ট্যুরিস্ট বাসে হাজার টাকায় পদ্মা সেতু ভ্রমণের সুযোগ
দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের যোগাযোগব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে চলেছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এই সেতুর কারণে দেশের অর্থনৈতিক গতিধারাও ঈর্ষণীয়ভাবে ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে বলে আভাস মিলছে। পদ্মা সেতু হতে চলেছে ভ্রমণপ্রেমীদের অন্যতম আকর্ষণ। দেশের পর্যটনের গতিধারাও বদলে দিতে পারে এই সেতু। ট্রাভেল এজেন্সিগুলোও তাই বসে নেই। উদ্বোধনের মাসখানেক আগে থেকেই সেতু ভ্রমণ কেন্দ্র করে ঘোষণা করেছে বিভিন্ন প্যাকেজ।
পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরুর আগেই মাওয়া ঘাটে নিয়মিত যাতায়াত ছিল ভ্রমণপ্রিয় মানুষদের। সেতুর পাশাপাশি ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকায় দিন দিন ভিড় বাড়ছে মানুষের। সরকারের ঘোষণা অনুসারে, আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতুতে যানচলাচল উন্মুক্ত হলে দেশের দীর্ঘতম এই সেতু দেখতে মানুষের ভিড় নামবে।
ভ্রমণে আগ্রহীদের বিষয়টি মাথায় রেখে এরই মধ্যে কিছু ট্রাভেল গ্রুপ ও কোম্পানি প্যাকেজও ঘোষণা করেছে। দিনব্যাপী এসব প্যাকেজের আওতায় পদ্মা সেতু ভ্রমণের পাশাপাশি থাকছে কাছের অন্যান্য পর্যটন স্পট ঘোরার সুযোগ। প্যাকেজে থাকছে সকালের নাস্তা, পদ্মার তাজা ইলিশসহ বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু তরকারি, ভর্তা দিয়ে মধ্যাহ্নভোজ এবং বিকেলে বিক্রমপুরের মিষ্টিসহ বিভিন্ন খাবার।
পদ্মা সেতু ভ্রমণের এমনই দিনব্যাপী প্যাকেজ আছে ট্রাভেল সোর্স বিডি লিমিটেড নামে একটি এজেন্সির। ওই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৩২ ব্যাচের শিক্ষার্থী সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, প্যাকেজের আওতায় ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ভ্রমণপিপাসুদের নিয়ে মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতু ঘুরিয়ে আনা হবে। তারা ফরিদপুরের ভাঙ্গার নৈসর্গিক দৃশ্য দেখতে পাবেন, কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের পিকনিক স্পটেও যেতে পারবেন।
এ ভ্রমণে জনপ্রতি খরচ হবে এক হাজার টাকা। পরিবারসহ বুকিং দিলে থাকছে আকর্ষণীয় ছাড়। খাবারের তালিকায় সকালের নাস্তা হিসেবে থাকবে ডিম, পরোটা, সবজি, পানি ও চা। দুপুরের খাবারে থাকবে পেঁয়াজভর্তা, ডালভর্তা, বেগুনভাজা, টাটকা ইলিশভাজা ও ডাল। বিকেলের নাস্তায় থাকবে বিক্রমপুরের মিষ্টি, সমুচা, ডালপুরি ও চা।
জানা যায়, পদ্মা সেতু ঘিরে শরীয়তপুর, ফরিদপুর, মাদারীপুরের দুই পাড়ের সংযোগ সড়কের উভয় পাশেই পর্যটদের জন্য নির্মাণ হচ্ছে বিনোদনকেন্দ্র, চা-কফির দোকান, খাবার হোটেল ও কনফেকশনারি। পদ্মা সেতু উন্মুক্ত হওয়ার পর ওই এলাকা পর্যটনের অন্যতম বড় একটি কেন্দ্র হয়ে উঠবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আগামী ২৫ জুন সকাল ১০টায় বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন বেলা ১১টায় কাঁঠালবাড়ি প্রান্তে সমাবেশ করবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়াও দিনব্যাপী সেখানে নানান আয়োজন থাকবে।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন আওয়ামী লীগের এ সমাবেশে ১০ লাখের বেশি মানুষের সমাগম ঘটবে বলে প্রত্যাশা করছে ক্ষমতাসীন দলটি।
এরই মধ্যে পদ্মা সেতু দিয়ে পারাপারের জন্য অনুমোদিত যানবাহনের টোল নির্ধারণ করেছে সরকার। পদ্মা সেতু পারাপারে মোটরসাইকেলে ১০০ টাকা, কার ও জিপে ৭৫০ টাকা, পিকআপে এক হাজার ২০০ টাকা, মাইক্রোবাসে এক হাজার ৩০০ টাকা টোল পরিশোধ করতে হবে। বাসের ক্ষেত্রে ছোট বাস (৩১ আসন) এক হাজার ৪০০ টাকা, মাঝারি বাস (৩২ আসন বা এর বেশি) দুই হাজার টাকা, বড় বাসকে (থ্রি-এক্সেল) দুই হাজার ৪০০ টাকা টোল দিতে হবে।
এছাড়া ছোট ট্রাককে (পাঁচ টন পর্যন্ত) এক হাজার ৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে (পাঁচ টনের বেশি ও সর্বোচ্চ আট টন পর্যন্ত) দুই হাজার ১০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (আট টনের বেশি ও সর্বোচ্চ ১১ টন) দুই হাজার ৮০০ টাকা, ট্রাকে (থ্রি-এক্সেল পর্যন্ত) পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা, ট্রেইলার (ফোর-এক্সেল পর্যন্ত) ছয় হাজার টাকা। ট্রেইলার (ফোর-এক্সেলের অধিক) ছয় হাজারের সঙ্গে প্রতি এক্সেলের জন্য এক হাজার ৫০০ টাকা যুক্ত হবে।
এইচএআর/ইএ/এএসএ/জেআইএম