১৮০০ বছরের পুরোনো বিস্ময়কর এক দেউল
ভরত রাজার দেউল বা ভরত ভায়না সম্পর্কে হয়তো অনেকেরই জানা আছে! বিষ্ময়কর এক প্রাচীনতম নিদর্শন এটি। ১৮০০ বছরের পুরোনো হলেও প্রাচীন এ নিদর্শনটি আজও দর্শনার্থীদের মনে কৌতূহল জাগায়। ভরত রাজার দেউল দেখতে সবসময় পর্যটকরা সেখানে ভিড় জমায়।
ভরত ভায়না বা ভরতের দেউল ঢিবি নামেও পরিচিত এ নিদর্শনটি। এটি লম্বায় ৫০ ফুট এবং ব্যাসে ৯০০ প্রায় ৯০০ ফুট। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোর জেলার একটি প্রত্নক্ষেত্র এটি। কেশবপুর উপজেলার গৌরিঘোনা ইউনিয়নে অবস্থিত ভরত ভায়না গ্রামে গেলেই দেখা যাবে প্রাচীন এ নিদর্শন।
জানা যায়, ১৮০০ বছর আগে ভরত নামের এক রাজা তার শাসনকাল স্মরণীয় করে রাখতে এ স্থাপনাটি নির্মাণ করেন। এর পূর্ব দিক দিয়ে বয়ে চলেছে বুড়িভদ্র নদী। এ নদীর ডান তীরের প্রায় ৪০০ মিটার পশ্চিমে ভরত ভায়না গ্রাম অবস্থিত।
প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা প্রাচীন এ নিদর্শনে ব্যবহৃত ইট ও পোড়ামাটির মূর্তি গবেষণা করে নিশ্চিত হয়েছেন, এটি খ্রিষ্টীয় ৩-৬ শতকে নির্মিত একটি মন্দির। দেশে এমন আদি ঐতিহাসিক যুগের স্থাপনা খুব কমই আছে। জানা মতে, ভরত ভায়না মন্দির দক্ষিণ বঙ্গের একমাত্র আদি ঐতিহাসিক যুগের স্থাপনা।
প্রত্নতক্ত বিভাগ, ১৯৮৪ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দেউলের খনন কাজ চালায়। দেউলের মধ্যে ৯৪টি কক্ষের সন্ধান মেলে। স্হাপনাটি চারপাশে বর্ধিত আকারে ১২টি কক্ষ বাকি ৮২টি কক্ষ ক্রমান্বয়ে উপরের দিকে উঠে গেছে। দেউলটির উপরে ৪টি কক্ষ এবং পাশে ৮টি কক্ষ আছে। স্থাপনাটির গোড়ার দিকে ৩ মিটার চওড়া রাস্তাও আছে।
ইমারতটি সম্পূর্ণ কাদা ও ইট দিয়ে নির্মিত হয়েছিল। ২৬৬ মিটার পরিধিবিশিষ্ট পাদদেশ থেকে ক্রমান্বয়ে উপরের দিকে উঠে গেছে। এর নির্মাণে যে ইট ব্যবহার করা হয়েছে তার পরিমাপ ১৬ ইঞ্চি, ১৩ ইঞ্চি ও ২ ইঞ্চি। এত বড় ইট এতদাঞ্চলের কোনো পুরাকীর্তিতে ব্যবহার করতে দেখা যায়নি।
খননকাজ চলাকালীন যেসব পুরাকীর্তি পাওয়া গেছে তার মধ্যে পোড়ামাটির তৈরি মানুষের মুখমণ্ডল, দেব-দেবীর হাতের ভগ্নাংশসহ আরো দুর্লভ সব মূর্তি। যেগুলো বর্তমানে খুলনার শিববাড়িতে বিভাগীয় জাদুঘরে সংরক্ষণ করা আছে।
যেভাবে যাবেন
দেশের যেকোনো স্থান থেকে প্রথমে খুলনা যেতে হবে। তারপর সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত ভ্যান বা মোটরসাইকেলে করে যেতে হবে ভরত ভায়না গ্রামে। ভ্যানচালকদেরকে ভরতের দেউলের কথা বললেই আপনাকে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেবে।
কোথায় থাকবেন ও খাবেন?
ভরত রাজার দেউলের আশেপাশে কোনো হোটেল বা থাকার ব্যবস্থা নেই। তাই খুলনা শহরে ফিরে আসতে হবে। সেখানে থাকার জন্য ভালো মানের হোটেল পেয়ে যাবেন।
খুলনা যাবেন আর চুইঝাল দেওয়া মাংস খেয়ে আসবেন না তা কি হয়! সেখানকার বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে চুইঝালের মাস পাওয়া যায়। খেয়ে আসতে ভুলবেন না!
জেএমএস/জিকেএস