চাঁদের আলোয় চাঁদপুর
জাগো নিউজের ফ্যামিলি ডে উপলক্ষে অগ্রগামী টিম হিসেবে ২৮ নভেম্বর অফিস শেষে রাত দশটায় অফিসের গাড়িতে ছুটলাম সদরঘাটের উদ্দেশে। জাগো নিউজের প্রধান বার্তা সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার আমাদের সঙ্গে গেলেন হাতিরঝিল পর্যন্ত। তিনি পর্যাপ্ত দিকনির্দেশনা দিলেন টিম লিডার সহাকারী বার্তা সম্পাদক মাহাবুর আলম সোহাগ ভাইকে।
গাড়িতে বসেই ফোনে যোগাযোগ করা হলো আনোয়ার ভাইয়ের সঙ্গে। তিনি সোহাগ ভাইকে নিশ্চিত করলেন, সময়মতো সদরঘাট পৌঁছে যাবেন। সদরঘাট পৌঁছে রাতের খাবারের জন্য ঢুকলাম রেস্টুরেন্টে। খাবার শেষ হতেই পৌঁছে গেলেন সিনিয়র সাব এডিটর আনোয়ার হোসেন ভাই।
আমাদের লক্ষ্য চাঁদপুরের লঞ্চ। পন্টুনে গিয়ে চা খেয়ে খুঁজে পেলাম রাত সাড়ে ১২টার লঞ্চটি। চাঁদপুর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জিএম শাহীন ভাই আগেই কেবিন বুক করে রেখেছিলেন। লঞ্চের নাম প্রিন্স অব রাসেল। লঞ্চে ওঠে কেবিনে ব্যাগ রেখে আবার পন্টুনে এলাম।
রাতের সদরঘাট। ব্যস্ততা অনেক কম। কয়েকটি লঞ্চ অনেকক্ষণ ধরে ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা ফল, রুটি, পানি ও শুকনো খাবারের পসরা নিয়ে বসে আছে। কেউ কেউ ঘুমিয়ে আছেন ঘাটের সিঁড়িতে। বুড়িগঙ্গার কোনো কোনো মাঝি নৌকায় দাঁড়িয়েই নামাজ আদায় করে নিচ্ছেন। দেখতে দেখতে আমাদের লঞ্চে ওঠার সময় হয়ে এলো।
লঞ্চে ওঠে টিকিট কটে নিলাম। ডাবল কেবিনে আমরা তিনজন। বাধ্য হয়ে একটি টিকিট বেশি কাটতে হলো। কেবিনে ঢুকে দু’টি বেডের একটি দখল করে নিলেন আনোয়ার ভাই। তিনি জানালেন, কারো সঙ্গে ঘুমাতে পারেন না। ফলে আমি আর সোহাগ ভাই এক বেডে আড়াআড়ি বসে রইলাম।
লঞ্চ বুড়িগঙ্গা সেতু পার হলে আমি আর আনোয়ার ভাই গেলাম কেবিনের সামনে। সামনে মুখোমুখি দু’টি চেয়ার পাতানো রয়েছে। চেয়ারে বসে আমরা দু’জন গল্প করছি আর আকাশ-জলের খেলা দেখছি। সোহাগ ভাই তখন শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন। রাতের নদী বড় মোহনীয় মনে হলো আমাদের কাছে। আকাশের চাঁদ দেখে দেখে গল্প চললো দু’জনের। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে কুয়াশা। শীতের রাতে বাইরে বেশিক্ষণ আর বসে থাকা সম্ভব হলো না। ইতোমধ্যে সোহাগ ভাই ওঠে গেলেন ওয়াশ রুমে।
কেবিনে ঢুকে শুয়ে পড়লেন আনোয়ার ভাই। ঘুমাচ্ছেন তিনি। আমি একা বসে আছি। জানালাটা খুলে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি। ওয়াশ রুম থেকে এসে যোগ দিলেন সোহাগ ভাই। এবার চললো সোহাগ ভাইয়ের সঙ্গে গল্প। মফস্বল সাংবাদিকতার বিভিন্ন স্মৃতি জানালাম একে অপরকে। রাজধানীর সাংবাদিকতার সঙ্গে মফস্বল সাংবাদিকতার পার্থক্য তুলে ধরলেন সোহাগ ভাই। আড্ডা দিতে দিতে পার হয়ে গেল অনেকটা সময়। আনোয়ার ভাই তখন দিব্যি আরামে ঘুমাচ্ছেন।
এমন সময় বাইরে হৈ-চৈ শুনতে পেলাম। সম্ভবত নাবিক এবং কেরানি-শুকানিদের কথোপকথন। বের হয়ে জানতে পারলাম, কুয়াশা বেড়ে যাওয়ায় দিক খুঁজে পেতে কষ্ট হচ্ছে নাবিকের। একটা পর্যায়ে এসে দূরে কিছু বাতির আলো নজরে এলো সবার। সেটাই চাঁদপুর লঞ্চঘাট। আকাশে তখন ক্ষীণ চাঁদের আলো। আমরা প্রস্তুতি নিলাম নামার জন্য।
কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই লঞ্চ ঘাটে ভিড়লো। ঘাটের মানুষের হৈ-চৈ শুনে প্রথমে কিছুই বুঝতে পারিনি। শুধু মৌমাছির গুঞ্জনের মতোই মনে হচ্ছিল। পরে অনুমান করতে পারলাম- সিএনজি, অটোরিকশা, ভ্যান ও রিকশাচালকরা কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রীদের ডাকছেন। কাছে গিয়ে বুঝতে পারলাম, তারা বলছেন- হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ, হাইমচর, মতলব, রায়পুর, রামগঞ্জ প্রভৃতি।
ঘাটে যখন নামলাম; তখন রাত পৌনে পাঁচটা। এ সময়ে কোথাও যাওয়া ঠিক হবে কি-না ভেবে আমরা ঢুকলাম একটি রেস্টুরেন্টে। ভোরের আগেই ভোরের খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিলাম কিছুক্ষণ। চারিদিকে তখন ফজরের আজানের সুমধুর ধ্বনি শোনা যাচ্ছিল। এবার তবে আশ্বস্ত হলাম- বের হওয়া যাবে ভেবে।
রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে ইজিবাইকে উঠলাম চাঁদপুর প্রেস ক্লাবের উদ্দেশে। প্রেস ক্লাবের পাশেই হোটেল গ্রান্ড হিলশা। সেখানে আমাদের জন্য রুম বুক করে রেখেছেন চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি ইকরাম চৌধুরী ভাই। ইজিবাইকে উঠে আলো-আঁধারির মাঝে ছুটে চলছি আমরা চাঁদপুরের বুক ছুঁয়ে।
এসইউ/আইআই