ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ভ্রমণ

প্রেম যমুনার ঘাটে গিয়ে যা দেখবেন

সাজেদুর আবেদীন শান্ত | প্রকাশিত: ০২:০৪ পিএম, ১৩ জুলাই ২০২১

ঐতিহ্যের শহর বগুড়া। লাল মরিচ আর দইয়ের জন্যও বিখ্যাত এ শহর। বগুড়ার যমুনার তীরবর্তী উপজেলা সারিয়াকান্দি। নদী-বিধৌত সারিয়াকান্দির মানুষদের সুখ-দুঃখ একটাই, তা হলো যমুনা। যমুনা নদীর পানির মতোই স্বচ্ছ আশেপাশে বসবাস করা মানুষদের মন।

ফিচার সংবাদ সংগ্রহ ও ছবি তোলার জন্য গিয়েছিলাম বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে। যমুনার পাড় ঘেঁষে ছোট্ট একটা উপজেলা সারিয়াকান্দি। ছোট ছোট চর ও মরিচের আবাদ সমৃদ্ধ করেছে উপজেলাটিতে।

সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর বাঁধ দেখতে অনেক পর্যটক দেখে অবাক হয়ে গেলাম! করোনার লকডাউনেও এতো পর্যটক। স্থানীয়দের জিজ্ঞাসা করে জানা যায়, এ নাকি কিছুই নয়। লকডাউন দেখে লোকজন কম। লকডাউন না থাকলে এখানে নাকি তিল পরিমাণ ঠাঁই থাকে না।

jagonews24

ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

আরও জানতে পারলাম, এখানে আছে দুটি ঘাট। একটি কালিতলা ঘাট ও অপরটি প্রেম যমুনার ঘাট। প্রেম যমুনার ঘাটটির নাম শুনে অবাক হলাম। যমুনার সঙ্গে মানুষের প্রেম, নাকি যমুনার পাড়ে এসে নদীর বিশালতা ও স্নিগ্ধ বাতাস খেতে খেতে প্রেমিক যুগলের প্রেম; বিষয়টি বুঝতে পারলাম না।

সুমন নামের এক পর্যটকের সঙ্গে দেখা হতেই তিনি জানালেন, একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। মহামারির কারণে দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ঘরে বসে অবসাদে ভুগছেন। তাই তিন বন্ধু মিলে বাইকযোগে ঘুরতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘জায়গাটি অনেক সুন্দর। লোকমুখে অনেক শুনেছি। আজই প্রথম এলাম। মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি।’

jagonews24

ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন থেকে জানা যায়, ২০০০ সালে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে সারিয়াকান্দির এই কালিতলা, দীঘলকান্দি (প্রেম যমুনার ঘাট) ও দেবডাঙ্গায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ৫৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনা নদীর ডান তীর রক্ষার্থে গ্রোয়েন বাঁধ নির্মাণ করা হয়।

jagonews24

ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

এই গ্রোয়েন বাঁধগুলোর জন্য যমুনা নদীর ভাঙনের কবল থেকে সারিয়াকান্দি রক্ষা পেয়েছে। সেই সঙ্গে পর্যটনকেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়েছে বাঁধগুলো।

আমি ঘুরে ঘুরে আপন মনে ছবি তুলছি। এমন সময় হঠাৎ পাশ থেকে আওয়াজ ‘স্যার কি নৌকা দিয়ে ঘুরবেন নাকি?’ বললাম, ‘এই প্রখর রোদে আর ঘুরতে চাই না। তবে আপনার যদি সময় থাকে চলেন কিছু সময় গল্প করি।’

jagonews24

ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

লোকটি সম্মতি প্রকাশ করতেই, তার সঙ্গে চা খেতে খেতে আড্ডা জমালাম। গল্পে গল্পে জানতে পারি, তার নাম শফিকুল ইসলাম। বাড়ি সদর ইউনিয়নের চড় বাটিয়ায়। ৪ সন্তানের জনক। সারিয়ান্দির এই ঘাটে প্রায় ১৫ বছর ধরে নৌকা চালান।

jagonews24

ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

এখানে আসা পর্যটকদের ঘুরে ঘুরে চর এবং নদী দেখানোই তার কাজ। আর এ থেকে প্রাপ্ত আয় দিয়েই সংসার চলে তার। তিনি বলেন, ‘আগে দিনে প্রায় দেড়-দুই হাজার টাকা ইনকাম হতো। কিন্তু এই করোনার সময় তেমন ইনকাম হয় না।’

