যে শহরে মৃত্যু নিষিদ্ধ, জেনে নিন কারণ
মৃত্যু অনিবার্য। প্রকৃতির নিয়মে মানুষ মাত্রই মরণশীল। শত চেষ্টা করেও মৃত্যুকে আটকে রাখার ক্ষমতা কারও নেই। তবে জানেন কি, এমন এক শহর আছে যেখানকার বাসিন্দাদের মরতে মানা! অবিশ্বাস্য মনে হলেও বিষয়টি সত্যিই।
উত্তর মেরু থেকে মাত্র ৮০০ মাইল দূরে অবস্থিত সোভালবার্ড দ্বীপপুঞ্জ। সেখানকার নরওয়েজিয়ান লঙ্গিয়ারইবিন নামক ছোট্ট শহরেরটি বিশ্বের সবচেয়ে উত্তর-পূর্ব শহর হিসেবে বিবেচিত। সেখানে বছরের প্রায় চার মাস সূর্যের আলো দেখা যায় না।
এ শহরে বসবাস করে প্রায় ৬৫ হাজার মানুষ। প্রায় ২০০০ এর মতো বাড়ি আছে ছোট্ট এই গ্রামে। নরওয়ের লঙ্গিয়ারইবনের বাসিন্দাদের মৃত্যু অবৈধ। সেখানে বসবাসরত কোনো মানুষ গ্রামে মারা যেতে পারবে না বলে কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা আছে।
১৯৫০ সাল থেকেই সেখানে মৃত্যু নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদি কোনো মৃত্যু পথযাত্রী থাকেন সেখানে; তাহলে দ্রুত তাকে মূল ভূ-খণ্ড থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়। এর কারণ হলো সেখানকার আবহাওয়া। নরওয়ের এই স্থানটি যেহেতু বরফে ঢাকা থাকে বেশিরভাগ সময়ই; তাই সেখানে মৃতদেহগুলো কবর দিলে তা পচে না।
আর্কটিক বৃত্তের উর্ধ্বে থাকা, সোভালবার্ডের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কখনও কখনও তা কমে দাঁড়ায় ২.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইটে। এ কারণে সেখানে কোনো মৃত ব্যক্তিকে কবর দিলে লাশ পচে না।
তাই যদি কোনো ব্যক্তি মরনঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন; তাহলে সেই ভাইরাসও ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে নষ্ট হবে না। ১৯৫০ সালে স্থানীয়রা যখন বিষয়টি বুঝতে পারেন; তখন রোগ ছড়ানোর ভয়ে তারা শহরে মৃতদের কবর দেওয়া বন্ধ করে দেয়। তখন থেকেই লংগিয়ারবায়নে মৃত্যু নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করা হয়।
১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু মহামারিতে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের শরীরে এখনও না-কি ভাইরাসের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। এর কারণ হলো ঠান্ডা আবহাওয়া। করোনাভাইরাসের মতো প্রাণঘাতী ভাইরাস ঠান্ডা আবহাওয়াতে দীর্ঘদিন জীবিত থাকে। বরফপ্রধান দেশে মৃতদের কবর হলেও সে লাশ পচে না বরং তা প্রাকৃতিকভাবে মমিতে পরিণত হয়।
এ কারণে লঙ্গিয়েরবিয়েনের বাসিন্দাদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থ থাকা ব্যক্তিদেরকে অন্য শহরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় যদি কেউ মৃত্যুবরণ করে; তাহলে লাশ দ্রুত অন্যত্র দাফন করা হয়।
লঙ্গিয়েরবিয়েনে একটি ছোট চিকিৎসাকেন্দ্র আছে, যেটি প্রাথমিক অবস্থায় রোগীদেরকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গুরুতর হলে অন্যত্র পাঠিয়ে দেয়। আর যদি কোনো ব্যক্তি আকস্মিকভাবে লঙ্গিয়েরবিয়েনে মারা যান; তাহলে তার লাশ দ্রুত হেলিকপ্টারে করে অন্য শহরের সমাধিস্থলে নিয়ে দাফন করা হয়।
মরু অঞ্চলের লঙ্গিয়েরবিয়েন স্থানটি বেশ মনোমুগ্ধকর। এলাকাবাসীর ঘরগুলো বিভিন্ন রঙের এবং আকর্ষণীয়। সারিবদ্ধভাবে একই উচ্চতার হরেক রঙের বাড়িগুলো দেখলে আপনার মনে ভরে যাবে।
বরফে ঢাকা পর্বমালা ও উপত্যকা দেখতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা স্থানটিতে ঘুরতে যান। লঙ্গিয়ারবিয়েন অবস্থিত বৃহত্তম দ্বীপ স্পিটসবার্গেন। শীতে সেখানকার আকাশে রাতে নানা রঙের আলো দেখা যায়। যা অরোরা নামে পরিচিতি।
সূত্র: মেন্টাল ফ্লস, কালচার ট্রিপ
জেএমএস/জিকেএস