ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ভ্রমণ

সুন্দরবন ভ্রমণে কী কী দেখবেন ও কোথায় থাকবেন?

ভ্রমণ ডেস্ক | প্রকাশিত: ০১:১৮ পিএম, ০৭ মে ২০২৪

ইসতিয়াক আহমেদ

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আমরাও বেড়িয়ে পড়লাম। আর এ যাত্রায় ধরলাম মংলার পথ। যদিও ঢাকা হতে মংলা খুব একটা ভালো বাস সার্ভিস নেই। তবে যদি ভালো এসি ও নন এসি বাসে যেতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে যেতে হবে ঢাকা হতে খুলনাগামী বাসে।

আমাদের এ যাত্রার সঙ্গেী এনা পরিবহনের ইকো ক্লাস হুন্দাই বাস। ঢাকা মিরপুর থেকে পান্থপথ, গুলিস্তান হয়ে যাওয়া এই বাস ভাড়া ৯০০ টাকা। যাত্রায় পথে বিরতি সাম্পান হাইওয়ে ইন রেস্টুরেন্টে। ঢাকা হতে খুলনা বেনাপোল এই পথের বেশ মান সম্পন্ন হোটেল এই সাম্পান।

সুন্দরবন ভ্রমণে কী কী দেখবেন ও কোথায় থাকবেন?

খুলনার গাড়িতে মংলা যেতে চাইলে, নামতে হবে কাটাখালি মোড়ে। গাড়িভেদে ৩- সাড়ে ৩ ঘণ্টা লাগে মূলত গুলিস্থান হতে কাটাখালি মোড়ে পৌঁছাতে। কাটাখালি পৌঁছেই পালা মংলা যাওয়ার।

কাটাখালি হতে মংলা প্রায় ৩৪ কিলোমিটারের পথ। কাটাখালি থেকে লোকাল বাস আছে মংলায় যাওয়ার, একই সঙ্গে আছে রেন্ট-এ কার ও মাইক্রো। এছাড়া যেতে পারেন মাহেন্দ্রতে ভাড়া পড়বে ৫০০-৭০০ টাকা। এতে ৬-৮ জন বেশ আরামেই যেতে পারবেন।

সুন্দরবন ভ্রমণে কী কী দেখবেন ও কোথায় থাকবেন?

মাংলার এই পথের দু’ধারেই দেখা পাবেন চিংড়ির ঘের, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, মংলা পোর্টের। কাটাখালি থেকে প্রায় ঘণ্টাখানেকের পথ মংলা। মংলায় নামার খানিক বাদের চলে আসলো আমাদের জন্য নির্ধারিত রিসোর্টের নৌকা। আপনার প্রয়োজনীয় জিনিস ও খাবার মংলা থেকেই নিয়ে নিতে ভুলবেন না। আমরা যখন নৌকায় চড়ে বসলাম তখন দুপুর ১২টা পার।

এই জলপথে চলাচলের ক্ষেত্রে নদীর জোয়ার ভাটার রয়েছে বড় ভূমিকা। আর এই জোয়ার ভাটার উপরেই নির্ভর করে যাত্রাপথে কতটা সময় লাগবে সেই হিসাব। মংলা পোর্টের সাইড ঘেঁষে, পশুর নদী পেড়িয়ে, ঢুকে পড়লাম আমরা খাড়িতে। একপাশে সুন্দরবন অন্য পাশে গ্রামীণ প্রকৃতি।

সুন্দরবন ভ্রমণে কী কী দেখবেন ও কোথায় থাকবেন?

সাপের মতন একে বেঁকে চলা খাড়ি খাল পেড়িয়েই আমাদের ছুটে চলা বনবিবি ফরেস্ট রিসোর্ট এর পথে। প্রায় দেড় ঘণ্টার জার্নি শেষে আমরা দেখা পেলাম আমাদের রিসোর্টে। খাল ও খাড়ির মোহনায় অবস্থিত গোলপাতায় ঘেরা এই রিসোর্ট। রিসোর্টের উল্টো দিকের গভীর বন।

মূলত সুন্দরবন এর চাঁদপাই রেঞ্জের অন্তর্ভুক্ত এই বনাঞ্চল। ঘাগড়ামাড়ি বন বিট অফিসের পাশেই এই রিসোর্টে অবস্থান। এখন ভরা জোয়ার তাই পানির লেয়ার অনেকটাই উপরে। রিসোর্টে নেমেই প্রথমে চলে আসলো আমাদের জন্য ওয়েলকাম ড্রিংকস।

সুন্দরবন ভ্রমণে কী কী দেখবেন ও কোথায় থাকবেন?

