প্রকৃতির বিস্ময় চালন্দা গিরিপথ
শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরত্ব। এ পথটুকু পাড়ি দিতে হয় শাটল ট্রেনে চড়ে। আর সে ট্রেন থেকে নামতেই দেখা মিলবে পাহাড়-অরণ্যে ঘেরা সবুজ ক্যাম্পাস। প্রায় ১৭০০ একর জায়গা জুড়ে গড়ে উঠেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। যেখানে প্রকৃতি তার সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়ে অপেক্ষা করছে ২২ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য। এ যেন প্রকৃতির কোলে বেড়ে উঠা পাঠশালা।
কাঠবিড়ালীর ছোটাছুটি, পাখির কিচিরমিচির, মায়া হরিণের ভালোবাসা মাখা চাহনি, ঝর্ণার ঝিরিঝিরি শব্দ, হাজারো প্রজাতির গাছের সমারোহ, ছোট্ট রাঙামাটি খ্যাত ঝুলন্ত ব্রিজ কী নেই এখানে!
প্রকৃতি এখানে উদার ও মায়াময়। বন-পাহাড়ের সেই মায়াবী ডাক কিংবা ঝর্নার হাতছানি এড়াতে পারে না কেউ। সম্প্রতি এর সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রকৃতির বিস্ময় চবির অ্যাডভেঞ্চার খ্যাত `চালন্দা গিরিপথ`।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ঝুপড়ির পাশ দিয়ে সামান্য হাঁটলেই পাহাড় থেকে নেমে আসা পানির ছড়া। যা `ছড়ার পানি’ নামে পরিচিত। ছড়ার পানি দিয়ে পশ্চিমে প্রায় ঘণ্টা খানেক দক্ষিণে হাঁটলেই দেখা মিলবে অদ্ভূত সুন্দর চালন্দা গিরিপথের। গিরিপথের চারপাশের সবুজ প্রকৃতি আর স্বচ্ছ পানির স্রোতধারার অপার সৌন্দর্যে চোখ জুড়িয়ে যাবে।
চালন্দার প্রবেশ মুখে শীতল পানির স্পর্শ এক অন্য রকম অনুভূতির সৃষ্টি করে। চারদিকের সুনসান নীরবতা, পাহাড়ের বুক চিরে চলে যাওয়া চালন্দা গিরিপথ দেখতে জটিল এক রহস্যের মতো লাগে। তবুও থেমে নেই যাত্রা।
রহস্যপ্রেমী শিক্ষার্থীরা তাই তো প্রতিদিন দল বেধে যান চালন্দার সৌন্দর্যের রহস্য উদঘাটনে। তাদের কাছে এটি এক অ্যাডভেঞ্চারের নাম।
সম্প্রতি চালন্দা গিরিপথ দেখতে আসা শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই এ রকম একটি অ্যাডভেঞ্চারপূর্ণ ভ্রমণের জায়গা আছে, জানা ছিল না। ঘুরে এসে খুব ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে চালন্দার প্রতিটি অংশকেই সৃষ্টিকর্তা অপরূপ সৌন্দর্য দিয়ে তৈরি করেছেন। সত্যিই অসাধারণ। কিছু একটা জয় করে এসেছি!
প্রকৃতির বিস্ময় চালন্দা এখন শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে নয়, চালন্দার সৌন্দর্যের কথা ছড়িয়ে পড়ছে পুরো চট্টগ্রাম জুড়ে। প্রতিদিন ১৫-২০ জনের দল এখানে ঘুরতে আসছেন।
প্রকৃতির কোলে বেড়ে উঠা এ গিরিপথ ভ্রমণে যেমন উন্মাদনা আছে, রোমাঞ্চ আছে, অ্যাডভেঞ্চার আছে, তেমনি আছে বিপদও। একটু অসতর্কতার কারণে পড়তে হতে পারে বড় রকম কোনো বিপদের।
তবে সম্প্রতি ভ্রমণপিপাসুদের অসতর্কতায় নষ্ট হচ্ছে স্থানীয়দের ফসল ফলাদি। এতে করে আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন বলেন জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এছাড়াও চালন্দার পরিবেশও কিছুটা বিপর্যয়ের মুখে। যারা সেখানে যাচ্ছেন তাদের কেউ না কেউ সেখানে ফেলে আসছেন পানির বোতল, চিপসের প্যাকেটসহ নানা বর্জ্য। এতে করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এতো কিছুর পরও থেমে নেই যাত্রা। বরং বেড়েই চলছে দিনের পর দিন। শিল্পীর তুলিতে আঁকা অসম্ভব সুন্দর এ গিরিপথের রূপ সুধা পান করছেন হাজারো অভিযাত্রী।
জীবন মুছা/এসএস/আরআইপি