সিঙ্গাপুর ভ্রমণে কোথায় খাবেন দেশি খাবার?
বিদেশ ভ্রমণে গিয়েও অনেকেই দেশি খাবার খুঁজে বেড়ান। তবে সিঙ্গাপুর ভ্রমণে আপনি বাঙালি অনেক রেস্টুরেন্ট পেয়ে যাবেন। যেখানে স্বাদ নিতে পারবেন বাহারি সব দেশি খাবারের। পালং শাক, পুঁই শাক, বেগুন ভর্তা, শুটকি ভর্তা ও আলু ভর্তাসহ নানা ধরনের ভর্তা থেকে ভাজি, মাছ-মাংসের তরকারি সব মিলবে সিঙ্গাপুরের নানা রেস্টুরেন্টে।
আসলে দেশি সব খাবার মিলছে বিশ্বের অন্যতম পর্যটন প্রধান দেশ সিঙ্গাপুরে। শহরের রয়েল রোড, ল্যাম্বো রোড এলাকায় আছে প্রায় অর্ধশত রেস্টুরেন্ট। যেখানে আছে মাছ, মাংস, শাক, সবজি, ডাল, ভর্তা থেকে শুরু করে সব ধরনের দেশি খাবারের সমাহার।
এই রেস্টুরেন্টগুলোকে ঘিরে আশপাশে রয়েছে শত শত বাংলদেশি। সেখানে দু’চোখে শুধু বাংলাদেশি লোকজন দেখা যায়। এ যেন সিঙ্গাপুরের মধ্যে আরেক বাংলাদেশ। সেখানে মনে হয় বাইরে দেশের কোনো শহরে আছি। একেকটি রেস্টুরেন্টে প্রতিদিন বাংলা টাকার হিসেবে ১ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে।
এসব রেস্টুরেন্টে দূর দূরান্ত থেকেও অনেকে দেশি খাবারের স্বাদ নিতে ছুটে আসেন। এছাড়া যারা বেশি দূরে থাকেন, তারা রবিবার বন্ধের দিন রেস্টুরেন্টে নিজ মাতৃভূমির খাবার খেতে আসেন। ছুটির দিনে প্রচণ্ড ভিড় হয় এসব রেস্টুরেন্টে।
সরেজমিনে শাহী বিরিয়ানি হাউজ, বাংলার স্বাদ রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখা গেছে, রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করতে দেশীয় আইটেমের পসরা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। মলা মাছ, চিংড়ি মাছ, ইলিশ মাছ, রুই মাছ, পাবদা মাছ, টুনা মাছ, পোঁয়া মাছ, রুই মাছ, কাতাল মাছ চোখে পড়বে। আছে গরু, মুরগি ও খাসির মাংসও।
পাশাপাশি আছে বিভিন্ন সবজি ও ভর্তার আইটেম। সাদা ভাতের সঙ্গে পছন্দের তরকারি অর্ডার করে আগেই বিল পরিশোধ করতে হয়। এরপর নিজ দায়িত্বে খাবারগুলো টেবিলে এনে খেতে হবে।
আরও পড়ুন
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিঙ্গাপুরের নামকরা মোস্তফা টাওয়ারের পাশে রয়েল রোড ও ল্যাম্বো রোড। এই রোড দুটিতে আছে শাহী বিরিয়ানি হাউজ, বাংলার স্বাদ রেস্টুরেন্ট, রাজধানী রেস্টুরেন্ট, মায়া রেস্টুরেন্ট, বেঙ্গল রেস্টুরেন্ট, ঢাকা রেস্টুরেন্ট, মোহাম্মদী রেস্টুরেন্ট, হাজী বিরিয়ানি, রূপসী বাংলা রেস্টুরেন্ট, সুখী বাংলা রেস্টুরেন্টসহ প্রায় অর্ধশত খাবার হোটেল।
এসব রেস্টুরেন্টে দুই একজন ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানি, স্থানীয় ছাড়া মালিকসহ সিংহভাগ কর্মচারি বাংলাদেশি। শাহী বিরায়ানি হাউজের কর্মচারী বাবু জানান, প্রায় ১০ বছর পূর্বে মুন্সিগঞ্জের রনি এই রেস্টুরেন্ট চালু করেছেন। ভালোই চলছে তাদের রেস্টুরেন্ট। এই রেস্টুরেন্টে ১৮ জন কর্মচারি কর্মকর্তা আছে।
তার মধ্যে ১৪ জনই বাংলাদেশি। প্রতিদিন গড়ে বাংলা টাকায় ৫ লাখ টাকা বিক্রি হয়। ছুটির দিনে আরও বেশি বেচাকেনা হয়ে থাকে। রেস্টুরেন্টের মালিক রনি বলেন, ‘আমি ১২ বছর আগে সিঙ্গাপুর এসেছি। প্রথম দুই বছর চাকরি করেছি। এরপর ছোট পরিসরে এই রেস্টুরেন্ট চালু করেছি।’
‘ধীরে ধীরে রেস্টুরেন্টের পরিধি বাড়তে থাকে। আলহামদুলিল্লাহ ভালো ব্যবসা হচ্ছে। এছাড়া আমার রেস্টুরেন্টে অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিন প্রায় অর্ধশত দেশি আইটেম রান্না করা হয়। এখানকার প্রবাসী ভাইয়েরা যেন দেশি খাবারের স্বাদ নিতে পারে এজন্য এসব খাবার রান্না করা হয়।’
খাবার খেতে আসা এখানকার একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানির দুই প্রকৌশলী বাবুল ও বদরুদ্দীন বলেন, ‘আমরা দূরে থাকি। তাই সব সময় এখানে আসা হয়নি। সপ্তাহে প্রতি রবিবার বন্ধের দিন দেশি খাবারের স্বাদ নিতে এখানে ছুটে আসি। এসব রেস্টুরেন্টের রান্নাও অনেক মজা। যেন বাড়িতে খাবার খাচ্ছি মনে হয়।’
বাংলাদেশ থেকে স্ব-পরিবারে বেড়াতে আসা তরুণ উদ্যোক্তা ওমর শরীফ বলেন, ‘সিঙ্গাপুরে এসে সব দেশি খাবার পাবো চিন্তা করতে পারিনি। এসব রেস্টুরেন্টে খাবার খেয়ে মনে হয় দেশে বসে খাবার খাচ্ছি। দেশি মাছ, মাংস, শাক-সবজি পাওয়া যায়। এসব রেস্টুরেন্ট থাকায় বাংলাদেশিদের জন্য বেশি উপকার হয়েছে।’
এমএমডি/জেএমএস/এমএস