ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ভ্রমণ

রোনালদোর শৈশবের ‘মাদেইরা’ এক রূপের নগর : পর্ব-০২

প্রকাশিত: ০৭:০২ এএম, ০৫ জানুয়ারি ২০১৭

‘মন্তেইল’ নামক সেই জায়গাটি থেকে ফিরে এসে সবাই ক্লান্ত। কারণ, মাদেইরা আসবো তাই আগের রাতে সবাই খুব একটা ঘুমায়নি লিসবনে। তারপরও সবাই মিলে হালাল খাবারের শপ তালাশ করতে লাগলাম। রাস্তায় এক সেনেগালের লোক পেয়ে গেলাম, সে মুসলিম। রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সে স্ট্রলোজির লিফলেট বিতরণ করছে। তার কাছ থেকে তথ্য নিয়ে এক মরক্কিস কাবাব শপে দুপুরের লাঞ্চ সেরে ছুটলাম ‘রেড বাসে’ করে দ্বীপ শহরের বাকি অংশ ঘুরতে। ছাদ খোলা বাসে দোতলায় খোলা ছাদে বসে পাহাড়ের অলিগলিতে ঘুরে ঘুরে স্রষ্টার অপার দান দেখতে কার না ভালো লাগে! জোবায়ের ভাই যথারীতি ফেসবুকে লাইভ শুরু করলেন। তবে এবার ব্যতিক্রমভাবে। বাস ঘুরছে আর সে ক্যামেরা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সবকিছু দেখাচ্ছে। আল্লাহর দান বিজ্ঞানের কল্যাণে তৈরি লাইভ ভিডিওর ফলে আমাদের নির্জন দ্বীপে ঘোরাঘুরি বন্ধুরা বিভিন্ন দেশ থেকে সরাসরি দেখছে। আমরা সবাই একে একে লাইভে কথা বলার পর রুবেল শুরু করলো ‘অপরুপ মহিমা-যার নাই তুলনা’ গানটি। সবাই গানের সাথে সুর দিলাম।

Ruper

মাদেইরার কলা- যা গোটা ইউরোপে বিখ্যাত এবং খুব বেশি ব্যয়বহুল। তার সারি সারি গাছ আর বিশাল বড় বড় বাঁশঝাড়ের মাঝখান দিয়ে আমাদের বাস এগিয়ে যেতে লাগলো। সবাই প্রকৃতির অপরূপ লীলা দেখায় মগ্ন। দূর পাহাড়ে বাড়িগুলোর উপরে যেন মেঘসমূহ নেমে এসেছে। চলতে চলতে হঠাৎ আকাশের হাল্কা গর্জন শোনা যাচ্ছে। বাস চলছে তার ঠিকানায়, ছুটে চলেছে পাহাড়ের আঁকা-বাঁকা পথ ধরে উপরের দিকে। নিচে আটলান্টিক মহাসাগর আর তার উপরে বিশাল পাহাড়। সমুদ্র তীরে বিশাল এক পাথর খণ্ড দেখলাম। এ পাথর কেটে সিঁড়ি উঠে গেছে উপরের দিকে। মাত্র ক’মাস আগে মাদেইরাতে ভয়াবহ যে অগ্নিকাণ্ড হয়েছিল তার অনেক চিহ্নও দেখা গেলো। বিশাল পাহাড়ের একাংশের গাছপালা পুড়ে বিরান হয়ে গেছে।

Ruper

সকাল থেকেই ঘোরার কারণে সবাই ক্লান্ত। ক্লান্ত শরীরেই হোটেলে এসে ফ্রেশ হয়ে নামাজ সেরে নিলাম সবাই। সিদ্বান্ত হলো রাতের ডিনারের পর সবাই মিলে আবারো ঘুরবো কিছুক্ষণ। সাগর পাড়ে বসা হবে। হালাল খাবারের সঙ্কট আছে বিধায় আমরা আবারো রাতের ডিনারে চলে গেলাম সেই মরক্কিস কাবাব শপে। আগেই বলেছিলাম, আমাদের মোস্তাফিজ ভাইয়ের কথা। ওনার তো আবার ভাত ছাড়া অন্য কিছুতে চলেই না। উনি অনেক কষ্টে মোবাইলে জিপিআরএস চালু করে খুঁজে বের করলেন এক ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট। সেখানে মাছ-ভাত খেতে ছুটলেন আর আমরা বাকি পাঁচজন গেলাম কাবাব শপে।

