ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ভ্রমণ

বাস-ট্রেনে ক্যাশ লেনদেন হয় না সিঙ্গাপুরে

এম মাঈন উদ্দিন | সিঙ্গাপুর থেকে | প্রকাশিত: ০৪:৩৭ পিএম, ০৩ অক্টোবর ২০২৪

সিঙ্গাপুরের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। এ কারণে সেখানে পর্যটকরা ভিড় করেন বছরের বিভিন্ন সময়ে। জানলে অবাক হবেন, সিঙ্গাপুরে গণপরিবহন ব্যবস্থাও বেশ উন্নত। সেখানে কমবেশি সবাই ট্রেন ও বাসেই যাতায়াত করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

শহরের বিভিন্ন স্থানের ট্রেন ষ্টেশন কিংবা বাস ষ্ট্যান্ড থেকে নির্দিষ্ট গন্তব্য থেকে যাত্রীরা সহজেই ওঠেন পরিবহনে। আর বাস বা ট্রেনে উঠতেই একটি কার্ড পাঞ্চ করেন তারা। আবার গন্তব্যে এসে গেলে পুনরায় কার্ড পাঞ্চ করে নেমে যান। সেখানে কোনো ক্যাশ টাকা লেনদেন নেই। এভাবেই চলছে পর্যটন প্রধান দেশ সিঙ্গাপুরের বাস ও ট্রেনের সার্ভিস।

বাসে-ট্রেনে ক্যাশ লেনদেন হয় না সিঙ্গাপুরে

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বাসে হাজার হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করেন বাস ও ট্রেনে চড়ে। সেখানকার বেশিরভাগ বাস দ্বিতল। পুরো সিঙ্গাপুর শহরের বিভিন্ন রুটে সড়কে চলছে নানা বাস। নির্দিষ্ট বাস ষ্ট্যান্ড থেকে যাত্রীরা উঠে কর্মস্থলে যাওয়া আসা করেন।

কারো সঙ্গে কোনো কথা নেই, সবাই যার যার কাজে ছুটছেন। বাসে শুধু চালক আছেন, কোনো সহকারী নেই। আবার সড়কেও নেই কোনো যানজট, এমনকি ট্রাফিক পুলিশও। শুধু ট্রাফিক সিগনাল পড়লে গাড়িগুলো দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ। আবার শব্দদূষণ এড়াতে অযথা কেউ গাড়ির হর্নও বাজান না।

বাসে-ট্রেনে ক্যাশ লেনদেন হয় না সিঙ্গাপুরে

সিঙ্গাপুরে ট্রেনকে এমআরটি ও এলআরটি বলা হয়। বাসের চেয়েও বেশি যাত্রী ট্রেনে আসা-যাওয়া করেন। এখানকার সব রেললাইন মাটির নিচে। শুধু এলআরটি কিছুটা উপরের লেনে চলাচল করে। একেকটি রেলষ্টেশন যেন পর্যটনকেন্দ্র।

কোন ট্রেন কখন, কত মিনিটে আপনার সামনে এসে পৌঁছাবে তা সেখানে দাঁড়িয়ে বড় স্ক্রিনে দেখতে পাবেন। ট্রেন ষ্টেশনে থামানোর পর মুহূর্তে শত শত যাত্রী নেমে যাচ্ছেন। আবার চোখের পলকে শত শত যাত্রী টেনে উঠে পড়ছেন। ট্রেনের প্রতিটি বগিতে শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধিদের জন্য আলাদা বসার ব্যবস্থা আছে।

সিঙ্গাপুরে বসবাস করেন চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার বাসিন্দা রাজন আলী। তিনি বলেন, ‘এখানে বাস ও ট্রেন খুবই জনপ্রিয় বাহন। মানুষ স্বাচ্ছন্দে এ দুটো পরিবহনে চলাচল করেন। নিরাপদ ও স্বল্প খরচে যাতায়াতের জন্য আমাদের মতো প্রবাসী ও এখানকার বাসিন্দারা এসবেই চলাচল করেন।’

