তিনবার মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ঘুরে এসেছি : এম এ মুহিত
জীবনের শেষ শক্তিটুকু খরচ করে মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে দুর্গম পর্বতের শ্বেতশুভ্র চূড়া জয় করে পর্বতারোহীরা। তারা কেন এই ঝুঁকি নিয়ে পর্বতে যান তা হয়তো বলে বোঝাতে পারবেন না। তবে পর্বত তার আরোহীদের এক মায়াবী ভালোবাসায় ডাকে। এই ডাক হয়তো কানে শুনতে পাওয়া যায় না, হৃদয় দিয়ে শুনতে হয়। যা শুনেই তারা মৃত্যুকে পেছনে ফেলে ছুটে যান পর্বতে। বাংলাদেশের তেমনই এক পর্বতারোহী এম এ মুহিত। যিনি দু’বার লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়েছেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া মাউন্ট এভারেস্টে। দেশকে পরিচিত করেছেন পর্বতারোহী জাতি হিসেবে।
দেশসেরা পর্বতারোহী এম এ মুহিতের সঙ্গে সম্প্রতি কথা হয় জাগো নিউজের। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইকরামুল হাসান শাকিল।
জাগো নিউজ : হিমালয়ের মেরা পর্বত শিখরে বাংলাদেশের পতাকা উঠিয়েছেন সবশেষ। এই পর্বত তো আপনি দ্বিতীয়বারের মতো আরোহণ করলেন?
এম এ মুহিত : হ্যাঁ, আমি প্রথমবার ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে দলনেতা হিসেবে মহালনগর হিমালয় অঞ্চলের মেরা পর্বতশৃঙ্গ জয় করি। এরপর আমরা বাংলাদেশ থেকে ২০১৬ সালের ৪ অক্টোবর নেপালের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করি। ৭ অক্টোবর হিমালয়ের ৯ হাজার ৩১৭ ফুট উঁচু লুকলা বিমানবন্দর থেকে ট্রেনিং শুরু করে প্রায় ৫০ কিলোমিটার হেঁটে ১২ অক্টোবর বেস-ক্যাম্পে (১৬ হাজার ৫৫০ ফুট) পৌঁছাই। ১৫ অক্টোবর মেরা শীর্ষে আরোহণ করি। পর্বতশৃঙ্গে আরোহণ করে দেশের পতাকা মেলে ধরি। এ দলে সদস্য ছিলেন কাজী বাহলুল মজনু, সাদিয়া সুলতানা ও শায়লা পারভিন।
জাগো নিউজ : পর্বতারোহণ করতে গিয়ে আপনি কোনো বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন?
এম এ মুহিত : আমি তিনবার একদম মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ঘুরে এসেছি। বলতে পারেন, আমি এখন বোনাস বেঁচে আছি। সামনেও হয়তো আরো ভয়ংকর বিপদে পড়তে পারি। তাই বলে তো আর সেই ভয়ে পর্বতে যাওয়া বন্ধ করবো না। যতদিন পর্বতে যাওয়ার মতো শক্তি শরীরে আছে; ততদিন পর্বতে যাবো।
জাগো নিউজ : ঘোরাঘুরি থেকেই তো পাহাড়ে যাওয়া। সেই ঘোরাঘুরির আগ্রহটা কীভাবে হলো?
এম এ মুহিত : ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতি আমাকে টানে। দিগন্তজোড়া সবুজ ফসলের মাঠ, বন-জঙ্গল, গাছ, পাখি, নদী, নদীতে বয়ে চলা পালতোলা নৌকা ইত্যাদির সৌন্দর্য তখন থেকেই উপভোগ করি এবং এখনো করছি। প্রকৃতির কোনো এক অমোঘ আকর্ষণে বারবার ছুটে গেছি এবং এখনো যাচ্ছি। প্রচণ্ডভাবে উপভোগ করি সাঁতার কাটা, বৃষ্টিতে ভেজা, নৌকা বাওয়া ও গাছে চড়া। ছেলেবেলা থেকেই বিভিন্ন খেলাধুলা করতাম। মাঠের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল সবসময় এবং এখনো আছে। শরীরটা ছিল রবীন্দ্রনাথের ‘আমার ছেলেবেলা’র মতো খুব বাজে রকমের ভালো।
জাগো নিউজ : পর্বতারোহণ ছাড়া কি অন্য কোনো খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন?
