ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজে একদিন
ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশে নির্মিত প্রাচীন আমলের মসজিদগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত প্রাচীন এ মসজিদটিকে ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য (World Heritage Sites) হিসেবে মর্যাদা দেয়। মসজিদটি বাগেরহাট শহরকে বাংলাদেশের তিনটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী শহরের মধ্যে স্থান করে দিয়েছে। তাই সুযোগ পেলে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন।
অবস্থান
বাগেরহাট শহর থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়কের উত্তর পাশে বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া সুন্দরঘোনা গ্রামে অবস্থিত ষাটগম্বুজ মসজিদটি।
নির্মাণ
মসজিদটির গায়ে কোনো শিলালিপি নেই। তাই এটি কে নির্মাণ করেছিলেন বা কোন সময়ে নির্মিত হয়েছিলো সে সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তবে মসজিদটির স্থাপত্যশৈলী দেখলে নিশ্চিত ভাবে ধারণা করা হয় এটি খান-ই-জাহানের নির্মিত। ধারণা করা হয়, পঞ্চদশ শতাব্দীতে ‘খান-উল-আযম উলুঘ খান-ই-জাহান’ মসজিদটি নির্মাণ করেন।
ইতিহাস
সুলতান নসিরউদ্দীন মাহমুদ শাহের (১৪৩৫-৫৯) আমলে খান-উল-আযম উলুঘ খান-ই-জাহান (র.) সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে খলিফাবাদ রাজ্য গড়ে তোলেন। খানজাহান তার প্রশাসনিক রাজধানীতে শাসনকার্য পরিচালনা এবং বৈঠক করার জন্য একটি দরবার হল গড়ে তোলেন, যা ষাট গম্বুজ মসজিদ নামে পরিচিত। এর পরিকল্পনার সাথে দিল্লি ও লাহোরের বাদশাহী মসজিদের মিল রয়েছে। মসজিদটিতে তুঘলকি ও জৌনপুরী নির্মাণশৈলী সুস্পষ্ট।
বৈশিষ্ট্য
মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে বাইরের দিকে প্রায় ১৬০ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ১৪৩ ফুট লম্বা এবং পূর্ব-পশ্চিমে বাইরের দিকে প্রায় ১০৮ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ৯০ ফুট চওড়া। দেয়ালগুলো প্রায় ৮.৫ ফুট পুরু। মসজিদের ভেতরে মেঝে থেকে ছাদের উচ্চতা প্রায় ২১ ফুট।
গম্বুজের সংখ্যা
মসজিদটি ষাটগম্বুজ নামে পরিচিত হলেও এতে মোট গম্বুজ আছে ৮১টি। মসজিদের চার কোণের মিনার বা বুরুজের উপরের ৪টি গম্বুজ বাদ দিলে গম্বুজ সংখ্যা ৭৭টি। আর ৭৭টি গম্বুজের মধ্যে ৭০টির উপরিভাগ গোলাকার এবং মধ্যের একটি সারিতে ৭টি গম্বুজ চারকোণবিশিষ্ট।
মিহরাব
মসজিদের ভিতরে পশ্চিম দেয়ালে ১০টি মিহরাব আছে। মাঝের মিহরাবটি আকারে বড় এবং তুলনামূলক অধিক কারুকার্যমণ্ডিত। এ মিহরাবের দক্ষিণে ৫টি ও উত্তরে ৪টি মিহরাব আছে। শুধু মাঝের মিহরাবের ঠিক পরের জায়গাটিতে উত্তর পাশে একটি ছোট দরজা।
অন্যান্য
মসজিদটির পূর্ব দেয়ালে ১১টি বিরাট আকারের খিলানযুক্ত দরজা আছে। মাঝের দরজাটি অন্যগুলোর চেয়ে বড়। উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে আছে ৭টি করে দরজা। পশ্চিম দিকের প্রধান মেহরাবের পাশে ১টিসহ ষাটগুম্বুজ মসজিদের মোট ২৬টি দরজা আছে। মসজিদের ৪ কোণে ৪টি মিনার বা বুরুজ আছে। এগুলোর নকশা গোলাকার এবং এরা উপরের দিকে সরু হয়ে গেছে। এদের কার্ণিশের কাছে বলয়াকার ব্যান্ড ও চূঁড়ায় গোলাকার গম্বুজ আছে। মিনারগুলোর উচ্চতা, ছাদের কার্ণিশের চেয়ে বেশি।
কীভাবে যাবেন
খুলনা শহর থেকে বাসযোগে ষাটগম্বুজের দূরত্ব খুব বেশি নয়। ৪০ থেকে বড়জোর ৫০ মিনিটের পথ। ঢাকা থেকে সরাসরি বাগেরহাট যাওয়া যায় প্রচলিত সব বাহনেই। এছাড়া বাংলাদেশের যেকোনো স্থান থেকে খুলনা হয়ে ষাটগম্বুজ মসজিদ যাওয়া যায়। প্রতিদিন এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটক আসেন মসজিদটি দেখতে।
এসইউ/আরআইপি