দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে বিতঙ্গল আখড়া
বৃহস্পতিবার আমরা ক’জন বন্ধু মিলে পরিকল্পনা করলাম হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার বিতঙ্গল আখড়ায় যাওয়ার। এটি ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত বৈষ্ণব ধর্মের একটি উপাসনালয়। পরিকল্পনা মতে, পরদিন শক্রবার হওয়ায় ভ্রমণের সরঞ্জামাদি প্রস্তুত করতে নেমে পড়লাম।
আমরা ফান্দাউক বাজার থেকে রান্না-বান্নার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করে ফেললাম বৃহস্পতিবার রাতেই। আরও কাজ সারতে রাত প্রায় দশটা বেজে গেল। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠতে যার যার বাড়ি চলে গেলাম।
শুক্রবার সকাল আটটায় আমরা ফান্দাউক নৌকাঘাটে গেলাম। লালন শাহ, স্বপন দাস, স্বপন দেব, আ. খালেক, চৌধুরী মহসীন, রণু দাস, জাহাঙ্গীর, শামীম ভাই, সোহাগ ও আমিসহ এগারোজন মিলে একটি মাঝারি ধরনের নৌকা ভাড়া করলাম।
নৌকা বিতঙ্গল আখড়ার উদ্দেশে ভাসাল মাঝি। নৌকা খানিক এগোতেই শুরু হলো আমাদের গানের আসর। বন্ধু লালনের সুরেলা কণ্ঠে বিচ্ছেদি গান ও চৌধুরী মহসীনের ভাটিয়ালি ও দেহতত্ত্ব গানে সবাই আনন্দিত। গানের তালে তালে স্বপন দেব ও স্বপন দাসের হেলে-দুলে নাচ বেশ ভালোই লাগছিল।
প্রায় তিন ঘণ্টা পথ অতিক্রম করার পর পৌঁছলাম নির্দিষ্ট স্থান বিতঙ্গল আখড়ায়। আখড়ায় ঢুকতেই চোখে পড়ল বিশাল পুকুর। পাকাঘাট। এ ঘাটে দর্শনার্থী বা উপাসনালয়ে আসা ধর্মভীরু মানুষ গোসল করে আখড়ায় প্রবেশ করে।
আখড়ার প্রবেশদ্বারটিও বিশাল। এর মাঝে পুরাতন কারুকাজ, নকশা ও মূর্তির আকৃতি সত্যিই চোখ ধাঁধানো। আমরা প্রবেশ করলাম। ঘুরে ঘুরে সব দেখলাম এবং জানলাম। বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম তীর্থস্থান এ প্রাচীন আখড়া। আখড়াটি বানিয়াচং উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে হাওর পাড়ে অবস্থিত।
জানামতে, আখড়াটি রামকৃষ্ণ গোস্বামী প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি উপমহাদেশের বিভিন্ন তীর্থস্থান সফর করে ষোড়শ শতাব্দীতে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। এতে ১২০ জন বৈষ্ণবের জন্য ১২০টি কক্ষ রয়েছে। এ আখড়ায় বিভিন্ন ধরনের উৎসব হয়। সে সময় ধর্মাবলম্বী মানুষ জড়ো হয়।
আখড়ায় দর্শনীয় স্থানসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো ২৫ মণ ওজনের শ্বেত পাথরের চৌকি, পিতলের সিংহাসন, সুসজ্জিত রথ, রৌপ্যপাত্র ও সোনার মুকুট উল্লেখযোগ্য।
শেষে বারবার বলতে ইচ্ছে হয়, বিতঙ্গল আখড়াটি মধ্যযুগীয় স্থাপত্যশৈলী অনুসারে নির্মিত। স্থানটি ধর্মভীরুদের পাশাপাশি পর্যটকদের জন্যও দর্শনীয়।
এসইউ/এমকেএইচ