এম এ মুহিত : হ্যাঁ, আমি নিয়মিত ক্রিকেট খেলতাম। এইচএসসি পাসের পর আমরা বন্ধুরা মিলে নবাগত ক্রিকেট ক্লাব নামে একটি ক্লাব গঠন করি। পরবর্তীতে আমাদের এলাকার পুরনো অ্যামেচার ক্রিকেট ক্লাবের সঙ্গে একীভূত হয়ে যাই। অ্যামেচার ক্রিকেট ক্লাবের অধিনায়ক প্রিয় বাসুদার সঙ্গে প্রতিদিন সকালে ওসমানী উদ্যানে গিয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ব্যায়াম করতাম, যা এখনো ধরে রেখেছি। ক্রিকেট খেলার জন্য তখন বিভিন্ন জায়গায় যেতাম।
জাগো নিউজ : পর্বতারোহণে মৃত্যুর ঝুঁকি আছে। এ কারণে পরিবারের বাধার সম্মুখীন হননি?
এম এ মুহিত : প্রথম প্রথম তো পরিবারের বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছেই। তবে আমি তখন তাদের বোঝাতাম যে, আমার ভালো লাগার কাজগুলো আমি করতে চাই। তাছাড়া আমি এমন কোনো কাজ করছি না যাতে তাদের সম্মান ক্ষুণ্ন হয়। আমি আমার ভালো লাগার বিষয়গুলোকে যথেষ্ট প্রাধান্য দেই। ইচ্ছাগুলো পূরণ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করি। যখন কোনো মানুষ তার ভালো লাগা বা ইচ্ছাগুলো পূরণ করতে পারে তখন তার আত্মবিশ্বাস বাড়ে।
জাগো নিউজ : প্রথম যখন ভ্রমণ করতেন; তখন খরচ কীভাবে সংগ্রহ করতেন?
এম এ মুহিত : তখন কয়েকটা প্রাইভেট টিউশনি করাতাম। সেখান থেকেই আমার ভ্রমণের খরচ মেটাতাম। তাছাড়া আমি সবসময় মাটির ব্যাংকে টাকা-পয়সা জমাতাম এবং ভ্রমণে যাওয়ার সময় সেই ব্যাংক ভাঙতাম। এখনো আমি ভ্রমণের উদ্দেশ্যে মাটির ব্যাংকে টাকা-পয়সা সঞ্চয় করি। তখনকার ভ্রমণ ছিল আর সবার মতোই বাস-ট্রেন বা লঞ্চে চড়ে পরিচিত কোনো জায়গায় যাওয়া। অফ ট্রেইলে ভ্রমণ তখনো শুরু হয়নি।
জাগো নিউজ : পর্বতারোহী হওয়ার ক্ষেত্রে আপনার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট কী ছিলো?
এম এ মুহিত : পর্বতারোহী হওয়ার ক্ষেত্রে আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট ছিলো ইনাম আল হকের সঙ্গে পরিচয় হওয়া। ১৯৯৭ সালের এপ্রিল মাসে পরিচয় হয় সদ্য অ্যান্টার্কটিকা ফেরত অভিযাত্রী ইনাম আল হকের সঙ্গে। তার সঙ্গে পরিচয়ের পর থেকে বদলে যায় আমার জীবন সম্পর্কে ধারণা। তিনি আমাকে কাছে টেনে নেন এবং ধৈর্য নিয়ে পাখি, প্রকৃতি, অ্যাডভেঞ্চার, ফটোগ্রাফি ছাড়াও সততা, ভদ্রতা, মানুষের সঙ্গে ব্যবহার ইত্যাদি জীবনের নানা বিষয়ে জ্ঞান দিতে থাকেন। আমিও মন্ত্রমুগ্ধের মতো তার কথা শুনতে থাকি এবং অনুগত ছাত্রের মতো তার শিক্ষা আত্মস্থ করার চেষ্টা করি। আমি বুঝতে পারতাম, আমার মধ্যে একটা শক্তি লুকিয়ে আছে। কিন্তু কীভাবে তা কাজে লাগাতে হবে তা জানতাম না। ইনাম আল হক তার দূরদৃষ্টি দিয়ে আমার মধ্যে দেখতে পান বড় কিছু করার ক্ষমতা এবং তিনি তা বের করে আনতে সক্ষম হন। তিনি একজন মেনটর। তিনি আমাদের স্বপ্ন দেখিয়েছেন এবং স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আমাদের দেশে ইনাম আল হকের মতো মেনটরের খুবই প্রয়োজন।
জাগো নিউজ : আপনার প্রথম পাহাড় আরোহণ কোনটি?
এম এ মুহিত : ১৯৯৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রোজার ঈদের ছুটিতে আমরা ১২ বন্ধু যাই সিলেটে। তখন মৌলভীবাজার জেলার মাধবকুণ্ড ঝরনার ২০০ ফুট উপরে যেখান থেকে পানি নিচে গড়িয়ে পরে সেখানে উঠে আমরা সবাই বেশ রোমাঞ্চিত হই। সেটি ছিল আমার জীবনে প্রথম কোনো পাহাড় বেয়ে ওঠা। এরপর একই বছরের অক্টোবর মাসে দুর্গাপূজার ছুটিতে ১০ বন্ধু মিলে যাই বান্দরবান-রাঙ্গামাটি-কক্সবাজার-চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অবস্থিত চন্দ্রনাথ পাহাড়ে সবার আগে এক ঘণ্টায় উঠে বেশ গর্ব হচ্ছিল। তারপর থেকে পেয়ে বসে পাহাড়ে চড়ার নেশা। ২০০১ সালে পাখি দেখতে ইনাম আল হকের সঙ্গে বান্দরবানের এক পাহাড়ে ট্রেকিং করি। এরপর থেকে প্রতি বছরে ২-৩ বার করে বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি যেতে থাকি এবং আমাদের দেশের উচুঁ উচুঁ পাহাড় চূড়াগুলোতে চড়তে লাগলাম।
জাগো নিউজ : দেশের বাইরের পাহাড়ে যাওয়ার শুরুটা কখন?
এম এ মুহিত : আমাদের দেশের সর্বোচ্চ চূড়ায় যখন ওঠা হয়ে গেল, তখন আমাদের ইচ্ছা জাগল আরও উচুঁতে ওঠার। আমাদের পাশের দেশগুলোতেই পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু উঁচু বিখ্যাত সব পর্বতগুলোর অবস্থান। আর পর্বতেই যদি উঠতে হয়, তাহলে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্ট নয় কেন? এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে অ্যান্টার্কটিকা ও উত্তর মেরু অভিযাত্রী একমাত্র বাংলাদেশি ইনাম আল হকের নেতৃত্বে ২০০৩ সালে গঠন করা হয় বাংলাদেশ এভারেস্ট টীম-১ এবং পরবর্তীতে বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব (বিএমটিসি)। এই ক্লাব গঠনের প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য এভারেস্টশৃঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো। শুধু দল গঠন করলেই তো আর হলো না, পর্বতারোহণের জন্য এর অ-আ, ক-খ শিখতে হয়, কলাকৌশলগুলো রপ্ত করতে হয়। সেই প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবেই ২০০৪ সালের মে মাসে অভিযাত্রী ইনাম আল হকের নেতৃত্বে এভারেস্টের প্রবেশদ্বার বেসক্যাম্পে গিয়েছিলাম আমরা ৬ বাংলাদেশি। নেপালের লুকলা থেকে ট্রেইলে আমাদের পথ চলা শুরু হয়। ১০ দিনে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ হেঁটে আমরা প্রায় ১৭ হাজার ৬০০ ফুট উচ্চতায় বেসক্যাম্পে পৌঁছাই।
জাগো নিউজ : পর্বতারোহণের প্রস্তুতি হিসেবে তো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন-
এম এ মুহিত : হ্যাঁ। এভারেস্টকে কাছ থেকে দেখার পর তাতে চড়ার ইচ্ছা আরও প্রবল হল। এখন প্রয়োজন পর্বতারোহণের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে কীভাবে বরফ ও পাথরের ঢালে আরোহণ করতে হয় তার প্রশিক্ষণ। ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সেশনে আমি মৌলিক পবর্তারোহণ প্রশিক্ষণ নিতে ভারতের দার্জিলিংয়ে অবস্থিত হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে যাওয়ার জন্য তৈরি হতে থাকি। সফলতার সঙ্গে মৌলিক পবর্তারোহণ প্রশিক্ষণ শেষ করে একই প্রতিষ্ঠান থেকে ২০০৫ সালের মার্চ মাসে উচ্চতর পবর্তারোহণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি।
জাগো নিউজ : এই প্রশিক্ষণের খরচ তো ব্যয়বহুল। তাহলে কীভাবে তখন টাকা সংগ্রহ করেছিলেন?
