ইতিহাসের সাক্ষী প্রবাজপুর শাহী মসজিদ
প্রবাজপুর শাহী জামে মসজিদ একটি প্রাচীন মসজিদ এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। এটি জ্বিনেরা তৈরি করেছে বলে কথিত আছে। তবে সুলতানী আমলের স্থাপত্য কৌশল পরিলক্ষিত হয় মসজিদটিতে। এসব কারণে মসজিদের নির্মাণকাল ও ইতিহাস নিয়ে মতভেদ রয়েছে।
অবস্থান
সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দক্ষিণে প্রবাজপুর গ্রামে মসজিদটি অবস্থিত। এর জমির পরিমাণ ৫০ বিঘা।
নির্মাণকাল
মসজিদটি ১১০৪ হিজরির ১৯ রমজান অর্থাৎ ২ মে ১৬৯৩ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত। সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময় তার ফৌজদার নবাব নুরুল্লাহ খাঁ এ মসজিদের নামে লাখেরাজে ৫০ বিঘা জমি দান করেন। সুবাদার পরবাজ খাঁ সম্রাট আওরঙ্গজেবের কাছ থেকে নির্দেশ পেয়ে সেনাবাহিনীর নামাজ পড়ার জন্য এক গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদ নির্মাণ করেন। তবে বাংলা ১৩৬২ সনে মসজিদটি সংস্কার করা হয়।
নামকরণ
সম্রাট আওরঙ্গজেবের সুবাদার পরবাজ খাঁর নামানুসারে এ গ্রামের নাম এবং মসজিদের নামকরণ করা হয়।
ইতিহাস
প্রচলিত আছে, জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করে রাতারাতি নাকি জ্বিনেরা মসজিদটি তৈরি করে। এছাড়া ১৬০৮ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত আতিয়া মসজিদের সঙ্গে এই মসজিদের নির্মাণ কৌশলগত মিল রয়েছে।
স্থাপত্যশৈলী
সাতক্ষীরা জেলার মধ্যে সবচেয়ে টেরাকোটা সমৃদ্ধ মসজিদ এটি। মসজিদের বহির্ভাগস্থ আয়তাকারের আয়তন ৪৬.৯-৩৩.৯ ইঞ্চি। মসজিদটিতে ২১.৬-২১.৬ ইঞ্চি মাপের একটি বর্গাকৃতির নামাজ ঘর রয়েছে। মসজিদের দেয়ালগুলো ৫-৯ ইঞ্চি থেকে ৭ ইঞ্চি প্রস্থ। প্রধান দরজাটি ৪.৭ ইঞ্চি প্রশস্ত।
এছাড়া ৬.৯ ইঞ্চি মাপের একটি প্রশস্ত বারান্দা ছিল। কিন্তু বর্তমানে বারান্দাটি আর নেই। প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে, প্রবাজপুর শাহী মসজিদটি টাঙ্গাইলের আতিয়া জামে মসজিদ, যানিয়া দীঘি, নারায়ণগঞ্জের শাহী মসজিদ এবং পশ্চিম লট্রন ও চামকাটি মসজিদের অনুরূপ এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ। অন্যদিকে বারান্দায় তিন গম্বুজ। সংস্কার করার সময় মূল পূর্ব দেয়ালের (বর্তমানে নেই) দিকে একটি ছোট দেয়াল জুড়ে দিয়ে মূল বারান্দারসহ আয়তাকার উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ তৈরি করা হয় শুক্রবারের জুমার নামাজ আদায় করার জন্য।
বর্তমান অবস্থা
মসজিদটির মোট ১০টি দরজা থাকলেও সম্প্রতি উত্তর ও দক্ষিণ অংশের ৪টি দরজার নিম্নভাগ ছোট পাতলা প্রাচীর দ্বারা আংশিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া মসজিদের পশ্চিম দিকের দেয়ালে ৩টি অলঙ্কৃত মেহরাব রয়েছে। এর অলঙ্করণগুলো খুবই সুন্দর। তিনটি মেহরাবের খিলানই অনেক ফলিযুক্ত এবং পার্শ্ববিশিষ্ট স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। এছাড়া মেহরাবের বহির্প্রান্ত রেখায় ফলির সংযোগস্থলে পতাকা আকারে বড় নকশা রয়েছে। উত্তর পাশে পালানুযায়ী প্রস্ফুটিত বড় পদ্ম এবং ডিজাইন রয়েছে। কেন্দ্রেবটিতে বক্রলতার ভাঁজের মধ্যে উভয়দিকে বড় পতাকার নকশা করা হয়েছে। দক্ষিণ পাশে প্রস্ফুটিত সুন্দর বড় পদ্মের সমাবেশ দেখা যায়। তবে বর্তমানে মসজিদের ভিতরে ও বাইরে কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। শৈল্পিক উৎকর্ষ বজায় রাখার ফলে স্থানীয় প্রত্নজ্ঞানহীন মানুষের অর্থ ব্যয়ে আগের বারান্দা এবং ভিতরে সংস্কার কাজের ফলে টেরাকোটা সৌন্দর্য সিমেন্ট দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়েছে।
ইতিহাস মতে, মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৫০ বিঘা জমি দানের কথা উল্লেখ থাকলেও বর্তমানে মসজিদের দখলে রয়েছে মাত্র ৩ বিঘা জমি।
এসইউ/এমএস