বাইক্কা বিল না দেখে ফিরবেন না
শ্রীমঙ্গল ঘুরতেই যদি যান, তাহলে বাইক্কা বিল না দেখে ফিরবেন না। কারণ ঐতিহ্যবাহী হাইল হাওরের ‘বাইক্কা বিল’ না দেখলে শ্রীমঙ্গলের কিছুই যেন দেখা হলো না। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের বাইক্কা বিলে হাজারও পাখির উপস্থিতি ও কলতান আপনাকে পুলকিত করবে।
বর্তমানে হাইল হাওরের প্রাণ বাইক্কা বিল। ‘ইউএসএইড’র অর্থায়নে প্রকল্পের মাধ্যমে বাইক্কা বিলে গড়ে তোলা হয়েছে মাছ ও পাখির স্থায়ী অভয়াশ্রম। বিলটি রক্ষণাবেক্ষণ করছে সমন্বিত রক্ষিত এলাকা সহ-ব্যবস্থাপনা প্রকল্প আইপ্যাক। বাইক্কা বিলে মাছের অভয়াশ্রম গড়ে তোলায় দেশের বিলুপ্তপ্রায় রুই, গইন্না, কালিবাওস, দেশি সরপুঁটি, পাবদা, আইড়, গুলশা, চিতলসহ ১৫-২০ প্রজাতির মাছ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে।
নানা জাতের মাছের সঙ্গে রয়েছে হাজারো কচুরিপানা, শাপলা আর পদ্মফুল। বিলের পানিতে সকাল-সন্ধ্যা চলে রঙিন ফড়িংয়ের বিরতিহীন ওড়াউড়ি। বৃষ্টিহীন উষ্ণ দিনে বিলের ফুলের পাশে আসে একদল পতঙ্গ। প্রকৃতিপ্রেমীর চোখে পাখিই এই অভয়াশ্রমের সেরা প্রাণি। শীত মৌসুমে এখানে আসে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি। বিলের উল্লেখযোগ্য পাখি- পানকৌড়ি, কানিবক, ধলাবক, গোবক, ধুপনিবক, রাঙ্গাবক, দলপিপি, নেউপিপি, পানমুরগি, বেগুনি কালেম, কালোমাথা কাস্তেচরা, শঙ্খচিল, পালাসি, কুড়া, ঈগল। শীতের অতিথি হয়ে এই বিলে আসে অনেক জাতের সৈকত পাখি। এদের মধ্যে আছে গেওয়ালা বাটান, মেটেমাথা চিটি, কালাপঙ্খ ঠেঙ্গী, ধলা বালিহাঁস, পাতি সরালি, রাজসরালি, মরচেরং, ভূতিহাঁস, গিরিয়াহাঁস, ল্যাঙ্গাহাঁস, গুটি ঈগল, সাপ-ব্যাঙ এবং আরও নানা প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ। এছাড়া বাইক্কা বিলে পাওয়া যায় সুস্বাদু মাখনা, শালুকসহ নানা স্বাদের, নানা বর্ণের জলজ ফল।
বামে সবুজে ঘেরা পানি, ডানেও পানি। মাঝে সরু রাস্তা। কিছুদূর গেলেই দেখা মেলে বড় শিংওয়ালা ষাঁড়ের। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে এখানকার মানুষগুলো অনেক বেশি ভালো। তবে বিলে অনেক সাপ রয়েছে, তাই একটু সাবধান হয়েই হাঁটা উচিত।
পাখির স্থায়ী অভয়াশ্রম হওয়ার কারণে পুরো বছরই পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে বাইক্কা বিল। পর্যটকদের সুবিধার্থে পাখি দেখার জন্য বাইক্কা বিলে পানির উপরে তৈরি করা হয়েছে তিনতলা বিশিষ্ট একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। এ টাওয়ার থেকে শক্তিশালী দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে বিলের পাখি কাছ থেকে দেখার সুব্যবস্থা রয়েছে। ইচ্ছে করলে আপনি স্বল্পমূল্যে বিলে নৌকাভ্রমণ করতে পারেন। প্রচণ্ড গরমে পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে বসলে শীতল বাতাস শরীরে কাঁপন তুলবে মুহূর্তেই।
বাইক্কা বিলের ওয়াচ টাওয়ারের উপর বসে সূর্য ডোবা দেখা যায়। কী সুন্দর করে সূর্যটা আস্তে আস্তে টুপ করে পানির মধ্যে পড়ে যায়। বাইক্কা বিল একদম প্রকৃতির ভেতর ঢুকিয়ে দেয়। একবার ঢুকে গেলে আর বের হতে ইচ্ছে করবে না। প্রকৃতিপ্রেমি এবং পাখির ছবি তুলতে যারা ভালোবাসেন, তাদের বাইক্কা বিল আসতেই হবে।
কখন যাবেন
বাইক্কা বিল একেক ঋতুতে একেক রূপ ধারণ করে। সব ঋতুতেই সুন্দর এই হাইল হাওরে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় ভ্রমণের জন্য সেরা। এ সময় এখানে প্রচুরসংখ্যক পাখির কলকাকলিতে মুখর থাকে।
প্রস্তুতি
যেহেতু অনেকটা দূর হেঁটেই যেতে হয়, তাই সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি আর শুকনা খাবার নিয়ে যাওয়া ভালো।
গাইড
হাজীপুর বাজারে গাইড রয়েছে। আপনি চাইলে গাইডের সাহায্যও নিতে পারেন। গাইড আপনাকে পুরো বাইক্কা বিল দেখতে সাহায্য করবে।
যেভাবে যাবেন
বাইক্কা বিলে যেতে হলে শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার সড়ক ধরে কালাপুর বাজার থেকে একটু সামনে এগোলেই বরুনা-হাজীপুর পাকা রাস্তা। এ রাস্তায় প্রবেশ করে যেতে হবে হাজীপুর বাজারে। বাজারটি ‘ঘাটের বাজার’ নামে পরিচিত। সেখান থেকে মোটরসাইকেলে বা পায়ে হেঁটে প্রায় ৩-৪ কিলোমিটার দূরে গেলে বাইক্কা বিল।
এসইউ/এমএস