ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ভ্রমণ

আমব্রেলাম্যান আশরাফ : দ্যা থাগবয়

প্রকাশিত: ০৭:৩৫ এএম, ১৬ জুলাই ২০১৬

ঈদে নয় দিনের দীর্ঘ ছুটি। সেই সাথে আরো পাঁচদিন যোগ করে ষোল দিনের ছুটি হলো। কর্মী হিসেবে এটা লম্বা একটা সময়। ছুটি শেষ হলে নতুন অফিস। মনটাকে রিফ্রেশ করে নেয়ার বিশাল সুযোগ পাওয়া গেলো তার আগে। চারজন মিলে সময়গুলোকে কাটানোর বিভিন্ন পরিকল্পনা।

ঢাকায় ঈদ কাটিয়ে পরদিন দৌড়ালাম সমুদ্রবতী কক্সবাজার। হোটেলে পৌঁছলাম বেলা সাড়ে বারোটার দিকে। বিকেল আর সন্ধ্যা রাতটা লাবনী বিচে কাটিয়ে পরদিন গেলাম ইনানী বিচ। ডিপ্রেসডস ওয়েদার। কখনো জোরে আবার কখনো পিটিরপিটির বৃষ্টি ঝরছে থামাথামি ছাড়া।

বিচে নামতেই দেখলাম কতগুলো ছেলে দাঁড়িয়ে আছে রঙিন ছাতা হাতে। ওরা ছাতা ভাড়া দেয়। জনপ্রতি ৫০ টাকা। যাবার সময় ফেরত দিতে হয়। আনুমানিক নয় কিংবা দশ বছর বয়সের এক ছেলে সামনে এলো। দৃপ্ত চোখে মায়া খেলা করছে। আমি ওর কাছ থেকেই ছাতা নেবো বলে ঠিক করলাম। আমরা ছাতা মাথায় বিচে নামলাম। একটি ছোট ছায়া আমায় অনুসরণ করছে। ডানে যাই তো ডানে, বামে তো বামে।

আমি বালিতে ফুটে থাকা একটি ফুলগাছের কাছে দাঁড়াই। ছেলেটি বললো, ‘এর নাম ঝারু ফুল।’ আমি এবার ভালো করে ছেলেটিকে দেখি। গায়ে একটি নীল হাফ শার্ট, হাফ প্যান্ট- গরীবের কাপড় যেমন হয়। মাথার চুল বৃষ্টিতে ভিজে কপালের উপর লেপ্টে আছে। ঠোঁটে বুদ্ধিদীপ্ত হাসি। জিজ্ঞেস করতেই সে তার নাম জানালো, ‘আশরাফ’। বয়স নয় বছর।

আমি আমার মেয়েটির দিকে তাকাই, ওর বয়স সাত। লিফটে একা চড়তে দেয়া হয় না যদি আটকে যায়! সিঁড়িতে একা চলা নিষেধ যদি পড়ে যায়! আমার মেয়ের মোটে দু’বছরের বড় আশরাফ উন্মাতাল সমুদ্র চষে বেড়াচ্ছে। ছোট্ট কোমল পায়ের নিচে চোরাবালিময় বালুতট। সফেন সমুদ্রকে সে পোষ মানিয়েছে। জীবিকার পথটা হয়তো আরো দু’বছর আগেই খুঁজে নিয়েছে।

সমুদ্রে ততক্ষণে জোয়ার সরে গিয়ে ভাটার টান। জলের ভেতর থেকে মাথা তুলে জেগেছে বড় বড় পাথরের চাঁই। আশরাফ বললো, ‘আমি ভালো ছবি তুলতে পারি।’ আমি উৎসাহ দেবার জন্যই তার হাতে ফোনটা দিলাম। পরে অবাক হয়েছিলাম। চমৎকার ফটোসেন্স। সে টুকটাক কথা বলছিলো আর আমি সমুদ্রের পানিতে বৃষ্টির ফোটা দেখছিলাম। জলে মিশে যায় জল। হঠাৎ ছেলেটি বললো, ‘ঈদে আমি কোনো কাপড় কিনতে পারিনি। আমি টাকা জমিয়ে একটা জিন্সের প্যান্ট কিনবো। আপনার প্যান্টটার দাম কত?’

বিড়ালের আঁচড় দেয়া ইয়েলো ব্রান্ডের প্যান্টের দাম আমি তাকে বলি না। শুধু বলি, ‘শোনো আশরাফ, এই প্যান্টটি কেনার আগে আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। একদিনেই এই প্যান্ট কেনার সামর্থ্য আমার হয়নি। পড়ালেখা করো আর কাজ করো। তোমার জন্য অনেক ভালো কিছু অপেক্ষায় আছে। তুমি বুদ্ধিমান আর সাহসী। সাফল্য সাহসীদের জন্যই।’

ashraf

ততক্ষণে দুপুর শেষ হয়েছে। আমরা বিচের টং দোকানে রং চা খাচ্ছি। সুকন্যা আর আশরাফ খাচ্ছে পটেটো চিপস। হিমছড়িতে গিয়ে আমাদের লাঞ্চ করার ইচ্ছে। চিপসের প্যাকেট খালি হলে ছেলেটি দৌড়ে চলে যায়। ফিরে আসে বেগুনী রঙের ঝারু ফুল হাতে। আমি আমার চুলে গুঁজে দেই সামুদ্রিক ফুল। আশরাফের চোখে কৃতজ্ঞতা আর ঠোঁটের বক্ররেখায় সলাজ হাসি।

আমরা কথা বলছিলাম,
- আশরাফ, তোমার বাসা এখান থেকে কতদূর?
- বেশি দূরে না, এই ধরেন গিয়া আধাঘণ্টা হাঁটাপথ।
- তোমার বাসায় কিভাবে খবর পাঠাবে, তুমি যদি আমার সাথে শহরে যাও আর সন্ধ্যায় ফেরো?
- চায়ের দোকানের চাচার মুবাইল থিকা মায়রে ফুন করুম!
- ওকে ফাইন, তুমি ফোন করে জানিয়ে দাও। আশরাফ, তখন বলছিলে ঈদে তোমার কাপড় কেনা হয়নি। পোলাও খেয়েছিলে?
- নাহ!
- ঈদ মানে জানো আশরাফ? খুশি। খুশির জন্য আলাদা কোনো দিনের প্রয়োজন নেই। চলো আমার সাথে। আজ তোমার ঈদ!

এসইউ

আরও পড়ুন