হাকালুকি হাওরে পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে
উপরে নীল আকাশ আর নিচে অথৈ স্বচ্ছ জলরাশি। জলের উপর বয়ে চলছে ছোট-বড় নৌকা। আর মাঝখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। নয়নাভিরাম দৃশ্যটি দেশের বৃহত্তম হাকালুকি হাওরের। এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য মন কেড়ে নেয় ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের। তাই তো সেখানে ছুটে আসছেন পর্যটকরা।
জানা যায়, এবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশের সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। কিন্তু ভ্রমণপিপাসু মানুষ করোনার ভয় উপেক্ষা করে ঈদের ছুটিতে বেড়াতে আসছেন হাকালুকি হাওরে। ঈদের দিন শনিবার থেকে ঈদের পঞ্চম দিন বুধবার পর্যন্ত প্রায় ১৪ থেকে ১৫ হাজার পর্যটকের সমাগম ঘটেছে।
হাওর ঘুরে দেখা গেছে, সিলেট ও মৌলভীবাজারের পাঁচটি উপজেলা নিয়ে বিস্তৃত হাকালুকি হাওর। হাওরের পশ্চিমে ভাটেরা পাহাড় এবং পূর্বে পাথারিয়া পাহাড় হাকালুকির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। ছোট-বড় ২৩৮টি বিল, ১০টি নদী নিয়ে প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর আয়তনের এ হাওর বর্ষায় ২৩ হাজার হেক্টরের বিশাল জলাশয়ে পরিণত হয়।
মৌলভীবাজারে ২০০ আর সিলেটে রয়েছে ৩৮টি বিল। হাওরের ৮০ ভাগ মৌলভীবাজারে আর ২০ ভাগ সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলায়। মৌলভীবাজারের বড়লেখা অংশে ৬০ ভাগ, কুলাউড়ায় ১২ ভাগ ও জুড়ি উপজেলায় রয়েছে ৮ ভাগ।
চলতি বর্ষায় হাকালুকি উত্তাল যৌবনের জয়গানে মুখরিত হয়। নীল আকাশের সাথে জলরাশির মিতালি বিমোহিত করে পর্যটকদের। বর্ষায় হাকালুকি হাওর দেখলে মনে হবে, এ যেন মহাসাগর। যেদিকে চোখ যায় শুধু জলের হাতছানি। চোখে পড়ে জলের বুকে দণ্ডায়মান হিজল, তমালসহ নানা জলজ বৃক্ষ। গাছের ডালে অচেনা পাখির আনাগোনা।
মৌসুমভেদে এখানে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরিযায়ী পাখি এসে আশ্রয় নেয়। যে কারণে হাকালুকি শুধু হাওরই নয়, পরিযায়ী পাখির বৃহৎ অভয়াশ্রমও। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় তাই হাকালুকি হাওরের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বিশাল এ হাওর ঘিরে স্থানীয় লাখো মানুষের স্বপ্ন ও জীবিকা।
নৌকায় হাওরের বুকে ভাসতে ভাসতে দেখা মেলে মাছ শিকারিদের ভাসমান জীবন। চাইলে হাওরের মাছ কিনে খাওয়া যায় এসব নৌকাতেই। মাঝিদের বললে, তারাই নৌকার পাটাতনে অস্থায়ী চুলায় গরম ভাত রেঁধে দেয়। হাওরের বুকে ভেসে তাজা মাছ খাওয়ার স্বাদ পেতে অনেকেই ছুটে আসেন।
তাই তো বিশেষ ছুটির দিনগুলোতে হাকালুকি হাওরে থাকে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়। হাওরের জলে ক্লান্ত সূর্যের অবগাহন দেখতে অনেকে সন্ধ্যা নামার আগে ছুটে যান। বিস্তৃত হাওরের জলে গোধূলির সূর্য ডোবার অপরূপ দৃশ্য যে কাউকে নিয়ে যায় অন্য জগতে। এখানে কয়েক ঘণ্টার জন্য ছোট নৌকা ভাড়া ৮০০ টাকা এবং বড় নৌকা ১২০০ টাকা। এক্ষেত্রে দরদাম করে নেওয়া ভালো।
যেভাবে যাবেন: সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, মহাখালী থেকে বাসে প্রথমে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া বা বড়লেখায় আসতে হবে। কুলাউড়া, জুড়ি অথবা বড়লেখা থেকে অটোতে করে চলে যেতে পারেন হাকালুকিতে। ট্রেনে করে আসতে চাইলে কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর স্টেশন থেকে সিলেটগামী ট্রেনে চলে আসতে হবে কুলাউড়া রেল স্টেশনে। কুলাউড়া রেল স্টেশন থেকে অটোতে করে চলে যেতে পারেন হাওরে।
রিপন দে/এসইউ/এএ/এমকেএইচ