প্রকৃতির মাঝে সময় কাটাতে ঘুরে আসুন ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্কে
ঢাকার আশপাশেই যারা একদিনের ছুটিতে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে চান, তারা চাইলে ঢুঁ মেরে আসতে পারেন গাজীপুরের ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্কে। গাছে ঢাকা এ উদ্যানের প্রতিটি জায়গাই দৃষ্টিনন্দন।
সারি সারি বৃক্ষের মাঝে পায়ে চলা পথ। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে বিশ্রামের জন্য আছে বেঞ্চ কিংবা ছাউনি। বনের মাঝে কোথাও কোথাও চোখে পড়বে ধানক্ষেত। কোথাও আবার পুকুর কিংবা ছোট আকারের লেক।
শাল বা গজারি, এই উদ্যানের প্রধান বৃক্ষ। এসব ছাড়াও ২২০ প্রজাতির গাছপালা আছে এখানে। বনের ভেতর দিয়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্য আছে রাস্তা ও হাইকিং ট্রেইল যেখানে নিরিবিলি নিজের মতো করে হেঁটে দেখতে পাবেন একেকটি গাছ। ১৯৭৪ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু হলেও, আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৮২ সালে জাতীয় উদ্যান হিসেবে এটি স্বীকৃতি পায়।
পানিতে ভাসা পদ্ম দেখতে ছুটে যেতে পারেন এখানে। উদ্যানের বিশালাকার কয়েকটি লেক, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পদ্মপুকুর। লেকটিতে পদ্মফুলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য হৃদয়কাড়া। একই সঙ্গে অরণ্যের গাঢ় সবুজ পানির সমাহার এই উদ্যানের সৌন্দর্যকে করেছে অনন্য।
জাতীয় উদ্যান নিজ মনে ঘুরে বেড়ানোর মতো আনন্দই অন্যরকম লেকগুলোতে নৌকায় ঘুরতে পারবেন, আবার ইচ্ছে করলে বড়শি দিয়ে মাছ ধরতেও পারবেন। সেই ব্যবস্থাও আছে, যদিও সেজন্য একটি নির্দিষ্ট অংকের অর্থ গুনতে হবে আপনাকে।
ঘুরতে আসা সবার জন্য আরও আছে, প্রজাপতি বাগান, যেখানে দেখতে পারবেন নানা প্রজাতির রঙ বেরঙের প্রজাপতি! দু-একটি প্রজাপতি যদি আপনার কাঁধে নাই বসে, তাহলে এই ট্যুর যেন বৃথা! শুধু প্রজাপতি দেখেই কিন্তু শেষ নয়। আছে কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্র যেখানে দেখা মিলবে সব বয়সী কচ্ছপদের।
সঙ্গে আছে মিনি এক চিড়িয়াখানা। সমস্ত উদ্যানটা এক সাথে এক সময়ে দেখতে চাইলে রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান সাধারণত খোলা থাকে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। উদ্যানে প্রবেশ করতে আপনাকে দিতে হবে মাত্র ১০ টাকা। সঙ্গে পাচ্ছেন নিরাপদে গাড়ি রাখার সুবিধা।
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান ঘুরে যদি সময় থাকে তাহলে ঘুরে আসতে পারেন, ভাওয়াল রাজবাড়ি থেকে। ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান থেকে কেবল ১৫ কিলোমিটার দূরেই অবস্থিত এই জমিদার বাড়ি। অতীতের পাতায় একটু সময় কাটিয়ে আসতে ঘুরে দেখা জরুরি এই জমিদার বাড়ি।
বিশাল এই জমিদার বাড়ি আসলেই যেন এক গোলক ধাঁধা। ঘুরতে ঘুরতে কখন যে হারিয়ে যাবেন। যাই হোক জাতীয় উদ্যানের বিষয়ে ফিরে আসি। পৃথিবীর অন্যান্য জাতীয় উদ্যানের আদলে ৫০২২ হেক্টর জমিতে ১৯৭৩ সালে এ উদ্যান সরকারিভাবে গড়ে তোলা হয়।
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের মূল উদ্ভিদ হলো শাল। প্রায় ২২০ প্রজাতির গাছপালা আছে এ বনে। এর মধ্যে ৪৩ প্রজাতির বিভিন্ন রকম গাছ, ১৯ প্রজাতির গুল্ম, ৩ প্রজাতির পাম, ২৭ প্রজাতির ঘাস, ২৪ প্রজাতির লতা, ১০৪ প্রজাতির ওষুধি গাছ। জীব বৈচিত্র্যেরও কমতি নেই এ বনে।
প্রায় ১৩ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৯ প্রজাতির সরীসৃপ, ৫ প্রজাতির পাখি ও ৫ প্রজাতির উভচর প্রাণীও রয়েছে এ বনে। গজারি বৃক্ষের আধিক্যের কারণে অনেকের কাছে এটি ভাওয়ালের গজারির গড় হিসাবেও পরিচিত। প্রায় ৫০২২ হেক্টর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান ১৯৮২ সালে জাতীয় উদ্যানের স্বীকৃতি লাভ করে।