Ruper

রাতের ডিনার শেষে ছুটলাম মাদেইরা তথা গোটা পর্তুগালের হিরো ফুটবল বিশ্বের বরপুত্র ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর নিজস্ব প্রতিষ্ঠান সিআর৭ এ বসে কফি খাওয়ার উদ্দেশ্যে। ‘সিআর৭’ এ বসে সাগর পাড়ে বিশাল এক জাহাজ দেখতে দেখতে কফির মগে চুমুক দিয়ে আমরা সময় কাটালাম। লিসবনে এখন কনকনে ঠান্ডা আর মাদেইরাতে পুরোই গরম। কফি খাওয়া শেষে সাগর পাড় ধরে সাগরের গর্জন শুনতে শুনতে ছুটে চললাম হোটেলের উদ্দেশ্যে। প্রকৃতিকে এত আপন আর চারিদিকে থৈ থৈ পানির শব্দোচ্ছলে আমাদের সুর-বেসুরো সবার গলায় নেমে এলো গানের ঝোঁক। সবাই মিলে একসঙ্গে গান গাচ্ছি আর আমি অধম যেহেতু এই লাইনে আজীবন অনাকাঙ্ক্ষিত, তাই তাদের এই সম্মিলিত গানের তালে তাল মিলিয়ে হেঁটে হেঁটে গান গাওয়ার ভিডিও ধারণ করতে লাগলাম। স্রষ্টার অপরূপ সৃষ্টি আর প্রকৃতির এই রং-বেরঙের রূপের বাহার তাদের গানের গলা চড়া থেকে আরো চড়া করতে লাগলো।

প্রায় পাঁচ-সাতটি গান হয়ে গেলো। শেষে হঠাৎ মোশাররাফ ভাই জানালো, গানগুলো সে তার চ্যানেলে আপলোড করে রাখবে। এই শুনে আফসোস করলাম মনে মনে। বেসুরা গলা বিধায় আমি পারলাম না ইউটিউবে তাদের সঙ্গে ভিডিওতে থাকতে! সে রাতে গভীর ঘুম হলো সবার। রাতেই কথা ছিল সকাল ৮টার ভেতরে বের হবো। কিন্তু ক্লান্ত শরীরে নিদ্রাদেবী সবাইকে ঘিরে ধরলো। প্রায় দশটার দিকে গেলাম ব্রেকফাস্টে। প্রবাসে থাকলেও পর্তুগীজ ক্যাফেটেরিয়ায় পুরোপুরি ইউরোপিয়ান ব্রেকফাস্ট সারলাম অনেকদিন পর। আমি আর জোবায়ের ছাড়া বাকি সবাই ফ্রেশ অরেঞ্জ জুস পান করলেন। জানি না এটি ওনারা কেন করলেন। সকাল বেলা কফি বা চায়ের বদলে অরেঞ্জ জুস! হয়তোবা কিছু একটা বিশেষ মাহাত্ম থাকতেও পারে! অবশ্য আসাদ ভাই আর রুবেলের ইশারা-ইঙ্গিতে যা বুঝলাম, মোশাররাফ ভাইয়ের কাছে এই অরেঞ্জ জুস যা ফ্রেশ অরেঞ্জ থেকে বানানো হয় তা নাকি অমৃতসম।

Ruper

সকালের নাস্তা সেরে ছুটলাম স্থানীয় ট্যুরিস্ট গাইড সেন্টারে। মধ্যবয়সী ভদ্রমহিলা আমাদের ফ্লাইটের টাইম জেনে দূরে কোথাও যেতে নিষেধ করলেন। আমাদের পরামর্শ দিলেন যাতে আমরা মাঝ সাগরে ডলফিন আর তিমি মাছ দর্শনে যাই। জনপ্রতি ২৫ ইউরো করে চার্জ। আমরা টিকিট কেটে দেখি শিপে চড়ার সময় এখনো প্রায় ঘণ্টা দেড়েক বাকি আছে। এই সময়টুকু কাজে লাগাতে হবে। ছুটে গেলাম ফুটবলের বরপুত্র রোনালদোর নিজের গড়া মিউজিয়ামে। আগের রাতে শুধু কফি খেয়ে চলে এসেছিলাম, আজ গেলাম মিউজিয়াম দেখতে। টিকিট কেটে সবাই মিলে ভেতরে গেলাম। কে না জানে যে, এই রোনালদোর দুই পা আর অসাধারণ ফুটবল প্রতিভা আজ তাকে খ্যাতি দিয়েছে দুনিয়াজুড়ে।

মাটির নিচে নির্মিত এ মিউজিয়ামে রোনালদো তার যাবতীয় সব অর্জনগুলো জমা রেখেছেন। জীবন্ত ইতিহাস হয়ে থাকা মাদেইরার এ সূর্যসন্তান ওয়ার্ল্ডের মাঝে একমাত্র ব্যক্তি যে একা চার চারটি গোল্ডেন বুটের মালিক। এই চারটা বুটই এখানে রাখা আছে। আছে বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান বা ক্রীড়ামোদীদের দেয়া উপহার সামগ্রী। আবার বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাকে পাঠানো ভক্তকূল বা ফুটবল ক্লাবের দেয়া পত্রগুলো। আছে তার ঐতিহাসিক কিংবা তার স্মরণীয় বিভিন্ন খেলায় পড়া বুটজুতোগুলো, সেইসঙ্গে বিভিন্ন খেলায় যে বলগুলোতে সে তার অমূল্য লাথি দিয়েছেন সেই বলগুলোও সারি সারি করে সাজানো। আছে গাজার মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানোয় তার প্রতি কৃতজ্ঞতার স্মারক।

চলবে-

এসইউ/জেআইএম

আরও পড়ুন