‘কারণ রেন্ট এ কারে খরচ পড়ে অন্তত ৮-১০ গুন বেশি। তাছাড়া কোনো নগদ টাকা লেনদেনের প্রয়োজন হয় না। ইজি লিংক কার্ডের মাধ্যমে যাতায়াত করা যায়। কার্ডে ডলার রিচার্জ করে রাখা হয়, যাওয়া আসার সময় পাঞ্চ করে সবাই চলাচল করে।’

বাসে-ট্রেনে ক্যাশ লেনদেন হয় না সিঙ্গাপুরে

জানা গেছে, তুলনামূলকভাবে কম শুল্ক গ্রহণের জন্য সিঙ্গাপুরের সুনাম দুনিয়াজোড়া। এছাড়া বহু খাতে তারা ট্যাক্স নেয় না। লভ্যাংশ, উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সম্পদ ও উপহার-উপঢৌকন পাওয়া কোনো কিছুর ওপর সেখানে শুল্ক দিতে হয় না। সোনা-রুপার কেনাবেচায় পর্যন্ত ট্যাক্স আরোপ করা হয় না।

এ বাধাহীন লেনদেনের কারণে সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। সিঙ্গাপুরের বাস ও পাতালরেলসহ সব ধরনের সরকারি পরিবহন ব্যবস্থা শুধু সর্বাধুনিক নয়, বিস্ময়কর বিষয় হলো যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের তুলনায় এসব পরিবহনে যাতায়াত ও মালামাল আনা বা নেওয়া অনেক সস্তা।

অন্যদিকে, সেখানে প্রাইভেট কারের মালিক হওয়া অনেক কঠিন করে দেওয়া হয়েছে। কারণ দক্ষিণ কোরিয়ায় যে গাড়িটির যত দাম, সিঙ্গাপুরে তা কিনতে গেলে তার চার গুণ টাকা খরচ করতে হয়। ব্যক্তিগত গাড়ি কম থাকায় সেখানে গণপরিবহনে চলাচল অনেক সহজ হয়েছে।

আরেক প্রবাসী রৌকনুজ্জামান মীর্জা বলেন, ‘সিঙ্গাপুর অনেক পরিপাটি ও চমৎকার একটি দেশ। এখানে কোন ধরনের অনিয়ম নেই। অনেক পর্যটন স্পট থাকায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লোকজন ছুটে আসেন এখানে।’

‘তারা যে কয়দিন থাকেন, যাতায়াত করেন বাস ও ট্রেনে। এ দুটি হলো এখানকার অন্যতম যোগাযোগ মাধ্যম। এখানে যারা বসবাস করে সবার কাছে ইজি লিংক ও ক্রেডিট কার্ড আছে। সবাই ক্যাশ টাকার বদলে কার্ড ব্যবহার করেন।’

বাসে-ট্রেনে ক্যাশ লেনদেন হয় না সিঙ্গাপুরে

বাংলাদেশ থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা পর্যটক মো. ওমর শরীফ বলেন, ‘সিঙ্গাপুর একটি চমৎকার দেশ। একটি দেশকে এতো সুন্দর করে সাজানো যায়, তা সিঙ্গাপুরে না আসলে বুঝতে পারবেন না।’

‘এখানকার জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত। পর্যটনকেন্দ্রগুলোও দেখার মতো। যে কেউ একবার এদেশে আসলে বার বার আসতে চাইবে। এখানে কয়েকদিন ঘুরে বেড়ালাম বাস ও ট্রেনে করে। আমার এক বন্ধু ইজি লিংক কার্ডের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, সে কার্ড দিয়ে সব জায়গায় ঘুরাঘুরি করেছি।’

এমএমডি/জেএমএস/জিকেএস

আরও পড়ুন