হাওরের নতুন আকর্ষণ পালেরমোড়া সেলফি ব্রিজ
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় হাকালুকি হাওর। এর সাথেই ‘পালেরমোড়া সেলফি ব্রিজ’। সেতুটির চারপাশে হাওরের অথৈ জলরাশি। জলের ছলাৎ ছলাৎ ঢেউয়ে প্রতিফলিত হয় সূর্যের আলো। সেই জলরাশির বুক চিড়ে বেরিয়ে এসেছে কুলাউড়া-ভুকশিমইল-বরমচাল আঞ্চলিক সড়ক। তার ওপর দাঁড়িয়ে আছে সুদৃশ্য পাকা সেতু, যা বর্তমানে সেলফি ব্রিজ নামে পরিচিত।
চকচকে পরিষ্কার আর লাল-সাদা রঙে আঁকা সেতুটি দূর থেকে দেখলে মনে হয় বিশাল সামুদ্রিক জাহাজ। ব্রিজের ওপর দাঁড়ালেই বাতাস যেন শিহরণ জাগায়। কানে ভেসে আসে ঢেউয়ের ছলাৎ ছলাৎ ধ্বনি। তাই পর্যটকদের কাছে এখন নতুন আকর্ষণ এই সেতু। এখানে এখন রীতিমত সেলফি তোলার ধুম পড়ে।
কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইলে যাওয়ার সময় চোখে পড়বে এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য। ভুকশিমইল ইউনিয়নে অবস্থিত এই পালেরমোড়া। কুলাউড়া-ভুকশিমইল-বরমচাল সড়ক সংস্কার ও বিভিন্ন কালভার্টে রং দেওয়ার পর জায়গাটি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। তাই পালেরমোড়া এখন দর্শনীয় স্থান। এলাকার বিভিন্ন বয়সী মানুষ সময় কাটাতে এখানে আসেন।
স্থানীয় কিছু যুবকের উদ্যোগে স্থানটি এখন পর্যটকদের আনন্দ দিচ্ছে। যুবকদের অনেক পরিকল্পনা এ সেতু ঘিরে। ইতোমধ্যে তাদের উদ্যোগে কয়েকশ কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণ করা হয়েছে। প্রতিদিন তারা পরিষ্কার করে চকচকে করে রাখছে। নতুন করে রং দিচ্ছে। তাদের পরিকল্পনা রয়েছে ১ কি.মি জায়গাজুড়ে রাস্তার দুইপাশে কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগানোর। পর্যটকদের বসার জন্য বেঞ্চ তৈরিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে তারা।
উদ্যোক্তাদের একজন মাহফুজ হামিদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘নিজেদের উদোগে এ স্থানের পরিচর্যা করেছি। গাছ লাগিয়েছি। আমাদের পরিকল্পনা আছে, এখানে ১ কি.মি জায়গা নিয়ে লাল শাপলা লাগানোর। সেই সাথে রাস্তার দুইপাশে ১ হাজার কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগাবো। সারাদেশের মানুষ এখানে ছুটে আসবে সে পরিবেশ আমরা তৈরি করব।’
পালেরমোড়া সেলফি ব্রিজের পাশে অথৈ জলরাশি ভেদ করে যাতায়াত করছে ছোট-বড় নৌকা। কেউ মাছ ধরার কাজে, কেউবা যাতায়াতের স্বার্থে নৌকাগুলো ব্যবহার করছেন। আবার হাওরের বুক চিড়ে বের হওয়া সড়কে চলছে শত শত ছোট-বড় গাড়ির বহর। মন চাইলে পালেরমোড়া থেকে ভাড়ায় চালিত নৌকা নিয়ে হাওরের মাঝখানে যাওয়া যায়। কূলহীন হাওরের মাঝখানে গেলে দেখা যায় মাছ ধরার দৃশ্য। ঢেউয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দুলতে থাকে জেলেদের ছোট ছোট নৌকা।
অনেকের মতে, সমুদ্রসৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের চেয়ে কোন অংশে কম নয় পালেরমোড়ার দৃশ্য। তাই বর্ষা শুরুর পর থেকে প্রতিদিনই বাড়ছে ভ্রমণপিপাসুর ভিড়। ঘাটে দাঁড়িয়ে উত্তর, পূর্ব বা দক্ষিণের যে কোন দিকে তাকালে চোখে পড়বে সমুদ্রাকৃতির বিশাল হাওর। সেখানে ধারণা পাওয়া যাবে, বর্ষায় প্রকৃতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষের বেঁচে থাকার নিরন্তর সংগ্রাম সম্পর্কে।
বলে রাখা ভালো, পালেরমোড়ার এ নৈসর্গিক সৌন্দর্য বর্ষা কালেই দেখা যায়। শুকনো মৌসুমে হাওরজুড়ে চলে চাষাবাদ। তখন আর অথৈ জলের দেখা মেলে না। চলে না নৌকাও। বর্ষায় ভরা পূর্ণিমা রাতে পালেরমোড়ায় গেলে ফিরে আসতে মন চাইবে না।
দেশের যে কোন স্থান থেকে কুলাউড়া রেল স্টেসন যাবেন। রেলস্টেশন থেকে কুলাউড়া থানার সামনে এসে অটোরিকশায় পালেরমোড়া যাওয়া যায়। গাড়ি ভাড়া জনপ্রতি ৩০ টাকা। রিজার্ভ অটো নিতে খরচ হবে ১২০-১৫০ টাকা।
এসইউ/এমকেএইচ