এম এ মুহিত : তখন কোর্সের ফি ছিলো ২০০ ডলার। কোর্সের পুরো ফি জোগাড় না হওয়ায় অনিশ্চয়তায় পরে যাই। আমার সঞ্চয়ে ছিল অর্ধেক। বাকি অর্ধেক নিয়েই চিন্তা। যাওয়ার আগে তারও সমাধান হয়ে গেল। প্রতি মাসের তৃতীয় বুধবার ইনাম আল হকের বাসায় যারা ট্রেকিং করতে পছন্দ করে তাদের একটা আড্ডা হয়। সেদিনের সেই আড্ডায় যারা এসেছিলেন তারা সবাই মিলে সাত হাজার টাকা তুলে আমাকে দিলেন। আর তাতেই আমার ট্রেনিংয়ে যাওয়া চূড়ান্ত হয়ে যায়। আমি বিশ্বাস করি, সৎ পথে থেকে কেউ যদি কোনো ভালো কাজ করার জন্য নিবেদিত থাকে তবে অর্থ কোনো সমস্যাই নয়। আমাদের সমাজে এমন অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আছে যারা নিঃস্বার্থভাবে এগিয়ে আসবেন।
জাগো নিউজ : কোন সময়টা পর্বতাভিযানের উপযুক্ত সময়?
এম এ মুহিত : হিমালয়ে প্রতি বছরে দুইটি মৌসুমে পর্বতাভিযান পরিচালনা করা হয়। একটি হল এপ্রিল-মে (প্রি মনসুন) মাসে, আরেকটি সেপ্টেম্বর-অক্টোবর (পোস্ট মনসুন) মাসে। ২০০৭ সাল থেকে আমি প্রতি বছরই দু’বার করে হিমালয়ে যাচ্ছি পর্বতারোহণের জন্য। কোনো মওসুমই বাদ দিচ্ছি না।
জাগো নিউজ : আপনার অভিযানগুলো সম্পর্কে বলুন-
এম এ মুহিত : আমি ২০০৭ সালের মে মাসে নেপালের অন্নপূর্ণা হিমালয় অঞ্চলের চুলু ওয়েস্ট পর্বতশৃঙ্গ অভিযানে অংশগ্রহণ এবং ২০,৯০০ ফুট পর্যন্ত আরোহণ এবং একই বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে দলনেতা হিসেবে মহালনগর হিমালয় অঞ্চলের মেরা পর্বতশৃঙ্গ জয় করি। ২০০৮ সালের মে-জুন মাসে অন্নপূর্ণা হিমালয় অঞ্চলের সিংগু চুলি পর্বতশৃঙ্গ জয় করি এবং ওই বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে বিশ্বের অষ্টম উচ্চতম পবর্তশৃঙ্গ মানাসলু অভিযানে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সাত হাজার মিটার উচ্চতায় উঠি। বিরূপ আবহাওয়ার জন্য অভিযান সফল হয়নি। ২০০৯ সালের মে মাসে দলনেতা হিসেবে খুম্বু হিমালয় অঞ্চলের লবুজে পর্বতশৃঙ্গ এবং ওই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর নেপাল-তিব্বত সীমান্তে অবস্থিত বিশ্বের ষষ্ঠ উচ্চতম পবর্তশৃঙ্গ চো ইয়ো জয় করি। যা ছিল কোনো বাংলাদেশি পর্বতারোহীর প্রথম আট হাজার মিটারের কোন পর্বতশৃঙ্গ জয়। চো ইয়ো পর্বতশৃঙ্গ জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ৮,০০০ মিটার পর্বতারোহীদের সম্মানজনক এলিট ক্লাবে প্রবেশ করে। ২০১০ সালের এপ্রিল-মে মাসে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট অভিযানে অংশগ্রহণ করে ২৩,০০০ ফুট পর্যন্ত আরোহণ করি। বিরূপ আবহাওয়ার জন্য অভিযান সফল হয়নি।
