই ইতালি ভ্রমণে বিখ্যাত ৫ জাদুঘরে ঢুঁ মেরে আসতে ভুলবেন না-
পম্পেই
মৃত শহর পম্পেইয়ের স্মৃতিবিজড়িত জাদুঘরটি নেপলস শহরের সীমানায় অবস্থিত। সযত্নে সংরক্ষিত কিছু চিত্রকর্ম আছে এখানে। জাদুঘরটির প্রতিটি প্রান্তই পম্পেইয়ের সমৃদ্ধ ইতিহাস বর্ণনা করে। এখানে দেখতে পাবেন পুরনো হস্তলিপি, মার্বেল ও ব্রোঞ্জের মূর্তি।
এই জাদুঘর অ্যান্টিকুয়ারিয়াম হিসেবে পরিচিত ও ইতিহাসের বিভিন্ন ধ্বংসযজ্ঞকে নিবেদিত যা মূলত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের। ১৯৮০ সালে এটিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো কিন্তু এক দশক পর পুনরায় চালু করা হয়। এটি তার দর্শনার্থীদেরকে রোমান সংস্কৃতির সমৃদ্ধ ইতিহাসের শিক্ষা দেয়। এই বিশেষ জাদুঘর ঘুরে দেখে পম্পেইয়ের ইতিহাস সম্পর্কে জানার সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত নয়।
ভ্যাটিকান মিউজিয়ামস, রোম
পিয়ো-ক্লেমেন্তিনে মিউজিয়াম ও সিস্টিন চ্যাপেল মিউজিয়ামসহ মোট ২৩টি জাদুঘরকে একসঙ্গে বলা হয় ভ্যাটিকান মিউজিয়ামস। সবগুলোই ইতালিয়ান শিল্পকলাকে সূক্ষ্মভাবে উপস্থাপন করে বলে এগুলোর একটিও মিস করা উচিত নয়। ১৫০৬ খ্রিস্টাব্দে পোপ দ্বিতীয় জুলিয়াস ভ্যাটিকান মিউজিয়াম কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করেন ও এখানে একসাথে পাওয়া যাবে সালভাদর দালি, ভিনসেন্ট ভ্যানগগ, আলবার্তো বুরি প্রমুখ কিংবদন্তি শিল্পীদের চিত্রকর্ম।
২৩টি জাদুঘরের মধ্যে ভ্যাটিকান মিউজিয়ামসের প্রধান আকর্ষণ হলো সিস্টিন চ্যাপেল। অন্য ২২টিকে যদি মিস করতেই হয় তাহলে অবশ্যই সিস্টিন চ্যাপেল খুব ভালোভাবে ঘুরে দেখার চেষ্টা করবেন। সুবিশাল মিউজিয়াম কমপ্লেক্সে আবার হারিয়ে যাবেন না যেন!
ন্যাশনাল আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়াম, নেপলস
নেপলসের ন্যাশনাল আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়াম হলো ইতালির সবচেয়ে বিখ্যাত জাদুঘরগুলোর একটি। এখানে আছে মোজাইকের সমাহার ও ব্রোঞ্জের মূর্তিসমূহ। বিভিন্ন প্রকার শৈল্পিক বিস্ময়সমূহের উপস্থিতির কারণে এটিকে নেপলসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোর একটি মনে করা হয়। এখানে প্রাচীন রোমের স্মৃতিচিহ্নগুলোর প্রদর্শনী হয় ও এটি প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার অপরিহার্য অংশগুলোকে তুলে ধরে।
১৫৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত জাদুঘরটির মোজাইকের সংগ্রহশালার মধ্যে আছে আলেকজান্ডার মোজাইক। এই জাদুঘরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় সংগ্রহ হলো খ্রিস্টপূর্ব ২৭০০- ২২০০ সালের মিশরীয় সংস্কৃতির ২৫০০ সামগ্রী। এই জাদুঘর মিশরীয় ইতিহাস থেকে প্রাচীন রোমের সবকিছুই তুলে ধরে। তাই নেপলসের এই প্রধান আকর্ষণটি মিস করা উচিত নয়।
লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি মিউজিয়াম, ফ্লোরেন্স সিটি
নাম শুনে নিশ্চয়ই স্পষ্ট ধারণা করতে পারছেন, এই জাদুঘরে দেখা যাবে কিংবদন্তি এক ও অদ্বিতীয় লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির জগদ্বিখ্যাত সব চিত্রকর্ম। ফ্লোরেন্স শহরের এক বিস্ময়কর জায়গা এটি। জাদুঘরটি হচ্ছে শিল্পকলা ও বিজ্ঞানের এক নিখুঁত সমন্বয়। এখানে দর্শনার্থীরা পাবেন বিপুলসংখ্যক শিক্ষামূলক উপাদান।
জাদুঘরটি আপনাকে জানাবে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির জীবনের অনেক না জানা দিক ও তার সুপরিচিত চিত্রকর্ম ‘দ্য লাস্ট সাপার’ সম্পর্কে। এই চিত্রকর্ম তৈরির সময় লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি শুধুই তেল রং ব্যবহার করেছিলেন যা ছিলো তার উদ্ভাবিত একটি বিশেষ কৌশল। আপনি যদি প্রবল আগ্রহ নিয়ে এই কীর্তিমান শিল্পীকে আবিষ্কার করতে চান তাহলে জাদুঘরটিতে অবশ্যই আপনার যাওয়া উচিত।
ফেরারি মিউজিয়াম, মারানেলো
এই জাদুঘরটি মূলত, গাড়িপ্রেমীদের জন্য। ফেরারি মিউজিয়ামে ইতালিয়ান চিত্রকলা নেই, তবে আছে বিস্ময়কর সব ফেরারি গাড়ি যা কমবেশি সবাই পছন্দ করেন। উত্তর ইতালির মডেনা শহরের কাছে ফেরারির হোমটাউন মারানেলোতে জাদুঘরটি অবস্থিত। এটি ইতালির সবচেয়ে বিখ্যাত ও সেরা কার মিউজিয়ামগুলোর একটি।
জাদুঘরটি তার দর্শনার্থীদেরকে পরিচয় করিয়ে দেয় মোটরগাড়ি শিল্পের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে। জাদুঘরের সর্বত্রই ফেরারি গাড়ির উপস্থিতি থাকলেও ইতালির ইতিহাস তুলে ধরে এমন কিছু ঐতিহাসিক উপাদানও মিলবে এখানে। জাদুঘরটির বিস্তৃতি ২৫০০ বর্গমিটার জায়গা জুড়ে ও এখানে রোমাঞ্চকর কর্মকাণ্ডের কোনো অভাবই নেই।
জেএমএস/জিকেএস