পঙ্গু বৃদ্ধা মা ও শাশুড়িকে নিয়ে ‘মধুর যন্ত্রণা’ মুরাদের
পাশাপাশি হুইল চেয়ারে বসে আছেন দুই থুড়থুড়ে বুড়ি। একজনের নাম বেটি ও আরেকজনের ফেনী নাচ। একজনের বয়স ৮৩ বছর, অপরজনের ৮২। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে খেয়াল করলাম তারা কেউ কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। মাঝে মাঝে আঙ্গুল নাড়িয়ে ও চোখের ইশারায় নিজেদের মধ্যে ভাব বিনিময় করছেন। তাদের অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা মধ্যবয়সী এক ভদ্রলোক দূতিয়ালি হয়ে কথা বলছিলেন।
দুই থুড়থুড়ে বৃদ্ধার চুপচাপ থাকার কারণ জানতে কৌতূহলবশত ওই ভদ্রলোকের সঙ্গে পেশাগত পরিচয় দিয়ে আলাপ জমাই। একপর্যায়ে বৃদ্ধাদ্বয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক ও দু’জনার নীরবতার কারণ জানতে চাই।
মুরাদ নামের ওই ভদ্র লোক প্রশ্ন শুনে ফিক করে হেসে ফেলে বলেন, ‘আপনি ঠিকই ধরেছেন। তাদের নিয়ে “মধুর যন্ত্রণা”য় আছি।’
তিনি জানালেন, দু’জনের একজন তার মা ও আরেকজন শাশুড়ি। মা টার্কিশিয়ান আর শাশুড়ি ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত। ভাষাগত সমস্যার কারণে কেউ কারও কথা বুঝতে পারেন না। আজই প্রথম কেউ কারও সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করছেন। ভাষাগত সমস্যার কারণে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে টুকটাক মতবিনিময় করছেন। আর তাদের সময় যেন বোরিং না কাটে সেজন্য তিনি দূতিয়ালি হিসেবে কাজ করছেন।
তিনি জানান, বছর দুয়েক আগে ভালোবাসে বিয়ে করেন ব্রিটিশ নাগরিককে। মুরাদ পেশায় টেইলার ও তার স্ত্রী অফিসে চাকরি করেন। দোকানে পোশাক বানাতে এসে তাদের প্রথম পরিচয়, অতঃপর বিভিন্ন পার্টিতে ঘোরাঘুরি ও সর্বশেষ বছর দুয়েক আগে বিয়ে করা।
প্রেমের একপর্যায়ে তিনিই স্ত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। মুরাদের সঙ্গে যখন কথা বলছিলাম তখন তার ব্রিটিশ স্ত্রী এসে হাজির। এ সময় মুরাদ স্ত্রীকে ডেকে তাদের এনগেজমেন্ট রিং দেখাতে বলেন। ব্রিটিশ স্ত্রী এসে হাত নাড়িয়ে এনগেজমেন্ট রিং দেখাতে লাগলেন।
মুরাদ জানান, দু’বছর আগে বিয়ে করলেও এর আগে তার মা ও শাশুড়ির কখনোই সাক্ষাৎ হয়নি। আজই তাদের মধ্যে প্রথম সাক্ষাৎ। দু’জনের ভাষা ভিন্ন হওয়ায় তারা খুব একটা কথাবার্তা বলছেন না।
টার্কিশ এয়ারলাইনসের আমন্ত্রণে মিডিয়া টুডে সদস্য হিসেবে ইস্তাম্বুল শহর এসে দিনক্ষণ গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। আমার ঘড়ির কাঁটা বাংলাদেশ সময় যখন রাত সাড়ে নয়টা, তখন ইস্তাম্বুলের সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা। সিডিউলে আজ তেমন কিছু না থাকায় এলোমেলো ঘুরে বেড়াচ্ছি।
উঁচু পাহাড়ের ওপর স্থাপিত স্টাম্বল নামের হোটেলের ক্যাম্পাসটি ছবির মতো সুন্দর। একই ক্যাম্পাসে বড় বড় শপিং মল, ফুড কোর্ট ও থিম পার্কসহ হোটেল অতিথি ও বহিরাগত পর্যটকদের ঘুরে দেখার জন্য সব ব্যবস্থাই রাখা হয়েছে। শিশুদের বিনোদনের জন্য রাস্তার মাঝখানে ট্রেনলাইন নির্মিত হয়েছে। শিশুরা মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে ট্রেনে চেপে। রাস্তার ধারে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলের বসার জন্য ছোট ছোট বেঞ্চ রাখা হয়েছে। বেঞ্চের পাশেই ফুটে আছে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল। শপিং মলের উঁচু থেকে ইস্তাম্বুল শহরের পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে গড়ে ওঠা বাড়ি-ঘরের সব দৃশ্য দেখা যায়। চলবে
এমইউ/এসআর/জেআইএম