আমার এভারেস্ট অভিযান সফল না হলেও আমি কিন্তু দমে যাইনি, হতাশ হয়ে পড়িনি। দেশে ফিরে নতুন উদ্যমে আবার সবকিছু শুরু করি। ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে হিমালয়ের একটি অবিজিত শিখরে বাংলাদেশ-নেপাল যৌথ পর্বতাভিযানে বংলাদেশ দলের নেতা হিসেবে নেপাল-বাংলাদেশ মৈত্রী শিখর জয় করি। ২০১১ সালের ২১ মে নর্থফেস (তিব্বত) দিয়ে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট জয় করি। একই বছর ১২ অক্টোবর বিশ্বের অষ্টম উচ্চতম পবর্তশৃঙ্গ মানাসলু জয় করি। ২০১২ সালের ১৯ মে নেপাল (সাউথ ফেস) দিয়ে দ্বিতীয়বারের মত এভারেস্ট এবং একই বছরের অক্টোবর মাসে দলনেতা হিসেবে খুম্বু হিমালয়ের ইমজাৎসে পর্বতশৃঙ্গ জয় করি। ২০১৩ সালের এপ্রিল-মে মাসে পৃথিবীর ৩য় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজংঘা অভিযানে অংশগ্রহণ করে ২৫,০০০ ফুট পর্যন্ত আরোহণ করি। তবে বিরূপ আবহাওয়ার জন্য অভিযান সফল হয়নি। একই বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে পৃথিবীর ১৪তম পর্বতশৃঙ্গ শিশাপাংমা অভিযানে অংশগ্রহণ করে ২১,০০০ ফুট পর্যন্ত আরোহণ করি; তবে বিরূপ আবহাওয়ার জন্য অভিযান সফল হয়নি। ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে খুম্বু হিমালয়ের কেয়াজো-রি পর্বতশৃঙ্গ অভিযানে অংশগ্রহণ করে ২০,০০০ ফুট পর্যন্ত আরোহণ করি। তবে বিরূপ আবহাওয়ার জন্য অভিযান সফল হয়নি। ২০১৫ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে দলনেতা হিসেবে খুম্বু হিমালয়ের কেয়াজো-রি পর্বতশৃঙ্গ জয় করি। একই বছরের নভেম্বর মাসে আমা-দাব্লাম পর্বতশৃঙ্গ অভিযানে অংশগ্রহণ করে ১৮,৩৭৫ ফুট পর্যন্ত আরোহণ করি। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে দলনেতা হিসেবে মহালনগর হিমালয় অঞ্চলের মেরা পর্বতশৃঙ্গ জয় করি। এভারেস্টের মত ৮,০০০ মিটারের উপরে মাথা উঁচু করে থাকা শৃঙ্গ পৃথিবীতে আছে মাত্র ১৪টি। দু’বার এভারেস্টসহ ৮,০০০ মিটারের অধিক উচ্চতার তিনটি পর্বতশৃঙ্গ (এভারেস্ট, চো ইয়ো, মানাসলু) চার বার জয় করি। এছাড়াও আমি ৬টি ছয় হাজার মিটারের পর্বতশৃঙ্গ সাতবার আরোহণ করেছি।
জাগো নিউজ : আপনি এপর্যন্ত কতগুলো অভিযান চালিয়েছেন?
এম এ মুহিত : বাংলাদেশের পর্বতারোহীদের মধ্যে সর্বাধিক ১৮টি পর্বতাভিযানে অংশগ্রহণ করেছি।
জাগো নিউজ : পর্বতাভিযান তো ব্যয়বহুল, এতে অর্থ কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায় না?
এম এ মুহিত : যদিও পর্বতাভিযান একটি ব্যয়বহুল ক্রীড়া। পর্বতাভিযানে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খরচও অনেকগুণ বেড়ে যায়। আমি আগেও বলেছি যে, সৎ পথে থাকলে ভালো কাজের জন্য অর্থ কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায় না।
এসইউ/এমএস