পড়ন্ত বিকেলে ঘুরে আসুন ধলেশ্বরীর বুকে
সাভারের নিকটবর্তী ধলেশ্বরী নদী যেন এক জীবন্ত গল্প বলে! পড়ন্ত বিকেলে সূর্যের লাল আভা সেই গল্পের স্বাদ বাড়িয়ে দেয়। স্থানটি হয়ে ওঠে দর্শনার্থীদের মিলনমেলা। নদীর তীরে বসে কিছু সময় কাটানো যেমন আনন্দদায়ক, তেমনই ছোট ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে নদীর বুকে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করাও এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
তিন বন্ধু সিয়াম, মিলন আর আমি শুক্রবার সকালে সিদ্ধান্ত নিলাম নৌকা ভ্রমণে বের হবো। ঢাকার নিকটবর্তী সাভারের সিইগাইর ব্রিজের নিচে বয়ে চলা ধলেশ্বরী নদীতে পৌঁছানো বেশ সহজ।
প্রথমে আমি ও সিয়াম শ্যামলী থেকে বৈশাখী বাসে ৩০ টাকা ভাড়া দিয়ে হেমায়েতপুরে পৌঁছালাম। এরপর হেমায়েতপুরে নেমে ইজি বাইকে চড়ে নদীর তীরে পৌঁছলাম, যা জনপ্রতি ৩০ টাকাই খরচ পড়েছিল। তবে লোকজন বেশি থাকলে রিজার্ভ গাড়ি নেওয়া ভালো।
মিলন সাভারের বাসিন্দা। তাই সে আগে থেকেই নদীর তীরে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলো। নদীর তীরে নানা রকম খাবারের দোকান। তবে সেদিকে তেমন নজর না দিয়ে আমরা মনস্থির করলাম প্রথমে নৌকা ভ্রমণেই যাব। ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকায় উঠে যখন মাঝি ধীরে ধীরে নৌকা চালালেন, তখনই শুরু হলো আমাদের আনন্দযাত্রা।
নদীর বুক চিরে যখন নৌকা এগিয়ে চলছে, মাঝি নানা গল্প করে আমাদের ভ্রমণকে প্রাণবন্ত করে তুলছিলেন। তিনি জানালেন, ধলেশ্বরী নদীর এই অংশে এক সময় প্রচুর মাছ পাওয়া যেত এখন তুলনামূলক কম।
স্থানীয় জেলেদের জীবিকা এই নদীর ওপরই নির্ভরশীল। মাঝির গল্পে উঠে এলো নদীর ইতিহাস, স্থানীয় লোককথা আর নদীর পাড়ের জীবনের নানা চিত্র। তার মুখে এসব গল্প শুনে মনে হলো আমরা যেন পৌরাণিক গল্প শুনছি।
নৌকা ভ্রমণের সময় আমরা নদীতে দেখতে পেলাম কচুরিপানা, ছোট ছোট মাছের ঝাঁক ও নদীর তীরে বসে থাকা মানুষের দল। সবাই যেন নিজ নিজ জীবনের গল্পে ব্যস্ত, অথচ নদী তাদের সবার মধ্যে একটি অদৃশ্য বন্ধন তৈরি করেছে। নদীর ঠান্ডা বাতাসে আমাদের মন ভরে ওঠে প্রশান্তিতে।
আরও পড়ুন
নৌকায় আমরা নানা রকম দুষ্টুমি করতেও ভুলিনি। একে অপরকে পানি ছিটানো, নৌকায় দোল খাওয়া, পানিতে হাত ডুবিয়ে মজা করা এসব মূহুর্তগুলো আমাদের শৈশবের দিনগুলোকে স্মরণ করিয়ে দিলো।
এর মাঝেই আমরা তিন বন্ধু নদী ও জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে গভীর আলোচনা শুরু করলাম। প্রকৃতির মাঝেই যেন আমাদের মনের কথা বলে দেওয়ার হিড়িক পড়ে গেল।
ধীরে ধীরে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো, আর নদীর পানি রূপালি আভায় ঝলমল করতে লাগলো। তখনই মনে হলো, জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তগুলোতেই লুকিয়ে থাকে প্রকৃত আনন্দ। আমরা তিন বন্ধু, মাঝির গল্প, আর ধলেশ্বরী নদীর বুকে সেই নৌকা ভ্রমণ জীবনের এক অমূল্য স্মৃতি হয়ে থাকবে।
নৌকা ভ্রমণ শেষে আমরা নদীর পাড়ে এসে সুলভ মূল্যে সন্ধ্যাকালীন ভোজে মেতে উঠলাম। স্থানীয় খাবারের স্বাদ যেন আমাদের দিনের ক্লান্তি মুছে দিলো। তাজা মাছের তরকারি, ভাজাপোড়া, আর স্থানীয় মিষ্টান্ন খেয়ে সবাই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুললাম।
খাওয়া শেষে ফের ঢাকার পথে রওনা দিলাম। ইজি বাইকে চড়ে ফিরে এলাম হেমায়েতপুর। তারপর বৈশাখী বাসে চড়ে আবার গন্তব্যে পৌঁছালাম। সারাদিনের এই অভিজ্ঞতা সবার মনকেই পরিপূর্ণ করে তুলেছিল।
রাজধানীর আশপাশে যারা প্রকৃতি ও শান্তির খোঁজেন, তাদের জন্য সাভারের নিকটবর্তী ধলেশ্বরী নদীর নৌকা ভ্রমণ একটি অনন্য অভিজ্ঞতা হতে পারে। নদীর পাড়ের খাবারের দোকান, স্থানীয় মানুষের অতিথিপরায়ণতা ও মাঝিদের গল্প সব মিলিয়ে এটি হয়ে উঠতে পারে আপনার জীবনের অন্যতম সেরা ভ্রমণ।
লেখক- ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী
জেএমএস/এএসএম