ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ভ্রমণ

অলৌকিকতায় ঘেরা তেবাড়িয়া জামে মসজিদ

আরিফ উর রহমান টগর | টাঙ্গাইল | প্রকাশিত: ০১:১৮ পিএম, ০৭ নভেম্বর ২০২৪

মসজিদে দান করলেই পূরণ হয় মনের বাসনা, পাশের পুকুরে গিয়ে বললেই ভেসে ওঠে পিতলের থালা-বাসন! এমনকি রাতের আঁধারে নাকি এই মসজিদে নামাজ পড়েন জ্বিনরাও, এমনই অলৌকিকতায় ঘেরা টাঙ্গাইলের তেবাড়িয়া জামে মসজিদ।

জানা যায়, প্রায় ৪০০ বছর আগে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার সলিমাবাদ ইউনিয়নের তেবাড়িয়া গ্রামে স্থাপিত হয় মসজিদটি। যমুনা নদীর ভাঙনে পুরো এলাকা বিলীন হলেও মসজিদটি অক্ষত থাকায়, অলৌকিক আল্লাহ’র ঘর বলে বিশ্বাস করেন স্থানীয়রা। নদীর স্রোত আর ঢেউয়ের প্রখরতায় মসজিদটি দুলতে থাকে, তবে ভেঙে যায়নি বলে দাবি স্থানীয়দের।

মসজিদটির দৃষ্টিনন্দনও বটে। বড় গম্বুজসহ চারপাশে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ১২টি মিনার ও উত্তর-দক্ষিণ দিকে দুটি দৃষ্টিনন্দন ঘর আছে। যেখানে দাঁড়িয়ে বিশ্বাসী জনসাধারণ হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগল থেকে শুরু করে স্বর্ণসহ নগদ টাকা দান করে মানত করেন।

স্থানীয়দের মতে, ইতিহাস-ঐতিহ্য সমৃদ্ধ তেবাড়িয়া জামে মসজিদ প্রবাহমান যমুনা নদীর কোল ঘেষে আনুমানিক ১৬০১ খ্রীস্ট পূর্বে ২৫৩ শতাংশ জায়গা নিয়ে মৃধা বংশোদ্ভুত আব্দুল মালেক খাঁ মৃধা এই মসজিদ নির্মাণ করেন।

যখন এটি নির্মিত হয় তখন মূল ভবনের পাশে একটি বিশাল আকারের জাম গাছে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত পণ্যবাহী নৌযান বেধে রাখা হত। তৎকালীন নদী থেকে মসজিদ একটু উচু স্থানে নির্মাণ করা হয়েছিল, একারণে সিঁড়ি দিয়ে উঠে মসজিদে প্রবেশ করা হতো।

মসজিদটি নির্মাণ করার পর আব্দুল মালেক খাঁ (মৃধা) মিম্বারে দাঁড়িয়ে উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে অছিয়ত করেছিলেন যে, তার মৃত্যু যে স্থানে হবে তাকে যেন ওইখানেই কবর দেওয়া হয়। এর পরেই তিনি মিম্বার থেকে নমিতেই ইন্তেকাল করেন।

পরবর্তী সময়ে মৃধা বংশোদ্ভূত বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. আতিকুর রহমান তালুকদার মসজিদের পশ্চিম দিকের এলাকা থেকে মোট ৩৭ শতাংশ জমি নিজস্ব অর্থায়নে ও ওই এলাকার মৃত মোহাম্মদ আতোয়ার খান ১০ শতাংশ ও মৃত আকাজত খা’র ৬ কন্যাদ্বয় ৬ বিঘা জমি মসজিদের নামে দান করেন।

জমির উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে অর্জিত অর্থ মসজিদের কোষাগারে জমা করা হয়। আরও দেড় বিঘা জমি মোসলেম তালুকদার মসজিদের নামে দান করেছিলেন। যা কয়েক বছর আগে যমুনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

কথিত আছে, তৎকালীন সময় মসজিদের ভেতরে একজন নেককার পরহেজগার ব্যক্তি অবস্থান করতেন। তাকে সবাই পাগল ভাবতেন কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন একজন আল্লাহর ওলি।

মসজিদটি যখন প্রবাহমান যমুনা নদীর গ্রাসে বিলীন হচ্ছিল, তখন ওই ব্যক্তি নদীর উপর দিয়ে হেঁটে মসজিদের পশ্চিম দিকে অনেক দূর পর্যন্ত চলে যান। এরপর থেকে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে দেখা যায় যমুনা নদী মসজিদ থেকে অনেক দূর পর্যন্ত পশ্চিম দিকে সরে যায়।

এরপর মসজিদটি পর্যায়ক্রমে মুসল্লিদের নামাজের জন্য সন্মুখভাগে দুইটি ছাদ নির্মাণ করা হয়। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া পূর্বের মিনারটি বর্তমানে মসজিদের উত্তর-পশ্চিম পাশে প্রায় ১০০ ফিট উঁচু করে নির্মাণাধীন আছে।

বর্তমানে মসজিদটিতে প্রায় ২ হাজার ২০০ জন মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদ নির্মাণের পর থেকে মৃধা বংশোদ্ভূত সদস্যরা পরিচালনার দায়িত্বে আছেন। বর্তমানে মুতাওয়াল্লীর দায়িত্ব পালন করছেন মৃধা বংশোদ্ভূত বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. হাফিজ খান তালুকদার ও সভাপতি হিসেবে আছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. আতিকুর রহমান তালুকদার।

সলিমাবাদ ইউনিয়নের সন্তান (সাবেক কমান্ডার) বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সুজায়েত হোসেন জানান, টাঙ্গাইল শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরবর্তী পল্লী অঞ্চলে মোগল স্থাপত্য তেবাড়িয়া মসজিদটি ওয়াকফো বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত। সঠিক ব্যবস্থাপনায় মুসুল্লিদের চাহিদা অনুযায়ী আধুনিকায়ন সময়ের দাবি।

এ বিষয়ে তেবাড়িয়া জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. শরিফ খান তালুকদার বলেন, ‘বর্তমানে মসজিদের জন্য বেশ কিছু নির্মাণ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।’

জেএমএস/জিকেএস

আরও পড়ুন