ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ভ্রমণ

তরুণদের অনুপ্রেরণা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

সাদ্দাম হোসাইন | প্রকাশিত: ১১:১৩ এএম, ১৮ জুলাই ২০১৭

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নতুন স্থানে ভিন্ন আঙ্গিকে মহান ত্যাগের নানা ঘটনা চিত্রায়িত হয়েছে। শোষণ, বঞ্ছনা আর বঞ্চিত মানুষের মুক্তির জয়ধ্বনি বারবার ফুটে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে।যা তরুণদের অনুপ্রেরণায় অনন্য ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশের গৌরবদীপ্ত ইতিহাস বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিকট তুলে ধরতে ধারক ও বাহক হিসেবে  নিরলস কাজ করে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরটি। জাদুঘরটি পরিদর্শন করে বিস্তারিত জানাচ্ছেন সাদ্দাম হোসাইন-

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের চেতনা অব্যাহত রাখতে এবং বাঙালির গৌরবদীপ্ত সাফল্যের ধারা সব শ্রেণিপেশার মানুষের মাঝে প্রবাহিত করতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ইতিহাস সংরক্ষণ করছে। তাই ফেলে আসা দিনগুলোর জীবন্ত সমাধি মনে হবে জাদুঘরটি।

jadu1

আটজন ট্রাস্টির উদ্যোগে ১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ রাজধানীর সেগুনবাগিচায় একটি ভবনে বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। প্রতিষ্ঠার পর জাদুঘরে সংগৃহীত মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত নির্দশন সামগ্রীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় এবং দর্শনার্থীদের ব্যাপক সাড়া পাওয়ায় পরিসর বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। এরপর স্থায়ীভাবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর স্থাপনের লক্ষ্যে ২০০৮ সালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এফ-১১/এ এবং ১১/বি স্থানে সরকারের কাছ থেকে ০.৮২ শতাংশ (প্রায় ১ একর) জায়গা কিনে নেন আটজন ট্রাস্টি। এছাড়া বিভিন্নভাবে প্রাপ্ত অনুদানের অর্থ নিয়ে কাজ শুরু করেন।

jadu2

২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক জুরি বোর্ডের মাধ্যমে স্থাপত্য নকশা আহ্বান করা হলে ৭০টি নকশার মধ্যে স্থপতিদম্পতি তানজিম ও ফারজানার স্থাপত্যকর্মটি চূড়ান্ত হয়। ওই স্থানে ২০১১ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১২ সালে ভবনের নিচে তিনটি বেজমেন্ট নিয়ে ৯ তলা ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। দুই বিঘার উপর নির্মিত ভবনটির আয়তন ১ লক্ষ ৮৫ হাজার বর্গফুট। টানা ৪ বছর নির্মাণ কাজ শেষে চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চারটি গ্যালারি, পাঠাগার, আর্কাইভ, স্টোর, অডিটোরিয়াম, উন্মুক্তমঞ্চ, ক্যান্টিন, গিফট কর্নার নিয়ে বেসরকারিভাবে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক জাদুঘর দেশে এটিই সর্বপ্রথম।

জাদুঘরটিতে প্রবেশ পথে রয়েছে স্থপতি তানজিম হাসানের নকশায় নির্মিত ‘শিখা অম্লান’। ভাষা শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মাণ করা হয়েছে শিখাটি। এর একটু সামনেই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত একটি হেলিকপ্টার ও একটি যুদ্ধবিমান। এরপর ২০ টাকা মূল্যের টিকিট নিয়ে জাদুঘরে সাজানো মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত ৪টি গ্যালারিতে পরিদর্শন করতে পারবেন দর্শনার্থীরা। ৫ বছরের কমবয়সী শিশুর জন্য জাদুঘরটি উন্মুক্ত।

jadu3

এর গ্যালারিগুলো সাজানো হয়েছে ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন নামকরণে। প্রথম গ্যালারি সাজানো হয়েছে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট নিয়ে। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংগ্রাম’।

দ্বিতীয় গ্যালারি সাজানো হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ও ২৫ মার্চ মধ্যরাতে লোমহর্ষক ঘটনার আদলে অন্ধকারাচ্ছন্ন কক্ষে পাক বাহিনীর একটি সচল জীপসহ নানা উপকরণ দিয়ে। কক্ষটির ভেতরের দৃশ্যটি দর্শনার্থীদের ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের রাতে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। গ্যালারির নাম দেওয়া হয়েছে ‘আমাদের অধিকার, আমাদের ত্যাগ’। এতে একটি দুর্লভ টাইপরাইটারসহ রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে তৎকালীন প্রবাসী সরকারের নানা কার্যক্রমের প্রামাণ্যচিত্র।

jadu4

তৃতীয় গ্যালারি সাজানো হয়েছে ৯ মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধে ঘটে যাওয়া গুম, হত্যা, ধর্ষণসহ অত্যাচার-নিপীড়নের তথ্য ও প্রামাণ্যচিত্র দিয়ে । এর নাম দেওয়া হয়েছে  ‘আমাদের যুদ্ধ, আমাদের মিত্র’। যুদ্ধের সময় লাখ লাখ বাঙালি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নেওয়ার সময় তাদের দুঃখ-দুর্দশাগুলো এ গ্যালারিতে স্থান পেয়েছে। এছাড়া রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত বিভিন্ন অস্ত্র, দূরবীক্ষণ যন্ত্র, যুদ্ধের পোশাক, যুদ্ধে ব্যবহৃত প্রকৃত গাড়িসহ বিভিন্ন নিদর্শন।

চতুর্থ এবং শেষ গ্যালারি সাজানো হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত সাফল্য এবং এর মূল্যবোধ রক্ষায় বিশিষ্টজনের হাতের লেখা চিঠি ও ডায়েরিসহ মূল্যবান প্রবন্ধ দিয়ে। এ গ্যালারির নাম দেওয়া হয়েছে ‘আমাদের জয়, আমাদের মূল্যবোধ’।

গ্যালারি ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা, প্রকাশনা, ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনী, তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানো, মৌখিক ইতিহাস সংগ্রহসহ বহুমুখী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে জাদুঘরটি। তবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে দর্শনার্থীদের সঙ্গে আনা ব্যাগ ও ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশ এবং জোরে শব্দ করা নিষেধ।

এসইউ/এমএস

আরও পড়ুন