ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ভ্রমণ

সাগরকন্যা কুয়াকাটায় শিক্ষা সফর

প্রকাশিত: ০৭:১২ এএম, ১৮ মার্চ ২০১৭

নিয়মের বেড়াজাল আর যান্ত্রিক চাপের মধ্যে শিক্ষা সফরের আয়োজন স্বস্তির শীতল বাতাস বইয়ে দেয় মনে। বসন্তের আগমনে শীতের জীর্ণতা কাটিয়ে প্রকৃতি ফুলে ফুলে সেজে উঠেছে। সে সময়ে মাদারীপুরের কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ইতিহাস বিভাগের আয়োজনে শিক্ষা সফর অনুষ্ঠিত হয় সাগরকন্যা কুয়াকাটায়।

১৪ মার্চ সকাল ৬টায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা হাজির হতে থাকেন কলেজের সামনে। বাসের অপেক্ষা কাটিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই বাস এসে পৌঁছায়। সবাই বাসে ওঠার প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। বাস ছাড়তেই উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে সবার মাঝে। জানালা গলে বাতাসে শো শো শব্দে এগিয়ে চলছে গাড়ি। সঙ্গে আড্ডা আর হাসি-ঠাট্টার উৎসব শুরু হয়ে যায় বাসের মধ্যে।

kuakata

হঠাৎ করে বেসুরো গলায় গান ধরেন বিভাগের শিক্ষক মো. রাহাত হোসেন। অন্যদিকে জানালায় দৃষ্টি মেলে দিগন্ত জোড়া প্রকৃতি দেখেন শেষবর্ষের শিক্ষার্থী উম্মে নাসরিন আক্তার নিপা। গ্রামীণ জনপদ, ফসলের খেত আর নদী পেরিয়ে গাড়ি পৌঁছে যায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে সকালের নাস্তা শেষে রওয়ানা দেওয়া হয় কুয়াকাটার দিকে।

বেলা ১২টার মধ্যে গাড়ি পৌঁছায় কুয়াকাটায়। সেখানে পৌঁছানোর পর সবাই মুগ্ধ সমুদ্র দেখে। বিশ্রামের জন্য ওঠেন হোটেলে। ছাত্রছাত্রীদের জন্য আলাদা দুটি কক্ষ। সেখানেই ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম সবার উদ্দেশে বলেন, ‘যে যেখানেই থাকো, দুপুর ২টার মধ্যে ‘খাবার ঘর’ নামের হোটেলে চলে আসবে।’

kuakata

শিক্ষার্থীদের মন বেশিক্ষণ আটকে থাকেনি হোটেলে। সমুদ্রের লোনা জলে ঝাপিয়ে পড়ে সবাই। তাদের মিতালি এখন জলের সঙ্গে। কখন যে ২টা বেজে গেলো বুঝতেই পারেনি কেউ। সামুদ্রিক মাছের স্বাদ সত্যিই মনে রাখার মতো। দুপুরের খাবার গ্রহণ শেষে সবার চোখে যখন ক্লান্তির ঘোর, তখন শেষবর্ষের শিক্ষার্থী উম্মে তানজুম আক্তার নাবিলা সবাইকে বৌদ্ধমন্দির ও রাখাইন পল্লি ঘুরে দেখার আমন্ত্রণ জানান।

আঠারোশ’ শতকে আরাকান থেকে বিতাড়িত রাখাইনদের মিষ্টিপানির ‘কুয়া’ বা ‘কুপ’ ছুঁয়ে দেখে কেউ কেউ। হঠাৎ করেই ডাক পড়ে ছবি তোলার জন্য। প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতার একটি বুদ্ধমূর্তি আর পাশের কুয়ার সঙ্গে সবার ছবি তোলা হয়। তারপর সূর্য ডুবে যাওয়ার দৃশ্য দেখতে সবাই আবার সমুদ্রসৈকতে হাজির।

kuakata

কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত মাত্র ২০ কিলোমিটার স্থানজুড়ে অবস্থান করছে। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সমুদ্রসৈকত ও পর্যটনকেন্দ্র। যা পটুয়াখালী জেলায় অবস্থিত। এখানে একই স্থানে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। কুয়াকাটা নামটি ‘কুয়া’ বা ‘কুপ’ শব্দ থেকে উৎপত্তি হয়েছে। সমুদ্র উপকূলবর্তী স্থান হওয়ায় এখানে লোনা জলের আধিক্য ছিল। তখন রাখাইনদের মিষ্টি পানির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এ অবস্থায় তারা একাধিক কুয়া খনন করতে থাকেন। একপর্যায়ে এই অঞ্চলটির নাম হয়ে যায় কুয়াকাটা।

kuakata

এখানকার লেবুচর ও ফাতরার বন থেকেই শুরু সুন্দরবনের সীমানা। সমুদ্রে নেমে বামে গঙ্গামায়ার চর। বিশেষ করে বালুকাময় সৈকতের উপর হাজার হাজার লাল কাকড়ার বিচরণ আমাদের মোহিত করে। জেলেপল্লি ঘুরে উপভোগ করা যায় তাদের জীবন যাপন। একদিকে চোখ রাখলে কেবল সাগর আর জলরাশি। অন্যদিকে ঝাউগাছের সারি। ঝাউগাছের ঝিরিঝিরি পাতার ফাঁক দিয়ে সূর্যাস্ত যেন এক ভিন্নমাত্রা যোগ করে।

kuakata

রাতের সৌন্দর্য দেখে আমরা মুগ্ধ। সবমিলিয়ে শিক্ষাজীবনে কুয়াকাটায় কাটানো একটা দিনের স্মৃতি মনের ক্যানভাসে অম্লান হয়ে থাকবে। সফর শেষে রাতের মিষ্টি চাঁদকে সঙ্গী করে পথচলা বারবার আবেগাপ্লুত করে। গাড়িতে উঠে কেউ কেউ এক-দুই কলি অবিন্যস্ত গানের সুর তোলে। এরপর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নাচ, গান, কবিতা, কৌতুকে ভরা আনন্দ-উল্লাসেই গাড়ি এসে থামে কলেজের ইতিহাস বিভাগের সামনে। ঠিক তখনই মনে পড়ে, এবার নামার পালা।

লেখক : শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, মাদারীপুর।

এসইউ/এমএস

আরও পড়ুন