দেশের একমাত্র নীল পানির দ্বীপে একদিন
ইসতিয়াক আহমেদ
বাংলাদেশের নীল পানির একমাত্র দ্বীপ সেন্টমার্টিন এর পথে আমরা। বাস ছিল রাত সাড়ে ৮টায়। তবে প্রচণ্ড জ্যামের কারণে অনেকেই সময় মতো না আসতে পারায় বাস যখন যাত্রা শুরু করলো তখন রাত ৯টা প্রায়।
পথে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি কাটিয়ে আমরা ছুটলাম টেকনাফের পথে। টেকনাফ যখন পৌঁছালাম, তখন সকাল ৭টা। হাতে এখনো অনেকটাই সময়। তাই ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা করার জন্য বসে পরলাম বিজিবি কর্তৃক চালু হওয়া সীমান্ত রেস্তোরাঁয়।
তুলনামূলক সুন্দর পরিবেশ। পরিচ্ছন্ন ওয়াশরুম। যদিও খাবারের অপশন নিতান্তই হাতে গোনা। তবে যা-ই বা আছে তাই বা কম কি? খাওয়া শেষ করেই ছুটলাম ফেরি ঘাটে আমাদের শিপ এমভি পারিজাত।
মনে রাখবেন ঘাটে গিয়েই, প্রথমে নিতে হবে টোলের টোকেন। যা দেওয়া শুরুই হয় সকাল ৮টায়। তা নিয়ে দ্রুত উঠে পড়তে হবে জাহাজে। ফেরি ঘাটের কথা যখন বলছি, তখন আরেকটি বিষয় বলি।
ফেরার দিন এই ফেরি ঘাটেই পুষ্টি দুধ নামক কিছু একটা বিক্রির চেষ্টা করেন কিছু বিক্রেতা। যা ভুলেও কিনবেন না। কারণ সেগুলোতে দুধ নয় বরং থাকে সয়াবিন।
এরপর উঠে পরলাম জাহাজে। ঘড়ির কাটা ধরেই মূলত জাহাজ ছাড়লো। এবার পালা গাঙচিলকে সঙ্গে নিয়ে এই বাংলার রূপ গিলতে গিলতে ছুটে চলার। সেন্টমার্টিন যাওয়ার বেশিরভাগ জাহাজই টেকনাফ থেকে ছেড়ে যায়।
তাই সেন্টমার্টিন যেতে চাইলে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ চলে যাওয়া সুবিধাজনক। টেকনাফ থেকে জাহাজে অথবা ট্রলারে করে সেন্টমার্টিন যাওয়া যায়।
টেকনাফ ছাড়াও কক্সবাজার থেকে এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস জাহাজে সরাসরি সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকেও সেন্টমার্টিন সরাসরি যাওয়া যায় এমভি বে ওয়ান জাহাজে।
এই টেকনাফ হতে সেন্টমার্টিনের দুরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘন্টা সময় লাগে সাগর পারি দিতে। নাফ নদী পেরিয়ে একসময় জাহাজ গিয়ে পরবে নীল পানির সাগরে।
আর পুরোটা পথ আপনাকে সঙ্গ দেবে শত শত গাঙচিল। বাংলার এই রুপ দেখতে দেখতেই এক সময় পৌঁছে যাবেন সেই কাঙ্খিত দারুচিনির দ্বীপ খ্যাত বিখ্যাত সেন্টমার্টিনে।
সময় এখন বদলেছে, বদলে গেছে সেন্টমার্টিনও। আর তা সেন্টমার্টিনে পা ফেলেই অনুভব করতে পারবেন। তথাকথিত আধুনিকায়নের নামে যান্ত্রিকতার ছোঁয়া। মুছে ফেলেছে অসাধারণ দ্বীপটির স্বকীয়তা। সেন্টমার্টিন এসেই প্রথম কাজ দুপুরের খাবার ভেয়ে বেড়িয়ে পড়া।
তবে হ্যাঁ প্রথমেই একটি সতর্কবার্তা। সবাই এসেই ছুটে যায় উত্তরের বিচের পানিতে। কারণ গোসলের জন্য সবচেয়ে সুন্দর বিচ যে এটিই। তবে এই বিচের একটি অংশ সবচেয়ে বিপজ্জনক।
ভয়ংকর রিপ কারেন্ট যে অংশটিকে করেছে অনিরাপদ। তাই লাল পতাকা টাঙ্গানো অংশে ভুল করেও নামতে যাবেন না। কারণ রিপ কারেন্ট এর পাল্লায় পড়লে ভেসে যাবেন মাঝ সাগরে।
সেন্টমার্টিনের বিকেল এক স্বর্গীয় অনুভুতি এনে দেয়। কিছুক্ষণ সাইকেলিং করে, আড্ডা দিয়ে, গোলা আইসক্রিম ও কচি ডাব খেতে খেতে কখন যে দিনের আলো নিভে আসবে টেরই পাবেন না। অতঃপর স্বপ্নের মত আরেকটি দিনের সমাপ্তি এই সেন্টমার্টিনে।
সেন্টমার্টিনের রাত কাটাতে পারেন বীচে বসে থেকে কিংবা শপিং করে। একই সঙ্গে রাতের খাবারে মাছের বার-বি-কিউ ও সাগরের মাছ ভাজা খেতে ভুলবেন না।
সেন্টমার্টিন থেকে যদি যেতে চান ছেড়াদ্বীপে, তবে বাই সাইকেল ও মোটরসাইকেলের কষ্টকর জার্নি ছাড়া যেতে চাইলে দিতে হবে সাগর পাড়ি। আর সাগর পারি দেওয়া যায় তিনভাবে। তুলনামূলক সস্তা উপায় হলো ট্রলার, যার যাওয়া আসার ভাড়া জন প্রতি ১৫০ টাকা।
ট্রলারের তুলনায় তুলনামূলক দ্রুত ও নিরাপদ উপায় হলো লাইফবোটে যাওয়া। আর দ্রুত গতিতে, অ্যাডভেঞ্চারময় যাত্রায় জন্য আছে স্প্রিড বোট।
আমরা মূলত গিয়েছি লাইফবোটে এটায় যেতে ২০ মিনিট, ফিরে আসতে ২০ মিনিট সময় লাগে। এর মাঝে একঘণ্টা ৩০ মিনিট সময় পাওয়া যায় ছেড়া দ্বীপের ব্যাপক ন্যাচারাল বিউটি গেলার।
ছেড়াদ্বীপ থেকে ফিরেই সময়কে সাক্ষী রেখে এবার পালা আদার ব্যাপারি হয়েও জাহাজ পানে ছুটে চলার। ফেরার পথ ধরার। ধীরে ধীরে নিভে আসছে দিনের আলো।
গাঙচিলগুলোও ফিরে যাচ্ছে বিদায় দিয়ে। এবার যে সত্যিই ফিরে যাবার পালা। ইট পাথরের জংগলের মানুষের আবারো ইট পাথরেই ফিরে আসা।
জেএমএস/জিকেএস