ছবি তুলতে তুলতে সূর্য আসে মাথার উপরে। দুপরের খাবারের সময়ও হয়ে যায়। বাঁধের পাশেই লক্ষ্য করলাম ছোট ছোট কিছু হোটেল। তবে তার অধিকাংশই বন্ধ। দুই-তিনটা খোলা। হোটেলে ঢুকে খেতে বসলাম। যমুনার টাটকা ছোট মাছের চচ্চড়ি, যমুনার বড় পবদা মাছের আলু পটলের ঝোল ও মাসকলায়ের ডাল দিয়ে তৃপ্তিসহ দুপুরের খাবার খেলাম।

jagonews24

ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

খাবার সময় হোটেলওয়ালা চাচার সঙ্গেও খানিকটা সময় গল্পে কাটালাম। গল্পের ছলে জানতে পারলাম, করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ ছিল তার হোটেল। মাত্র দুইদিন আগে খুলেছেন। আগে দিনে প্রায় ১০-১২ হাজার টাকায় বেচাকেনা হতো। এখন তা মাত্র দুই-তিন হাজারে ঠেকেছে।

এরই মাঝে কথা হয় ব্যবসায়ী মুছা প্রামাণিকের সঙ্গে। তার বাড়ি জামালপুরের ইসলামপুরে। তিনি নদীপথে পাইকারি মরিচের ব্যবসা করেন। নদীপথে পরিবহন করায় বেশ লাভ হয় নাকি তার। তবে করোনার কারণে তার ব্যবসায় কোনো প্রভাব পড়েনি বলে জানান তিনি।

jagonews24

ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

নদীর সৌন্দর্য উপভোগ, জেলেদের নদীতে মাঝ ধরা, ছোট বড় ইঞ্জিন চালিত ও ইঞ্জিন ছাড়া নৌকা, স্টিমার, স্পিড বোট দেখতে দেখতে হেলে পড়ল সূর্য। তখনই বাসায় ফেরার জন্য রওনা হলাম।

আপনারাও চাইলে ভ্রমণ করতে পারেন অসাধারণ জায়গাটিতে। উপভোগ করতে পারেন নদীপাড়ের অপার সৌন্দর্য, চড়তে পারেন ছোট ছোট নৌকায়। জানতে পারেন নদীর সঙ্গে এখানকার মানুষের সংগ্রামী জীবনের গল্প।

jagonews24

ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সরাসরি বাস বা ট্রেনযোগে বগুড়া শহরে নামতে হবে। বাসে নন-এসিতে ৪৫০ টাকা ও এসিতে ১২৫০ টাকা ভাড়া। ট্রেনে রংপুর এক্সপ্রেস বা লালমনি এক্সপ্রেসে ভাড়া ৪২০ টাকা। এরপর বগুড়া থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে অটো বা সিএনজিতে ৬০ টাকা (জনপ্রতি) সরাসরি আসা যাবে এ জায়গায়।

এখানে এসে থাকতে পারবেন বগুড়ার হোটেল মম ইন (ফাইভ স্টার মানের), হোটেল নাজ গার্ডেন, পর্যটন মোটেল (বনানী মোড়ে), সেফওয়ে মোটেল (চারমাথা), নর্থওয়ে মোটেল (কলোনী বাজার), সেঞ্চুরি মোটেল (চারমাথা), মোটেল ক্যাসল এমএইচ (মাটিডালি)। এগুলো প্রত্যেকটাই শহরের বাইরে, নিরিবিলি পরিবেশে।

আর শহরের মধ্যেও অনেক হোটেল আছে। তার মধ্যে একেবারে শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হোটেল আকবরিয়া অন্যতম। নবাব বাড়ি রোডেও আছে কয়েকটি হোটেল। তবে সারিয়াকান্দিতে থাকার কোনো হোটেল নেই। থাকতে হলে বগুড়ার হোটেলগুলোতেই থাকতে হবে।

লেখক: ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী

জেএমএস/এসইউ/এমকেএইচ

আরও পড়ুন