ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ভ্রমণ

টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে অদেখা যা কিছু দেখতে পারবেন

ভ্রমণ ডেস্ক | প্রকাশিত: ১১:০৭ এএম, ০৫ অক্টোবর ২০২৩

সাইফুর রহমান তুহিন

যে টাঙ্গুয়ার হাওরে পানির দীর্ঘ প্রবাহ মিশে যায় মেঘালয়ের উঁচু পাহাড়ের সাথে সেই চোখজুড়ানো জায়গাটি প্রতি বছর পরিভ্রমণ করে প্রায় ৩০ প্রজাতির পরিযায়ী বন্য হাঁস। আপনি সহজেই স্থানীয় গ্রাম থেকে একটি ছোট্ট ডিঙি নৌকা ভাড়া করে উপভোগ করতে পারেন এখানকার নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে।

টাঙ্গুয়া এমন একটি ভূমি যার আকৃতি একেক মৌসুমে একেক রকম হয় ও এটি হয় পানির উচ্চতার ওপর নির্ভর করে। মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে এই সুবিশাল জলাভূমি সবসময়ই দেশ-বিদেশের পর্যটকদেরকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। বার্ডওয়াচার বা পাখি পর্যবেক্ষকদের জন্যও এটি দারুণ জায়গা।

আরও পড়ুন: কাশফুল দেখতে ঘুরে আসুন বৃন্দাবনে

দেশ-বিদেশের পর্যটকরা একথাও নির্দ্বিধায় স্বীকার করে থাকেন যে, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পরিপূর্ণ দৃশ্য উপভোগ করার জন্যও টাঙ্গুয়ার হাওর দক্ষিণ এশিয়ার সেরা জায়গাগুলোর একটি।

টাঙ্গুয়ার হাওর সম্পর্কে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো জীববৈচিত্র্যের কারণে এটি একটি রামসার সাইট, একটি সংরক্ষিত জলাভূমি। এখানে অনেকেই যান পাখি গুণতে, পাখির কলকাকলি শুনতে এবং বিভিন্ন গবেষণার কাজে।

তবে স্থানীয় লোকজনের জন্য এটি হলো একটি প্রাকৃতিক মাছের জলাধার। এই এলাকার জলজ উদ্ভিদও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ও দারুণ বিচিত্র প্রজাতির। এখানে শীতকালে যে কেউ উপভোগ করতে পারেন বিভিন্ন বিল, ছোট ছোট দ্বীপ ও নলখাগড়ার স্তুপের সৌন্দর্য।

jagonews24

আরও পড়ুন: কুয়াকাটা ট্যুরে কোন কোন স্পট ঘুরে দেখবেন?

টাঙ্গুয়ায় যারা বার্ড ক্যাম্প করেন তারা সাধারণত তাঁবু সাজান হিজল ও করচ গাছের নিচে। তবে বর্ষাকালে ভিন্ন রূপ ধারণ করে টাঙ্গুয়া, হয়ে যায় সীমাহীন সাগরের মতো এক বিশাল জলাভূমি। নৌকা ভেড়ানোর জায়গাও তখন মেলে না সহজে, গ্রামগুলো হয়ে যায় একেবারে নির্জন দ্বীপের মতো।

আগেই বলা হয়েছে যে, শীতকালে আনুমানিক ৩০ প্রজাতির পরিযায়ী বন্য হাঁস টাঙ্গুয়ার হাওরে অবস্থান করে। আপনি সহজেই স্থানীয় গ্রাম থেকে একটি ডিঙি নৌকা ভাড়া করে হাসের পালের কাছে যেতে পারেন তাদেরকে কোনোরূপ বিরক্ত না করে।

এরপর উপভোগ করতে পারেন চীন, মঙ্গোলিয়া এমনকি সাইবেরিয়া থেকে আসা হাঁসগুলোর অনুপম সৌন্দর্য। একটি পাল বা ঝাঁকের মধ্যে থাকা বন্য হাঁসের সংখ্যা হতে পারে এমনকি এক লাখ পর্যন্ত।

আরও পড়ুন: সাফারি পার্কে কীভাবে যাবেন ও কী কী দেখবেন?

