পুরান ঢাকার বিখ্যাত ঘোড়ার গাড়ির বেহাল দশা
নানা ইতিহাস, ঐতিহ্য ও বাহারি খাবারের জন্য বিখ্যাত পুরান ঢাকা। পুরান ঢাকার বিখ্যাত একটি বাহন ঘোড়ার গাড়ি বা টমটম। রূপকথাতেও আছে এই ঘোড়ার গাড়ির নাম। রাজা-বাদশা, জমিদারদের আভিজাত্য প্রকাশ করার মাধ্যম ছিল ঘোড়ার গাড়ি।
সেই আভিজাত্য মুছে গেছে অনেক আগেই। এখন লড়াই অস্তিত্বের। রাজধানীর কয়েকটি স্থানে যাত্রী টেনে কোনো রকমে টিকে আছে ঐতিহ্যবাহী এই বাহন। এক সময় পুরান ঢাকার পরিচয় ছিল ঘোড়ার গাড়ির শহর হিসেবে।
আরও পড়ুন: ঢাকার কাছেই ঘুরে আসুন বাঁশ-কাঠের তৈরি ‘রূপগাঁও রিসোর্টে’
তখন এই এলাকায় প্রায় ৪০০ ঘোড়ার গাড়ি চললেও, বর্তমানে চলছে হাতে গোনা কয়েকটি। ঘোড়ার সংখ্যাও কমে এসেছে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বর্তমানে তেমন কেউ যাতায়াত করেন না ঘোড়ার গাড়িতে।
পদ্মা সেতু চালুর পর এর প্রভাব আরও বেড়েছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় যাত্রী হারিয়েছে লঞ্চগুলো। তাই সদরঘাট যাওয়ার জন্য আগের মতো যাত্রী পাচ্ছে না ঘোড়ার গাড়িগুলো। এতে করে ব্যবসা অনেকটাই বন্ধের পথে। আগের মতো রোজগার নেই কোচোয়ানদের। অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন।
তারপরও গুলিস্তান থেকে সদরঘাট রুটে কয়েকটি ঘোড়ার গাড়ি চলাচল করে। ভাড়া ৩০ টাকা। তবে বাস ভাড়া ১০ টাকা। বলা যায় শখের বসে ছাড়া খুব কম মানুষই ঘোড়ার গাড়িতে যাতায়াত করেন।
আরও পড়ুন: চা বাগানসহ শ্রীমঙ্গল ভ্রমণে আরও যা দেখবেন
প্রতিদিন ঘোড়াগুলোর জন্য ঘাস, ক্ষুদ, কুড়া, গমের ব্যবস্থা করতে হয়। রাজধানীতে ঘাস সংগ্রহ করা খুব কঠিন। চড়া মূল্যে কিনতে হয়। এক বস্তা ঘাসের দাম বাড়তে বাড়তে আজ তা কয়েক গুণ। ভুষির দামও বেড়েছে। ফলে ঘোড়ার পেছনে মাসিক খরচ বেড়েছে। সঙ্গে বেড়েছে ঘোড়ার চিকিৎসা ব্যয়।
ঘোড়া ও গাড়িগুলো বর্তমানে রাখা হয় বঙ্গবাজার মার্কেটের পাশে। সেখানে গেলে দেখা যায় ঘোড়াগুলোর বেহাল দশা। যত্ন, পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে ঘোড়াগুলো কোনোরকমে বেঁচে আছে। এক সময় ঘোড়ার গাড়ি সাজিয়ে রাস্তায় নামানো হতো এখন তাও দেখা যায় না।
অনেকটা পেটের দায়েই এই পেশায় জড়িত আছেন অনেকে। তবে এখনো দু’একটি গাড়ি ব্যাতিক্রম দেখা যায়। এসব গাড়িতে আছে এলইডি লাইট, সিসি ক্যামেরা, আরামদায়ক চেয়ার এমনকি আছে মিউজক সিস্টেমও। মূলত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য এসব গাড়ির ডাক পড়ে।
আরও পড়ুন: সঙ্গীকে নিয়ে ঘুরে আসুন ভারতের ‘ছোট্ট স্কটল্যান্ডে’
ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, সর্বপ্রথম ১৮৫৬ সালের অক্টোবর মাসে এক আমেরিকান ঘোড়ার গাড়ি আমদানি করেন। ১০ বছরের মধ্যে গাড়ির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬০টি। ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় আসে পরিবর্তন। এই ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় আর্মেনিয়ান ও স্থানীয়রা জড়িয়ে পড়ে এই পেশায়।
ইতিহাস বলছে, ১৮৯০ সালেও ৬০০ ঘোড়ার গাড়ি চলতো ঢাকায়। এদের তিনটি ধরন ছিল। সাধারণ ঘোড়ার গাড়ি ভাড়ায় খাটতো, এক্কাগাড়ি নামের গাড়িতে চড়তেন চিকিৎসক, জমিদার ও ধনী ব্যক্তিরা। জুড়িগাড়ি নামে আরো এক ধরনের গাড়ি দেখা যেত সেগুলো পরিবারের চলাচলের জন্য।
অনেকের দাদা এই ব্যবসা করতেন, এরপর বাবা করছেন, তাই বংশানুক্রমে তারাও এই পেশায় নিয়োজিত। তবে আগের মতো জৌলুস এখন নেই। অনেকেই চাচ্ছেন ঐতিহ্য ধরে রাখতে। দেশ আধুনিক হচ্ছে, তারাও চেষ্টা করছেন ঘোড়ার গাড়িতে নতুনত্ব আনার। তাতেও লাভ হচ্ছে না কোচোয়ানদের। ফলাফল বিলুপ্তির পথে ঘোড়ার গাড়ি।
লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী
জেএমএস/জিকেএস