ঘুরে আসুন নির্মলেন্দু গুণের কবিতাকুঞ্জ
কয়েক সপ্তাহ আগে হাওর-বাওড়ের জেলা নেত্রকোনায় গিয়েছিলাম। নেত্রকোনা একটি পর্যটনসমৃদ্ধ এলাকা। প্রত্যেকটা জায়গা দেখার মতো, মনোমুগ্ধকর।
নেত্রকোনা থেকে ঢাকায় ফেরার দিন এক ভাই জিজ্ঞাসা করলেন, ‘নেত্রকোনার সবই তো ঘুরে দেখেছো, নির্মলেন্দু গুণের কবিতাকুঞ্জে কি গিয়েছো?
আমি তো শুনেই অবাক! গুণ দাদুর কবিতাকুঞ্জ এখানে! আমি গুণ দাদুর কবিতাকুঞ্জ সম্পর্কে আগেই জেনেছি। তবে তা যে নেত্রকোনায় তা মনে ছিল না তখন।
আমি রাতযাপন করেছিলাম নেত্রকোনা সার্কিট হাউজে। ঢাকায় ফেরার গাড়ি ছিল দুপুর ১২টায়। তবে এত কাছে এসে কবিতাকুঞ্জে যাবো না, তা তো হবে না। তাই গাড়ির আশা বাদ দিয়ে চলে গেলাম কবিতাকুঞ্জে।
সার্কিট হাউজ থেকে বের হয়ে রিকশাওয়ালাকে বললাম, ‘মালনী আমতলা কবিতাকুঞ্জে যাবেন?’ বলার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি চিনলেন। ভাড়া জানালেন, ১৫-২০ মিনিটের পথ ৪০ টাকা দিয়েন। আমি আর কথা না বাড়িয়ে উঠে পড়লাম রিকশায়।
সরু পাকা রাস্তা ধরে ১৫ মিনিটে চলে গেলাম মালনী আমতলা বাজার। রিকশাওয়ালা দেখিয়ে দিলেন কবিতাকুঞ্জ। দেখতে পেলাম নদীর একেবারেই উপকণ্ঠে কবিতাকুঞ্জ। নদীর নাম মগড়া। নদীর তীর ধরে চিকন পাকা রাস্তা। মিনিট দুই হেঁটেই পৌঁছে গেলাম কবিতাকুঞ্জে।
ঘিয়ে রঙের বাউন্ডারির ভেতরে সাদা রঙের একটি স্থাপনা। তাতে লেখা ‘কবিতাকুঞ্জ’। প্রতিষ্ঠাতা নির্মলেন্দু গুণ। আমি বাউন্ডারির ভেতরে ঢুকলাম।
ঢুকেই দেখি এক মেয়ে মেঝে ধোয়া-মোছার কাজ করছেন। ফ্লোর মোছার পর জুতা খুলে প্রবেশ করলাম ঘরে। আমি প্রবেশের পরপরই কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রবেশ করলেন।
ঘরে ঢুকেই দেখলাম বইয়ের বিশাল ভান্ডার। অনেক বিখ্যাত মানুষের ছবি। ছবি দেখে বেশ কয়েকজনকে চিনলাম। বাকিদের চিনলাম না।
কবিতাকুঞ্জ মূলত একটি কবিতাগৃহ। ‘বিশ্ব কবিতার বাসগৃহ’ স্লোগানে কবি নির্মলেন্দু গুণ ২০১৬ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। কবিতাগৃহে ৯০টি দেশের কালজয়ী কবিদের রচিত প্রায় ২ হাজারেরও বেশি কাব্যগ্রন্থ আছে।
এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার প্রায় ৭০ জন বিখ্যাত কবির ফ্রেমে বাঁধাই করা ছবি আছে। আছে নির্মলেন্দু গুণের ছবি, কবিতার বই, সম্মাননা ক্রেস্টসহ নানা স্মৃতি।
কবিতাকুঞ্জে ঘুরতে আসা এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘কবিতা আমার খুব প্রিয়, আমি মাঝে মাঝেই এ জায়গায় আসি, কবিতার বই পড়ি। এখানে এলেই মন ভালো হয়ে যায়।’
কবিতাকুঞ্জের গ্রন্থাগারিক বলেন, ‘প্রতিদিনই এখানে প্রায় ৪০-৫০ জন লোক আসে ঘুরতে। তবে বিশেষ বিশেষ দিনে তা দেড় থেকে দুই হাজার ছাড়িয়ে যায়।’
কবিতাকুঞ্জের পাশেই একটি ঘাট, নাম কুঞ্জ ঘাট। ঘাটে বসে কয়েক জনকে দেখলাম আপন মনে বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে। কবিতাকুঞ্জের ঠিক পেছনে আছে দুটি অতিথিশালা। যেখানে রাতযাপন করতে পারবেন অতিথিরা।
তবে আগে থেকেই এ বিষয়ে যোগাযোগ করতে হবে বলে জানান কর্তৃপক্ষ। কবিতাকুঞ্জ ঘুরে চলে এলাম সার্কিট হাউজে। সেখান থেকে রাতের মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে ফিরলাম ঢাকায়।
ঢাকা থেকে নেত্রকোনা যেভাবে যাবেন
মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বিআরটিসি, এনা ও হযরত শাহজালাল বাস কোম্পানির বাসগুলো প্রায় সারাদিনই নেত্রকোনায় চলাচল করে। বাসের টিকিট ৩৫০ টাকা।
এ ছাড়া ট্রেনে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন অথবা বিমানবন্দর স্টেশন থেকে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ও হাওর এক্সপ্রেসে নেত্রকোনা যাওয়া যায়।
শোভন চেয়ারের টিকিটমূল্য ১৯৫ টাকা ও এসি ৩৭৪ টাকা। এরপর নেত্রকোনা সদর থেকে ৪০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে সরাসরি কবিতাকুঞ্জে।
কোথায় থাকবেন?
কবিতাকুঞ্জের অতিথিশালায়ে থাকার পাশাপাশি নেত্রকোনা সদরেও থাকার জন্য মধ্যম মানের বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি রেস্ট হাউজ আছে। মাত্র ১-২ হাজার টাকায় এগুলোয় থাকা যায়।
জেএমএস/এসইউজিকেএস