ঈদে হিমালয় কন্যার দেশে
হিমালয় অধ্যুষিত একটি দেশ যার সাথে উত্তরে চীন এবং দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমে ভারতের সীমান্ত রয়েছে। এর শতকরা ৮১ ভাগ জনগণই হিন্দু ধর্মের অনুসারী। বেশ ছোট আয়তনের একটি দেশ হওয়া সত্ত্বেও নেপালের ভূমিরূপ অত্যন্ত বিচিত্র। আর্দ্র আবহাওয়া বিশিষ্ট অঞ্চল, সর্বত্রই এই বৈচিত্র্যের পরিচয় পাওয়া যায়। নেপাল এবং চীনের সীমান্তজুড়ে যে অঞ্চল সেখানে পৃথিবীর সর্বোচ্চ ১০টি পর্বতের ৮টিই অবস্থিত। এখানেই পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট অবস্থিত। চারদিকে সবুজ পাহাড়, মন্দির, স্বচ্ছ হ্রদ, সারি সারি সবুজ ভ্যালি, বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ কেন্দ্র, পাহাড় কিংবা তাদের রাজপ্রাসাদগুলো। সব কিছুতেই মুগ্ধতা, যেন পৃথিবীর বুকে এক টুকরো ভূস্বর্গ। ঈদের ছুটিতে যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি দূর করতে ঘুরে আসতে পারেন নেপালের প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য থেকে।
সার্কভুক্ত দেশ হওয়ায় আমাদের দেশ থেকে নেপাল যেতে তেমন ভোগান্তি পোহাতে হয় না। নেপালের ভিসা সহজেই পাওয়া যায়। এশিয়ার যেকোন দেশের তুলনায় নেপালের ভিসা প্রসেসিং সহজ। আমাদের দেশের নেপাল অ্যাম্বেসিতে যাবেন কাঠমান্ডু এয়ারপোর্টে একটা ফরম পূরণ করলেই ওরা আপনার পাসপোর্টে সিল মেরে দেবে। আবার ওখানে গেলে নেপালে ‘অন অ্যারাইভাল’ ভিসা নেওয়া যায় নেপালের এয়ারপোর্ট থেকে। তাই আগে থেকে ভিসা না নিলেও হয়। কাগজপত্র ঠিক থাকলে ঝামেলা হবে না। ট্রানজিট ভিসা পাবেন ১৫ দিনের জন্য। নেপালি ভিসা পাবেন ৩০ দিনের জন্য।
> আরও পড়ুন- তিনবার মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ঘুরে এসেছি : এম এ মুহিত
কিভাবে যাবেন
আপনি নেপাল সরাসরি বিমানে যেতে পারেন। এতে আপনাকে ট্যুরিস্ট ভিসা সংগ্রহ করতে হবে, অর্থাৎ কাঠমান্ডু এয়ারপোর্টে একটি ফরম পূরণ করলেই ওরা আপনার পাসপোর্টে সিল মেরে দেবে। সার্কভুক্ত (বাংলাদেশ) দেশসমূহের নাগরিকদের জন্য বছরে প্রথমবার কোনো ভিসা ফি লাগবে না। আবার সড়কপথে শিলিগুড়ি থেকে কাঁকরভিটা হয়ে নেপালে যাওয়া যায়। কিন্তু সড়কপথে যেতে হলে নেপাল এবং ভারতের ভিসা নিতে হবে। তবে এ পথেও নেপালের কোনো ভিসা ফি নেই।
কখন যাবেন
নেপালে যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হলো মার্চ-এপ্রিল অথবা অক্টোবর-নভেম্বর। এ সময় অল্প গরম থাকে এবং ভালোভাবে উপভোগ করা যায়। বর্ষাকাল বা গরমকালে নেপালে পর্যটকদের জন্য ঘুরে বেড়ানোটা কঠিন হয়ে যায়। তবুও ঈদের ছুটিতে যেতে পারেন। ভ্রমণের জন্য নেপাল একরকম শান্তির দেশ। পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের পছন্দের স্থানগুলোতে ঘোরাফেরা করতে পারবেন।
যেভাবে দেখবেন
হিমালয় পর্বতের দেশ নেপালে ভ্রমণের জন্য রয়েছে অসংখ্য সুন্দর ট্যুরিস্ট স্পট। আপনি একবার এসে ঘুরে গেলে দেখতে পাবেন সেই নান্দনিক সৌন্দর্যের স্থান। এয়ারপোর্টে কাঠমান্ডুর ট্যুরিস্ট ম্যাপ বিনামূল্যে পাবেন। অবশ্যই সঙ্গে একটি ম্যাপ রাখবেন। আপনার ভ্রমণের সঙ্গী হিসেবে পাবেন বহুদেশ থেকে আগত ফরেনার। কোনো তাড়া না থাকলে ম্যাপ দেখে হেঁটে হেঁটে দেখতে পারেন। আশপাশে ঘুরতে বের হবেন ট্যাক্সিতে করে অথবা হেঁটে ঘুরতে পারেন। বাইসাইকেলও ভাড়ায় পাওয়া যায়।
যেখানে খাবেন
নেপালে খাবার খরচ আমাদের দেশের তুলনায় সস্তা। কাঠুমান্ডুর রাস্তায় বের হলেই অসংখ্য খাবারের দোকান ও রেস্টুরেন্ট দেখতে পাবেন। এছাড়া দেশি-বিদেশি অনেক হোটেল-রেস্টুরেন্ট রয়েছে সেখানে নিজের পছন্দমতো খেতে পারবেন। ‘আনাতলিয়া’তেও খেতে পারেন। এখানকার খাবারের মান ভালো।
> আরও পড়ুন- পাহাড়-ঝরনাকে বাঁচতে দিন!
কোথায় থাকবেন
বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে ট্যাক্সিওয়ালাদের হাক-ডাকে কান না দিয়ে প্রথমে এয়ারপোর্টে আপনার বুকিং করা হোটেলে উঠবেন। তাও যদি ঠিক না করা থাকে তাহলে কাঠমান্ডুর থামেল এলাকায় ট্যুরিস্টদের জন্য অনেক হোটেল রয়েছে। থামেলের রাস্তার যেদিকে তাকাবেন সেদিকেই হোটেল পাবেন। হোটেলের খরচ বিভিন্ন রকমের পাবেন। সুবিধামতো নিয়ে নিবেন। কাঠমান্ডুতে অনেক সময় লোডশেডিং হয়, দেখে নেবেন হোটেলে জেনারেটর সুবিধা আছে কিনা।
কোথায় কেনাকাটা
থামেলে অসংখ্য আউটডোর পণ্যের দোকান পাবেন। খুব সাবধান, বেশির ভাগ দোকানে যেসব ব্র্যান্ডেড পণ্য দেখবেন সবই নকল। আসল পণ্য কিনতে হলে তাদের ব্র্যান্ড শো-রুমে যাবেন। নর্থফেস, ডয়টার, ব্ল্যাক, ডায়মন্ড ইত্যাদির বড় শো-রুম আছে। শো-রুমগুলোতে জ্যাকেট, প্যান্ট, গোরটেক্সে জ্যাকেট বা জুতা ইত্যাদি যাবতীয় পণ্যের সমাহার রয়েছে। নর্থফেসের শো-রুমে ট্রেকিং বুট পাবেন। সব দোকানে কাশ্মীরি শাল পাওয়া যাবে, কাজেই বুঝে-শুনে কেনাকাটা করবেন।
এসইউ/আরআইপি