ভারতের ঝাড়খন্ড ভ্রমণে কোন কোন স্পট ঘুরে দেখবেন
চমৎকার সংস্কৃতি ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এক রাজ্য ঝাড়খন্ড। এটি ‘ল্যান্ড অব ফরেস্ট’ কিংবা ‘বনভূমির এলাকা’ হিসেবেও সুপরিচিত। ব্যুৎপত্তিগতভাবে এর অর্থ হচ্ছে ‘ঝোপঝাড়প্রবণ এলাকার বন’।
এর পাশাপাশি রাজ্যটির জীববৈচিত্র্যও বেশ সমৃদ্ধ। এবার একনজরে দেখে নেওয়া যাক পর্যটকদের জন্য ঝাড়খন্ডে কী কী আকর্ষণ অপেক্ষা করছে-
বেতলা ন্যশনাল পার্ক
বেতলা ন্যাশনাল পার্ক হলো এমন একটি জায়গা যেটি বাঘ সংরক্ষণের দিক থেকে ভারতের প্রথম ন্যাশনাল পার্কগুলোর একটি। বেতলার আছে একটি সমৃদ্ধ বন্য জীবন, যাকে হয়তো সেভাবে গোনায় ধরা হয় না। বেতলা ন্যাশনাল পার্ক হলো বাঘ, লোপার্ড, চিতাল, ভালুক, বাইসন, ইঁদুর প্রজাতির হরিণ প্রভৃতির আবাসস্থল।
সত্যিকার অর্থে বেতলা হচ্ছে বাইসন, হাতি, বাঘ, লোপার্ড ও চিত্রা হরিণের এক ট্রেডমার্ক। বন্য জীবন দেখার পর যদি আপনার হাতে সময় থাকে তাহলে যেতে পারেন পালামু ফোর্টে। পুরোনো এই দুর্গটি নির্মাণ করেছিলেন রাকসেল রাজবংশের রাজা। বেতলা থেকে এর দূরত্ব মাত্র তিন কিলোমিটার।
জামশেদপুর
‘দ্য স্টিল সিটি অব ইন্ডিয়া’ নামে সুপরিচিত জামশেদপুর। বিখ্যাত টাটা স্টিলের হোমটাউন হলো ঝাড়খন্ডের বৃহত্তম এই শহর। পুরোনো এ শহরের গোড়াপত্তন ঘটে ১৯১৯ সালে, যার পরিকল্পনা করেছিলেন জামসেটজি নুসেরওয়ানজি টাটা।
জামশেদপুরে বেড়াতে গেলে আপনি ঘুরে দেখতে পারেন জুবিলী পার্ক, ডালমা ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি, ডিমনা লেক, টাটা স্টিল জুওলজিক্যাল পার্ক, দ্য জামশেদপুর মেরিন ড্রাইভ প্রভৃতি।
নেতারহাট
নেতারহাট হলো ঝাড়খন্ডের লাতেহার জেলার একটি দৃষ্টিনন্দন হিল স্টেশন। চমৎকার হিল স্টেশনটি আদর করে অনেকেই ডাকেন ‘ছোট নাগপুরের রানি’। বর্ষাকালের বৃষ্টির পর নেতারহাটের পুরো এলাকাই পরিণত হয় শাল, মাহুয়া ও কেন্ডু গাছের সবুজ ছায়ায়।
স্থানটি আসলেই দেখার মতো। গোটা রাজ্যের জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্যগুলোর একটি হলো নেতারহাট। ঝাড়খন্ডের দীর্ঘতম ও ভারতের একবিংশতম লোধ জলপ্রপাত নেতারহাটের কাছেই অবস্থিত।
আরও পড়ুন
হাজারিবাগ
হাজারিবাগের আক্ষরিক অর্থ হলো হাজার বাগানের শহর। এই নাম শুনে যদি আপনি ভেবে থাকেন যে শহরটি বেশ সুন্দর হবে তাহলে আপনাকে হতাশ করবে না হাজারিবাগ। শহরটি গড়ে উঠেছে পাহাড়, ঘন সবুজ বনভূমি ও অনেকগুলো জলপ্রপাতের সমন্বয়ে।
আর সবকিছুই একে বানিয়েছে প্রকৃতিপ্রেমীদের এক আদর্শ গন্তব্য। হাজারিবাগের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলো হলো ক্যানারি হিল, হাজারিবাগ ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি, ইসকো ভিলেজ (রক আর্টের জন্য), কোনার বাঁধ (কোনার নদীর ওপর), হাজারিবাগ ঝিল (লেক), সুরিয়াকুন্দ প্রভৃতি।
রাজমহল পাহাড়
আপনি শুনে অবাক হবেন যে, রাজমহল পাহাড় জুরাসিক যুগের, যা কি না হিমালয়ের চেয়েও পুরোনো। যারা ট্রেকিং করতে পছন্দ করেন তাদের কাছে খুবই জনপ্রিয় রাজমহল পাহাড়। এ পাহাড়ে আছে অনেক উদ্ভিজ্জ ফসিল যেগুলো ৬৮-১৪৫ মিলিয়ন বছর আগের।
দেওঘর
দেওঘর হচ্ছে ভারতের পুণ্যার্থীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্যগুলোর একটি। ১২টি জিওতিরলিঙ্গা মন্দিরের একটি হচ্ছে বাইধিয়ানাথ ধাম, যা দেওঘরে অবস্থিত। রুদ্রভিষেক উৎসবের জন্য প্রতিবছর হাজারো পুণ্যার্থী এই মন্দিরে ভিড় জমান। পুণ্যার্থীরা দিনভর হেঁটে বেড়ান ও ধর্মীয় প্রথা মেনে পবিত্র পানি বয়ে নিয়ে আসেন।
তারা কানওয়ারিয়াস নামে পরিচিত। দেওঘর থেকে দশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ত্রিকুট পাহাড় ঝাড়খন্ড রাজ্যের জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্যগুলোর একটি। এখানে আছে রোপওয়েতে চড়ে চমৎকার পাহাড়ি দৃশ্য উপভোগ করার সুবিধা, যা আপনার ভ্রমণকে পুরেপুরি সার্থক করবে।
রাঁচি
ঝাড়খন্ডের রাজধানী রাঁচি ভারতের অন্য রাজ্যের রাজধানীগুলোর চেয়ে অনেকটাই আলাদা। এটি হলো আধুনিক ও প্রাকৃতিক বিশ্বের এক চমৎকার মিশ্রণ। শহরটি বিশেষভাবে পরিচিত তার জলপ্রপাতগুলো এবং সুবর্ণরেখা নদীর তীরবর্তী বনভূমির জন্য।
অনেকেই রাঁচিকে ‘সিটি অব ওয়াটারফলস’ অর্থাৎ ‘জলপ্রপাতের শহর’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। জনহা ফলস ও দাসাম ফলস রাঁচির সবচেয়ে বিখ্যাত দুটি জলপ্রপাত।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
জেএমএস/এএসএম