একদিনেই কীভাবে ঘুরে আসবেন মহামায়া লেক থেকে?
বাংলাদেশের যে কোনো স্থান থেকে একদিনেই ঘুরে আসতে পারেন দেশের দ্বিতীয়ত বৃহত্তম কৃত্রিম হৃদ চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার মহামায়ায়। এখানে ১১ বর্গ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের লেক পাশাপাশি আছে ছোট-বড় অংসখ্য লেক। আছে পাহাড়ি প্রাকৃতিক ঝরনা।
চারদিকে সবুজের সমরোহ। বোটে করে লতাপাতায় ঘেরা দু’টি পাহাড়ের মধ্যবর্তী সুড়ঙ্গপথের প্রকৃতির শোভা দেখার সুযোগ যা কোনো পর্যটকই হাতছাড়া করতে চাইবেন না। আছে রাতে ক্যাম্পিং করে থাকার সুযোগ।
আরও পড়ুন: হাউজবোটে টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে কীভাবে যাবেন, খরচ কত?
আছে রোদ ওঠা অতুলনীয় সুন্দর একটি সকাল প্রকৃতির সঙ্গে, পাখপাখালির কিচিরমিচির, পাতাদের ঝুমঝুমির মধ্যে কাটানোর সুযোগ। আছে এই বিস্তীর্ণ লেকের পাশে বসে রাতে গান-আড্ডা শেষে বারবিকিউ খাওয়ারও সুযোগ। আরও আছে সুউচ্চ পাহাড়ের কোলে বসে প্রকৃতির অপার মুগ্ধতা দেখার সুযোগ।
প্রাণের টানে ছুটে আসা পথ যেন ক্রমশই বন্ধুর হতে চাইবে মনের কোণে জাগা মৃদু উত্তেজনায়। দূর থেকে দেখা যায় প্রায় পাহাড়সম বাঁধ। উভয়পাশে শুধু পাহাড় আর পাহাড়। বাঁধের ধারে অপেক্ষমান সারি সারি ডিঙি নৌকা আর ইঞ্জিনচালিত বোট।
১১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের লেক কেবল শোভা ছড়ায়। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে স্বচ্ছ পানিতে তাকাতেই দেখা যায় নীলাকাশ। পূর্ব-দিগন্তের সারি পাহাড়ের বুক চিরে যেতে যেতে একসময় হারিয়ে যেতেও মন চাইবে কল্পনায়। সঙ্গীকে পাশে নিয়ে গেলে তো কথাই নেই।
আরও পড়ুন: সন্ধ্যা থেকে জমতে শুরু করে ব্যাংককের ‘নাইট মার্কেট’
কিছুদূরেই দেখা যাবে পাহাড়ের কান্না। অঝোরে কাঁদছে। অথচ তার কান্না দেখে নিজের কাঁদতে ইচ্ছে হবে না। উপরন্তু কান্নার জলে গা ভাসাতে মন চাইবে। তারও পূর্বে যেখানে লেকের শেষ প্রান্ত, সেখানেও বইছে ঝরনাধারা।
কি নীল, কি সবুজ, সব রঙের ছড়াছড়ি যেন ঢেলে দেওয়া হয়েছে মহামায়ার প্রকৃতিতে। এর সঙ্গে মিশতে গিয়ে মন এতটাই বদলে যাবে, যেন মন বারবার ঘুরে আসতে চাইবে ফেলে আসা স্মৃতিতে।
জানা গেছে, দ্বিতীয় সেচ ক্ষুদ্রাকার প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২৩ কোটি টাকা ব্যয় নির্মিত এ প্রকল্প ২০১০ সালের ২৯ ডিসেম্বর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি শুধু পর্যটন স্পট নয়, এই লেকে সংরক্ষণ করা পানি দিয়ে চাষাবাদ করা হয় মিরসরাই উপজেলার কয়েকহাজার একর জমি।
আরও পড়ুন: ইলিশ খেতে মাওয়া ঘাটে কীভাবে যাবেন, খরচ কত?
দেশের যে কোনো স্থান থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঠাকুরদীঘি এলাকায় নামতে হবে। নেমেই দেখবেন স্পটের নাম লেখা সাইনবোর্ড। তো সিএনজি নিয়ে স্পটের একদম গেট পর্যন্ত চলে যেতে পারেন অথবা আপনি যদি হাঁটতে পছন্দ করেন তাহলে ১০ মিনিট হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন স্পটের গেটে।
গেটে যাওয়ার আগে আপনি পেয়ে যাবেন রেলপথ। আপনার ভাগ্য ভালো হলে রেল আসার সুন্দর দৃশ্যও দেখতে পাবেন। এরপর রেলপথ পেরিয়ে গেটে এলে একটি টিকিট কাউন্টার দেখতে পাবেন। সেখান থেকে টিকিট নিতে হবে ভেতরে প্রবেশ করার জন্য।
প্রতিটি টিকিটের মূল্য ৩০ টাকা। এরপর গেটে থাকা অন্য একজন লোকের কাছে টিকিটটি জমা দিয়েই আপনি প্রবেশ করতে পারবেন আপনার বহুল কাঙ্খিত এই অপরূপ সুন্দর পর্যটনকেন্দ্রে। প্রবেশ করার পর খানিকটা হাঁটতে হবে আপনাকে।
আরও পড়ুন: ঢাকার কাছেই ঘুরে আসুন গোলাপের রাজ্যে
সে সময় রাস্তার দু’পাশে আপনাকে স্বাগত জানাবে ঝাউগাছের সারি, অভিবাদন জানাবে হরেক রকমের ফুলের দল। হাঁটা শেষ এখন আপনি পৌঁছে গেলেন লেকের সামনে। চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিন।
আপনার বামে পাহাড়, ডানে পাহাড় কিছুটা দূরে সামনে বিশাল লেক, লেকে সারি সারি নৌকা, বোট, কায়াকিং বোট সাজানো দেখতে পাবেন। এবার আপনার পছন্দ আপনি কীসে করে ঘুরবেন! নৌকায়? বোটে? নাকি দু’তিনজন মিলে কায়াকিং করে তা ঠিক করে ঘুরে দেখুন লেকের সৌন্দর্য!
চাইলে মহামায়াতে ক্যাম্পিংও করতে পারবেন তবে সে জন্য আপনাকে ২-৩ দিন আগে ক্যাম্পিং করার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে কনফার্ম করতে হবে। সব মিলিয়ে আপনি যদি মহামায়া লেকে ঘুরতে আসেন তাহলে জিতে যাবেন।
আরও পড়ুন: নিকলী হাওর ভ্রমণে কীভাবে যাবেন ও কী কী দেখবেন?
মহামায়া লেক প্রায় সারা বছরই পর্যটকদের পদচারণায় মুখর থাকে। বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষা সফর, পুনর্মিলনী, ঈদ ট্যুর ইত্যাদি এখানে সারা বছরই চলে। সব বয়সী মানুষের বিচরণ দেখা যায় এই পর্যটন স্পটে।
আপনিও আসতে পারেন, দেখে যেতে পারেন মহামায়া লেক আর আপনি যদি একবার ঘুরে যান তাহলে সত্যিই মহামায়া লেকের মায়ায় পড়ে যাবেন।
প্রকল্পটি ইজারা দিয়েছে চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগ। চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে মহামায়া প্রকল্প ১ কোটি ৭০ লাখ টাকায় ইজারা দেয় বনবিভাগ। ইজারা পায় এ.আর এন্টারপ্রাইজ।
জেএমএস/জিকেএস