সি টু সামিট
এই পথচলা আমাদের জন্য গর্বের

যখন পা রাখলাম সি টু সামিট অভিযানের পথে; তখন জানতাম না এ যাত্রা কেবল পদক্ষেপের গণনা হবে না, হবে আত্মার খোঁজ, প্রকৃতির সঙ্গে সংলাপ এবং মানুষের ভালোবাসার গল্প। এই অভিযান ছিল শুধু ভৌগোলিক পথচলা নয় বরং এক অন্তর্নিহিত প্রতিজ্ঞা, একটি পরিবর্তনের, একটি সচেতনতার।
সিঙ্গেল-ইউজড প্লাস্টিক দূষণ কমানো ও কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের বার্তা নিয়ে যখন আমি পথে নামি; তখন প্রতিটি কিলোমিটার যেন নতুন এক অভিজ্ঞতা এনে দেয়। নদী, পাহাড়, মাঠ, শহর, বাজার সব জায়গায় মানুষের চোখে আমি কৌতূহল দেখেছি, বিস্ময় দেখেছি, আবার অনেকের মাঝে অনুপ্রেরণার দীপ্তিও দেখেছি। পথ চলতে চলতে কেউ এসে প্রশ্ন করেছে, ‘আপনার লক্ষ্য কী?’ আর আমি গর্বের সঙ্গে বলেছি, ‘এই পৃথিবীকে একটু ভালো রাখার স্বপ্ন দেখি।’
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
সিরাজগঞ্জ থেকে শুরু করে বগুড়ার পথে প্রতিটি ধাপেই ছিল আলাদা গল্প। কখনো প্রশস্ত রাজপথ, কখনো সরু পিচঢালা গ্রামীণ পথ, সবকিছুর মাঝেই প্রকৃতির এক নিজস্ব ছন্দ ছিল। ভোরের শীতল হাওয়া, দুপুরের প্রখর রোদ, বিকেলের শান্ত বাতাস, সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত সংগীতের মতো লেগেছে এ যাত্রা।
মানুষের ভালোবাসা ও আতিথেয়তা আমাকে মুগ্ধ করেছে বারবার। পথে অচেনা এক ভাই জানতে চেয়েছেন, ‘আপনার এই পথচলা কতদূর?’ আমি উত্তর দিয়েছি, ‘এ পথের শেষ নেই। যতদিন পৃথিবী বেঁচে থাকবে; ততদিন এই বার্তা ছড়িয়ে যাবে।’ কখনো কোনো সহযাত্রী এসে কিছুদূর সঙ্গ দিয়েছে। কখনো নতুন মানুষ এসে পাশে দাঁড়িয়েছে, কখনো পরিচিত কেউ এসে বলেছে, ‘আপনার এই পথচলা আমাদের জন্য গর্বের।’
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
এই অভিযাত্রা শুধু আমার একার নয়, এটি সকলের, যারা পৃথিবীকে ভালোবাসে, যারা চাইলে পরিবর্তন সম্ভব বলে বিশ্বাস করে। প্রতিটি পদক্ষেপ আমাকে শিখিয়েছে ধৈর্য, নিয়মানুবর্তিতা, প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের গভীরতা।
বিজ্ঞাপন
সি টু সামিট কেবল একটি অভিযান নয়, এটি একটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন, একটি বার্তার বহিঃপ্রকাশ, একটি পরিবর্তনের সূচনা। আমার পথচলা হয়তো শেষ হবে কিন্তু এ অভিযানের উদ্দেশ্য—একটি পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও সচেতন পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন—চলতে থাকবে অনন্তকাল।
আজকের পথচলা শুরু হয়েছিল সিরাজগঞ্জের কাঠেরপুল থেকে, ভোর ৬টা ৩৫ মিনিটে। সঙ্গে ছিলেন শ্রদ্ধেয় প্রদীপ দাদা, অপূর্ব ভাই। যদিও কিছুদূর যাওয়ার পর প্রদীপ দাদা বিদায় নেন। তবে পথের প্রশস্ততা ও প্রকৃতির স্নিগ্ধতা আমাদের চলার গতি বাড়িয়ে দেয়।
ছোনঘাটা পার হয়ে পৌঁছাই সালুয়াঘাটা ব্রিজে। ততক্ষণে সূর্য উঠে এলেও পথের দুই পাশে ছায়াঘেরা গাছ থাকায় আরামদায়ক আবহে হাঁটছিলাম। একটানা ১২ কিলোমিটার পেরিয়ে পৌঁছে যাই হরিণা পিপুলবাড়ীয়া বাজারে। বাজারের কাছাকাছি যেতেই স্মার্ট ট্যুরিজমের কর্ণধার আসলাম ভাই ও কয়েকজন সাথী এসে আমাদের স্বাগত জানান। কিছুটা পথ একসঙ্গে পেরিয়ে তার বাড়িতে গিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিই।
বিজ্ঞাপন
পুনরায় যাত্রা শুরু করে ভেন্নাবাড়ি হাট পার হয়ে একডালা পৌঁছাই। এখান থেকে শুরু হয় সরু পিচঢালা পথ, দুপাশে বিস্তৃত ধান ও ভুট্টার ক্ষেত। সোনামুখি বাজার হয়ে প্রবেশ করি বগুড়া জেলার ধুনট বাজারে। এরপর কয়েক কিলোমিটার এগিয়ে কান্তনগর বাজার। তারপর হাঁস খালী হাট হয়ে আজকের পথচলার সমাপ্তি ইসলামপুর ঈশ্বরঘাট মাদ্রাসার সামনে।
আজকের এই দীর্ঘ অভিযানে হেঁটেছি ৪০.২৯ কিলোমিটার। আগামীকাল ইনশাআল্লাহ দুপুর নাগাদ পৌঁছাবো বগুড়া শহরে। আর দিন শেষে থাকার পরিকল্পনা শিবগঞ্জ উপজেলায়।
বিজ্ঞাপন
এই যাত্রাপথের প্রধান পৃষ্ঠপোষক শীর্ষস্থানীয় ফুড ব্র্যান্ড ‘প্রাণ’। স্ন্যাকস পার্টনার নুডলস ব্র্যান্ড ‘মিস্টার নুডলস’। রেডিও পার্টনার জাগো এফএম, নিউজ পার্টনার জাগোনিউজ২৪.কম। গিয়ার পার্টনার মাকালু-ই-ট্রেডার্স নেপাল। ওরাল হেলথ পার্টনার সিস্টেমা টুথব্রাশ।
এসইউ/জিকেএস
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন