প্রকৃতিকে কাছে পেতে সুরঞ্জনায় একদিন
ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ঘুরতে যেতে বিশেষ কোনো দিনের দরকার হয় না। সময় পেলেই বের হয়ে যাওয়া যায়। আর সেই ঘুরতে যাওয়ার জায়গাটি যদি হয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর তবে তো কথাই নেই।
ঢাকায় বসবাস করা মানুষগুলো রমনা পার্ক আর বোটানিক্যাল গার্ডেনে ঘুরতে ঘুরতে অনেকটা ক্লান্ত হয়ে গেছেন। তার খুঁজছেন নতুন কোনো ভ্রমণ গন্তব্য। যেটি হবে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিয়ে ঘেরা। থাকবে পাখির ডাক, শীতল বাতাস। থাকবে না কোনো কোলাহল।
তাদের জন্য ‘সুরঞ্জনা’ হতে পারে শান্তির নীড়। বলছিলাম সম্প্রতি তৈরি হওয়া বরগুনার ‘সুরঞ্জনা’ ইকোপার্কের কথা। সবুজে ঘেরা পার্কটি পর্যটকদের জন্য শান্তির নীড় হতে পারে। পার্কটির ভেতরে আঁকাবাঁকা কাঠের সড়ক দিয়ে চলে যেতে পারবেন গহীন বনে।
কিছু সময়ের জন্য মনে হতেই পারে আপনি সুন্দরবনে আছেন। কেননা এখানে সুন্দরবনের মতোই বাঘ হরিণ রয়েছে। তবে তা আসল নয়, কুমারের নিপুণ হাতে বানানো বাঘ বা হরিণ। তবে অনুভূতিটা ঠিক সুন্দরবনেরই পাবেন। পার্কটিতে পা রাখতেই কানে ভেসে আসবে চেনা-অচেনা পাখির ডাক। যেন তাদের ভাষায় স্বাগত জানাচ্ছে আপনাকে।
চলুন জেনে নিই সুরঞ্জনার ইতিহাস ও অবস্থান সম্পর্কে—
ইতিহাস ও অবস্থান
ঐতিহ্যবাহী জেলা বরগুনা। এই জেলায় সুরঞ্জনার অবস্থান। সদর হয়ে ঢলুয়া ইউনিয়নের বরইতলা নামক স্থানের বিষখালী ও খাকদোন নদীর মোহনায় ‘সুরঞ্জনা’ নামের ইকোপার্কটি গড়ে উঠেছে। ‘জঙ্গলে মঙ্গল’ স্লোগানকে সামনে রেখে ২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু। তবে নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি।
পার্কটির প্রতিষ্ঠাতা বরগুনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও একটি বেসরকারি টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি সোহেল হাফিজ। তার হাত ধরে গড়ে ওঠা সুরঞ্জনা ইকো ট্যুরিজম অ্যান্ড রিসোর্ট এখন পরিপূর্ণ থাকে পর্যটকে। শীতল বাতাসে গা ভাসিয়ে প্রকৃতিকে উপভোগ করতেই প্রতিদিন ছুটে আসেন তারা।
যেভাবে যাবেন
রাজধানী থেকে সড়কপথে সরাসরি বরগুনা আসতে পারবেন। তবে আপনি ইচ্ছে করলে লঞ্চ যাত্রাকেও যুক্ত করতে পারবেন এ ভ্রমণে। ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে সরাসরি বরগুনা আসতে পারবেন। সেখানে থেকে মোটরসাইকেল বা আটোরিকশা নিয়ে পৌঁছে যাবেন সুরঞ্জনায়। এরপর চারপাশের সবুজের সমারোহ দেখতে দেখতে এবং সাপের মতো লম্বা কাঠের সড়ক ধরে যেতে পারবেন গহীন থেকে আরও গহীনে।
থাকা-খাওয়া
পার্কটি নতুন গড়ে ওঠায় এর আশেপাশে থাকার মতো ব্যবস্থা নেই। কাজ চলমান থাকায় ভ্রমণপিপাসুদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করার সুযোগ তৈরি হয়নি। তবে বরগুনা সদরে থাকার মতো অনেক আবাসিক হোটেল এবং ডাকবাংলো আছে। হয়তো আপনার চাহিদামতো বিলাসবহুল কোনো হোটেল পাবেন না। তবে খাবারের ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আশেপাশে খাবারের পর্যাপ্ত হোটেল আছে। পাবেন রুচিসম্মত খাবারও।
যা দেখবেন
সব মিলিয়ে সময়টা আপনার তেমনই কাটবে; ঠিক যতটুকু আপনি প্রকৃতিকে উপভোগ করতে পারবেন। প্রকৃতির সঙ্গে মিশতে পারলে প্রতিটা সময় আপনার জন্য দারুণ হবে। চারপাশের নিরিবিলি পরিবেশ দেবে ভিন্নরকম ভালো লাগা। হাঁটতে হাঁটতে চলে যেতে পারবেন গহীন থেকে গহীনে। যতই ভেতরে যাবেন; ততই প্রকৃতিকে কাছ থেকে দেখতে পাবেন। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে গেলে বসার জন্য ব্যবস্থা আছে। শীতল বাতাসে জুড়িয়ে যাবে আপনার সব ক্লান্তি।
প্রকৃতিকে উপভোগ করতে করতে ফুরিয়ে যাবে সময়। ফিরতে হবে এখান থেকে। ফেরার পথে আবারও শুনতে পাবেন পাখিদের কিচিরমিচির। তারা যেন বলতে চাইছে, আজকের মতো না হয় এখানেই বিদায়। তবে আবারও ফিরে আসবেন, আমরা থাকবো অপেক্ষায়।
লেখক: ফ্রিল্যান্স ফিচার রাইটার।
এসইউ/জিকেএস