মনপুরায় ইকো ট্যুরিজমের অপার সম্ভাবনা
মনপুরা নামটি শুনলে প্রথমেই চোখে ভাসে চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত সিনেমার কথা। ২০০৯ সালে বক্স অফিসে ঝড় তোলা সিনেমাটির নায়ক সোনাই মনপুরা দ্বীপে নির্বাসিত জীবনযাপন করতেন। দর্শকের মনে দাগ কেটে যায় ছবির গল্প। অনেকেই কৌতূহলী হয়ে ওঠেন, আসলেই কি এ নামে কোনো জায়গা আছে? কৌতূহলী দর্শকরা হতাশ হননি। জানা গেল, এ নামেই ছবির মতো সুন্দর একটি দ্বীপ আছে ভোলায়। এটি ছোটখাটো কোনো দ্বীপ নয়, পুরো ৩৭৩.১৯ বর্গ কিলোমিটারের একটি উপজেলা।
আর সৌন্দর্য? এককথায় অনিন্দ্য। বঙ্গোপসাগরের বুকে নয়নাভিরাম এ বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলাকে ঘিরে রেখেছে সাগর আর নদী। ভেতর দিয়ে এঁকে-বেঁকে চলে গেছে অনেকগুলো খাল। নদী এখানে প্রতিবছরই তার ভাঙা-গড়ার খেলা দেখায়। তবুও মনপুরার সৌন্দর্যে ভাটা পড়ে না এতটুকু। সবুজ ম্যানগ্রোভ বন, তার ভেতরে উঁকি দেওয়া হরিণের লাজুক চোখ, দখিনা হাওয়া বিচ আর নির্মল বাতাস মিলে এক অনন্য পরিবেশ বিরাজমান সেখানে।
এতসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর উপজেলাটি হয়ে উঠতে পারে ইকো ট্যুরিজমের এক অনন্য কেন্দ্রস্থল। সঠিক উপায়ে যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে এ দ্বীপকে গড়ে তোলা যেতে পারে একটি আদর্শ ভ্রমণকেন্দ্র হিসেবে। তার সব উপাদানই এখানে বিদ্যমান।
সেই দিকটি মাথায় রেখেই কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। পর্যটকরা যাতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকনের পাশাপাশি স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে স্থানীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারেন, শহুরে মানুষ যেন গ্রামীণ আবহ উপভোগ করতে পারেন; সে লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে কিছু উদ্যোগ।
এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নের বিষয়টি দেখভাল করছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. শামীম মিঞা। জাগো নিউজকে তিনি জানিয়েছেন মনপুরায় ট্যুরিজমের সম্ভাবনা এবং সঙ্কটের দিকগুলো।
ইউএনও শামীম মিঞা বলেন, ‘মনপুরায় আমরা ইকো ট্যুরিজম প্রমোট করার চেষ্টা করছি। ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সঙ্গে আমাদের একটি ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে মনপুরার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যুক্ত হয়ে কীভাবে সরকারকে সহযোগিতা করতে পারে, তা নিয়ে একটি বড় আলোচনা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সর্ব দক্ষিণের ইউনিয়ন দক্ষিণ সাকুচিয়ায় গড়ে ওঠা প্রাকৃতিক বিচটির দৈর্ঘ প্রায় আধা কিলোমিটার। সেখানে আমরা ট্যুরিজমকে প্রমোট করার জন্য কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। পাশাপাশি দক্ষিণ সাকুচিয়ায়ই কোরালিয়া বাজার হয়ে একটি ক্যানেল আছে। যার দুইপাশে ঘন জঙ্গল, প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম বন আছে। যেখানে প্রচুর হরিণ পাওয়া যায়। সেখানে আরও কিছু চর আছে, যেগুলো আসলে বন। সেখানে আমরা ট্যুরিজমের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি।’
পর্যটকদের মনপুরার চারদিক ঘুরিয়ে দেখার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মনপুরা যেহেতু একটি দ্বীপ উপজেলা। এর চারপাশেই সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি। দ্বীপটিকে পুরোপুরি ঘুরে দেখার সুযোগ করে দিতে আমরা কিছু রিভার ক্রুজ আনব। যাতে পর্যটকরা ঘুরে দেখতে পারেন। সম্প্রতি পিকেএসএফের সঙ্গে গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার একটি যৌথ প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। যার মাধ্যমে চর কলাতলী এবং কাজীরচরে আমরা কিছু ইকো ট্যুরিজমের বিকাশ ঘটাব।’
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে যে জিনিসগুলো আমাদের এখানে উৎপাদন হয় যেমন কাঁকড়া, চিংড়ি এগুলো উৎপাদন করা হবে। পাশাপাশি কিছু মডেল হোম স্টেট তৈরি করবে। যারা মনপুরার স্থানীয় সংস্কৃতিকে প্রমোট করবে। এখানে লোকজন এসে একদম গ্রামীণ আবহে থাকতে পারবেন। তাদের (স্থানীয়) হাতে রান্না করা খাবার খাবে, তাদের সঙ্গে মিশবে। অর্থাৎ একদম প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে সে ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।’
এ বছরের জুনের মধ্যেই এ প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানান ইউএনও।
এসএস/এসইউ/জিকেএস