আজিমউন্নিসার জীবন্ত সমাধির গোপন রহস্য
বাংলার প্রথম নবাব মুর্শিদ কুলি খানের একমাত্র কন্যা ছিলেন আজিমউন্নিসা। অনেকেই তার নাম জিন্নাতউন্নিসা বলেও জানেন। ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়, আজিমউন্নিসাকে জীবন্ত সমাধি দেওয়া হয়েছিল। তার বাবা নিজেই তার মেয়েকে জীবন্ত কবর দেওয়া সিদ্ধান্ত নেন।
নিশ্চয়ই ভাবছেন নবাব অনেক নৃশংস ছিলেন, আর এ কারণেই বোধ হয় তিনি নিজের মেয়েকে জীবন্ত কবর দিয়েছেন! বিষয়টি আসলে তেমন নয়! জানা যায়, কঠিন রোগে আক্রান্ত হন আজিমউন্নিসা। কবিরাজ তাকে দৈনিক একটি মানবশিশুর কলিজা দিয়ে ওষুধ তৈরি করে খাওয়াতেন।
এরপর ওই ব্যাধি থেকে মুক্তি পেলেও নবাবকন্যা মানবশিশুর কলিজায় নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। চুরি করে হলেও তিনি শিশুদের কলিজা বের করে খেতেন। এই ঘটনা মুর্শিদকুলি খাঁ জানতে পেরে তাকে জীবন্ত কবর দেওয়ার নির্দেশ দেন। যদিও আজিমউন্নিসার মৃত্যু ও তার সমাধি নিয়ে নানা কল্পকাহিনির প্রচলিত আছে।
১৭৩০ সালে আজিমউন্নিসাকে ভারতের মুর্শিদাবাদের মহিমাপুরে জীবন্ত সমাধি দেওয়া হয় বলে মত অনেকেরই। সেখানে ১৭৩৪ সালে তৈরি করা হয় একটি মসজিদ। যেটি বর্তমানে পুরোই ধবংসপ্রাপ্ত। শুধু একটি দেয়ালের অংশবিশেষ আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে। আজিমউন্নিসার জীবন্ত সমাধি দেখতে পর্যটকরা ভিড় জমান মুর্শিদাবাদে।
মুঘল স্থাপত্যে গড়া প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকলে সোজা একটি পথ উঠে গেছে উঁচু একটি মঞ্চের মতো ঢিবির উপর। এই ঢিবির উপর আছে ফুলের বাগান। সিঁড়ি বেয়ে এই ঢিবি বা বাগানে উঠতে হয়। সিঁড়িতে না উঠে বামদিক দিয়ে সিঁড়ির নিচের দিকে একটু এগিয়ে গেলেই দেখা যাবে একটি সমাধি। এটিই আজিমউন্নিসার সমাধি।
নবাব মুর্শিদ কুলি খানের মতো তার মেয়ে আজিমউন্নিসার সমাধিও প্রবেশ সোপানের তলদেশে সমাহিত। সিঁড়ির নিচে সমাধি হলেও, সেখানে আছে প্রশস্ত কক্ষ। ওই কক্ষেই আজিমউন্নিসার সমাধি। কথিত আছে সাধারণ মানুষের পদধূলিতে তার শিশু হত্যার পাপ মোচনের জন্য মসজিদে ওঠার সিঁড়ির নিচে তাকে জীবন্ত সমাহিত করা হয়।
আজিমউন্নিসা বেগমের এর সমাধির উপরে আরো একটি সমাধি দেখতে পাওয়া যায়। তবে সেটি কার সমাধিটি, তা কারও জানা নেই। অনেকেই বলেন, সমাধিটি সেই হাকিমের আবার কারও মতে, বেগমের বিশ্বস্ত এক অনুচরের। ২৯১ বছর ধরে আজও এই ঘটনাটি অমীমাংসিত রহস্য হিসেবেই আছে।
মুর্শিদাবাদের আনাচে-কানাচে এই কাহিনি আজও ঘুরে বেড়ায়। আজিমউন্নিসা বেগমের মসজিদটি প্রবল ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যায়, তবে এর কারুকার্য করা একটি দেওয়াল এখনো বর্তমান। এই মসজিদটির সঙ্গে মুর্শিদকুলি খাঁ এর নির্মিত কাটরা মসজিদ এর অনেক মিল পাওয়া যায়।
১৯৮৫ সালে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ এই ভগ্নপ্রায় মসজিদটির রক্ষণাবেক্ষণ করে সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়। নবাব কন্যা মুর্শিদ কুলি খানের কন্যা আজিমউন্নিসার জীবন্ত কবর দেখতে এরপর থেকে আজও মানুষের ভিড় লেগেই থাকে সমাধিস্থলে। আজিমউন্নিসার জীবন্ত কবরের প্রচলিত কাহিনি শুনে সবাই শিহরিত হয়ে ওঠেন।
জেএমএস/জিকেএস