টাঙ্গুয়ার হাওরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শীতকালীন অধিবাসী হলো বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির পাল্লাস’স ফিশ ঈগল। এসব পাখিকে এই জলাভূমির রাজা আখ্যায়িত করা হয়। এরা এখানে জন্মগ্রহণ করে, তারপর শেখে কীভাবে উড়তে ও মাছ শিকার করতে হয়।

jagonews24

আর বর্ষাকাল আসলে উড়ে চলে যায় মঙ্গোলিয়া কিংবা হিমালয়ের দিকে। শীতকালে আবার এখানে ফিরে আসে ও আশ্রয় নেয় আগের তৈরি করা নীড়েই। আকাশে উড়ন্ত অবস্থায় এই ঈগল হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে জাদুকরী প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলোর একটি।

একসময় টাঙ্গুয়ার হাওরে যাওয়া ছিলো দীর্ঘ এক ভ্রমণ। ঢাকা থেকে গোলাবাড়ি গ্রামে পৌঁছতে প্রায় দু’দিন লেগে যেত। তবে সড়ক অবকাঠামোর উন্নতি ও নতুন নতুন ব্রিজ তৈরির পর অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। এখন তো রাজধানী ঢাকা থেকে আধাদিনেই টাঙ্গুয়ায় যাওয়া যায়।

আরও পড়ুন: কুয়াকাটাকে হার মানাবে ছইলার চর

শুধু তা ই নয়, ভাড়া দিয়ে আপনি থাকতে পারেন ‘বজরা’ নামে পরিচিত স্থানীয় কিছু নৌকায়। এর পাশাপাশি শীতকালে থাকতে পারবেন পার্শ্ববর্তী গ্রামের কোনো ঘরে পেইং গেস্ট হিসেবে। আর বর্ষাকালে দেখবেন যে, পর্যটকভর্তি বড় বড় নৌকাসমূহ হাওরের সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে।

কখনো কখনো দেখা যায়, পর্যটকরা বিদায় নেওয়ার পর প্লাস্টিকের বোতল ও খাবারের অপচনশীল প্যাকেটসমূহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে যা খুব দুঃখজনক। সবারই মনে রাখা উচিত যে, টাঙ্গুয়ার হাওর একটি সংবেদনশীল ন্যাচারাল সাইট।

তাই জায়গাটি ভ্রমণের সময় পরিবেশবান্ধব পর্যটনের কথা মাথায় রাখুন যাতে এটির নৈসর্গিক সৌন্দর্য ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য টিকে থাকে। এর পাশাপাশি পাখি ধরা কিংবা চুরি করাকে অবৈধ ঘোষণা করা উচিত ও কড়া নজরদারির ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।

আরও পড়ুন: খাগড়াছড়ি ভ্রমণে ঘুরে আসুন ‘মানিকছড়ি ডিসি পার্কে’

jagonews24

কীভাবে যাবেন টাঙ্গুয়ার হাওরে?

ঢাকা থেকে বাসে চড়ে সরাসরি সুনামগঞ্জে চলে যেতে পারবেন। এরপর একটি ভাড়া করা বাহন জোগাড় করে তাহিরপুর এমনকি সোলেমানপুর চলে যান।

এরপর যোগাড় করুন গোলাবাড়ি অথবা অন্যান্য গ্রামে যাওয়ার জন্য একটি নৌকা। আপনি যদি তাহিরপুরের বিখ্যাত শিমুল বাগান ঘুরে দেখতে চান তাহলে আপনার গন্তব্য একটু ভিন্ন হবে ও ভ্রমণ পরিকল্পনাও সেভাবেই করতে হবে।

আরও পড়ুন: কম খরচে কীভাবে ঘুরবেন পান্থুমাই জলপ্রপাতে?

কোথায় থাকবেন?

বর্ষাকালে বজরা কিংবা ভাসমান বাহনের জন্য বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য ট্যুর কোম্পানি পাওয়া যায় যাদের মাধ্যমে টাঙ্গুয়ায় ঘুরে বেড়াতে পারবেন। বজরা অথবা অন্য কোনো হাউসবোটে রাতে নিরাপদেই থাকতে পারবেন।

তবে সুযোগ আছে পার্শ্ববর্তী গ্রামের কোনো ঘরে পেইং গেস্ট হিসেবে থাকারও। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বেড়াতে গেলে খরচ একটু কম পড়বে।

তবে দক্ষ ও অভিজ্ঞ ট্যুর অপারেটরের সহযোগিতা নিলে কিছুটা বাড়তি খরচ হলেও ভ্রমণ হবে তুলনামূলক বেশি নির্ঝঞ্জাট আর সেইসাথে ভালো গাইডের সেবাও পাবেন।

লেখক: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও ফিচার লেখক।

জেএমএস/এমএস

আরও পড়ুন