উদ্যানের ২২১ প্রজাতির গাছের মধ্যে রয়েছে ৪৩ প্রজাতির বৃক্ষ, ১৯ প্রজাতির গুল্ম, ৩ প্রজাতির পাম, ২৭ প্রজাতির ঘাস, ২৪ প্রজাতির লতা ও ১০৪ প্রজাতির ওষুধি গাছ। এছাড়া আছে ৬৪ প্রজাতির প্রাণী। যাদের মধ্যে ১৩ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৯ প্রজাতির সরীসৃপ, ৫ প্রজাতির পাখি ও উভচর প্রাণী অন্তর্ভুক্ত।
প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ ও জীব বৈচিত্রে পরিপূর্ণ এই উদ্যানে ছুটির দিনে অনেকে পিকনিক ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। ভাওয়াল গড়ের ৩ নাম্বার গেট দিয়ে প্রবেশ করলে প্রথমেই টেরাকোটায় মোড়ে প্রবেশ দ্বারের দুটি হাতির ভাস্কর্য নজরে পড়বে।
উদ্যানের ভেতরে আছে ৩১ টি পিকনিক স্পট, ১৯ টি চমৎকার কটেজ, অত্যাধুনিক রেস্ট হাউজ, প্রজাপতি বাগান, কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্র ও শিশুপার্ক। উদ্যানের সারি সারি বৃক্ষের মাঝে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হলে বিশ্রামের জন্য আছে বেঞ্চ বা ছাউনি। লেকের পানিতে নৌকায় ঘুরে বেড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পুরো উদ্যান দেখার জন্য আছে সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার।
ভাড়া ও প্রবেশমূল্য
সূর্যোদয় হতে সূর্যাস্থ পর্যন্ত ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান পরিদর্শন করা যায়। জনপ্রতি প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা। প্রবেশ মূল্যের সাথে শিশু পার্ক, ওয়াচ টাওয়ার, মিনি চিড়িয়াখানা ও পাবলিক টয়লেটের চার্জ অন্তর্ভুক্ত আছে। প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস বা বাসে নিয়ে প্রবেশ করতে চাইলে যথাক্রমে ৬০, ১০০ ও ২০০ টাকা প্রদান করতে হয়।
কীভাবে যাবেন?
ঢাকা মহাখালী থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরে ও গাজীপুর থেকে মাত্র ৪.৩ কিলোমিটার দূরে ন্যাশনাল পার্কটি অবস্থিত। ঢাকার মহাখালী থেকে সম্রাট, অন্যন্যা, উজানভাটি ও প্রভাতী বনশ্রী পরিবহনসহ কিশোরগঞ্জ, চালাক চার, ময়মনসিংহগামী যে কোনো বাসে চড়ে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের ফটকের সামনেই নামা যায়।
ঢাকা থেকে নিজস্ব গাড়িতে অথবা মহাখালি, বিমানবন্দর বা রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ে দিয়ে ময়মনসিংহগামী যে কোনো বাসে ভাওয়াল উদ্যানে যেতে পারবেন।
যোগাযোগ
পিকনিক স্পট বা রেস্ট হাউজ ভাড়া নেওয়ার জন্য বন বিভাগের মহাখালি কার্যালয় থেকে অগ্রিম বুকিং দিতে হয়। এছাড়া ভাওয়াল গড় থেকেই সামান্য দূরে অবস্থিত রাজেন্দ্রপুর জাতীয় উদ্যানের রেঞ্জ কার্যালয় থেকেও নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের বুকিং নেওয়া এই নম্বরে ফোন করে (০১৭৮১৭৩৩০০০, ০১৭১৩৫৭৫০৫৫)।
কোথায় থাকবেন?
ঢাকা থেকে ভাওয়াল উদ্যানে সারাদিন ঘুরে বিকেল বা সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরে আসা যায়। এছাড়া রাতে থাকার জন্য ভাওয়াল গজারি গড়ের কাছে আছে সারাহ, সোহাগ পল্লী, স্প্রিং ভ্যালি, ছুটি, নক্ষত্রবাড়ি ও জল ও জঙ্গলের কাব্যের মতো বেশ কিছু রিসোর্ট। তবে রিসোর্টগুলোতে যেতে চাইলে আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখা ভাল। এছাড়া গাজীপুরে সাধারণ মানের অসংখ্য হোটেল আছে।
কোথায় খাবেন?
ভাওয়াল গড়ের ভেতরে হালকা চা ও নাশতা খাওয়ার ছোট টঙ্গের দোকান ও ক্যান্টিন আছে। তবে পিকনিক বা কোনো অনুষ্ঠানে বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে কটেজে রানা-বান্না করার সুযোগ আছে।
কিছু সতর্কতা
নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে শুধু এক বা দুইজন না গিয়ে গ্রুপ করে ভাওয়াল গড়ে ঘুরতে যাওয়া ভালো। ভাওয়াল ন্যাশনাল উদ্যানের কটেজে রাত্রিযাপনের অনুমতি নেই। উদ্যানের ভিতরের লেকে মাছ ধরা ও পাখি শিকার করার ব্যাপারে বিধি নিষেধ আছে।
উদ্যানের সিকিউরিটি এলাকার বাইরে যাওয়া বিপজ্জনক। উদ্যানের ভেতর মাইক বা উচ্চ শব্দ তৈরি করা যে কোনো বাদ্যযন্ত্র বাজানো নিষেধ। বনের ভেতরে হাঁটার সময় সঙ্গে সান গ্লাস, টুপি, পানির বোতল ও অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম সঙ্গে রাখুন।
জেএমএস/এএসএম