যেহেতু সকালে রওনা হয়ে আসতে আসতেই অনেকটা দেরি করে ফেলেছি আমরা তাই রুমে যাওয়ার আগেই ফ্রেস হয়ে বসে পড়লাম লাঞ্চে। আয়োজনে ছিল ভাত, মাছ, মুরগির মাংস, ভারি ডাল, লাউ চিংড়ি, কলা ভর্তা, টমেটো ভর্তা সালাদ ও পানি।

আমার জন্য এ যাত্রায় নির্ধারিত বন বিবি ফরেস্ট রিসোর্টের সবচেয়ে সেরা ডুপ্লেক্স কটেজটি। মিনিমাম ৬ থেকে ম্যাক্সিমাম ১০ জন পর্যন্ত থাকতে পারবেন এই কটেজে। যে কটেজের ২য় তলা থেকে পাবেন ভয়ংকর সুন্দর সুন্দরবনের ভিউ।

আরও পড়ুন

বনবিবি ফরেস্ট রিসোর্ট সুন্দরবনের বানিয়াশান্তা ইউনিয়নের ঢাংমারিতে অবস্থিত। বর্তমানে এই রিসোর্টে আছে ২টি প্রমিয়াম কাপল ভিলা, ২টি প্রিমিয়াম কটেজ ও ১টি ডুপ্লেক্স ফ্যামিলি ভিলা ৷ রয়েছে ১টি রেস্টুরেন্ট ও ১টি লাইব্রেরি। একটি ডরমেটটি ও ১টি ফ্যামিলি ভিলার কাজও আছে চলমান।

সুন্দরবন ভ্রমণে কী কী দেখবেন ও কোথায় থাকবেন?

কাপল কটেজ ও ভিলাগুলোতে ২-৩ জন, ফ্যামিলি কটেজগুলোতে ৪ থেকে ৬ জন, ডরমেটরিতে ৮-১০ জন থাকা যায়। ম্যানগ্রোভ বনের কোল ঘেঁষেই এই রিসোর্ট তাই চারপাশেই লবনাক্ত পানির জলার বন। এই অঞ্চলে মিঠা পানি ব্যবহারে তাই থাকা উচিত কিছুটা সচেতন।

রুমে এসে ফ্রেস হয়েই আবারো বেড়িয়ে পড়ার পালা। এ যাত্রায় আমরা ছুটি ক্যানেল ক্রুজিংয়ে। যদিও ক্যানেল ক্রুজিং অনেকটাই ডিপেন্ড করে জোয়ার ভাটা আর বনে ঢোকার অনুমতি পাওয়ার উপর।

ক্যানেল ক্রুজিং শেষ করেই আবার রিসোর্টে ফেরার পালা। সুন্দরবনের এই অংশের বিকেল শেষে সন্ধ্যাটা খুবই উপভোগ্য। সন্ধ্যায় আয়োজনে নিয়েছিলাম ফল হিসেবে তরমুজ সঙ্গে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আর চা। রাতে ছিল পরটা, বার-বি-কিউ, ডাল মাখনি, সস, সালাদ আর কোন্ড ড্রিংক্সের আয়োজন।

সুন্দরবন ভ্রমণে কী কী দেখবেন ও কোথায় থাকবেন?

সুন্দরবনের রাতগুলো ভয়ংকর সুন্দর। সামনে নদী, নদীর অপর পাশেই গভীর সুন্দরবন। গোলপাতায় ঘেরা রিসোর্ট আকাশে ধীরে ধীরে উদয় হওয়া চাঁদ আর ঠান্ডা লিলুয়া বাতাস। ইট-পাথরের শহরের মানুষ আমরা, এই প্রকৃতিই আমাদের জানান দেয় জীবন আসলেই সুন্দর। শুধুই তাকে খুঁজে ফিরতে হয়। এবার অপেক্ষা সকাল হওয়ার।

বনের পাখির কিচিরমিচির শব্দেই ঘুম ভাঙে পরেরদিন সকালে। নদীতে এখন ভাটা চলে, তাই পানির স্তর নেমে গেছে অনেক নিচে। ভালো করে খেয়াল করলেই এক আধটা হরিন বা বানরকেও ভেতরের খাল পার হতে দেখতে পারবেন। আর যাই হোক, বনবিবি ফরেস্ট রিসোর্টে গেলে ভোর হওয়াটা মিস করবেন না।

এই বনবিবি ফরেস্ট রিসোর্টে একোমডেশন অনুযায়ী, পার ডে প্যাকেজ ৩৬০০ টাকা থেকে শুরু করে ৬০০০ টাকা পর্যন্ত আছে। এর মধ্যে রিসোর্টে রুম, খাবার, পিক এন্ড ড্রপ সার্ভিস, ক্যানেল ক্রুজিং ও করমজল ভ্রমণ ইনক্লুডেড।

সুন্দরবন ভ্রমণে কী কী দেখবেন ও কোথায় থাকবেন?

প্যাকেজ ছাড়া শুধু একোমডেশনের ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম কাপল কটেজ ৫৫০০ টাকা, প্রিমিয়াম কাপল ভিলা ৭৫০০ টাকা, ডুপ্লেক্স ফ্যামিলি ভিলা ৮৫০০ টাকা, ফ্যামিলি ভিলা ৬৫০০ টাকা, ডরমেটরি পার পার্সন ১৫০০ টাকা।

সকালের আয়োজনে ছিল, খিচুড়ি, ডিম আলুর ডাল, মরিচ পেঁয়াজের ভর্তা। ব্রেকফাস্ট করেই ব্যাগ গুছিয়ে নেওয়ার পালা। কারণ জোয়ার আসা শুরু হলেই আমরা বেড়িয়ে পড়বো করমজলের পথে। মংলা বন্দর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে এই করমজলেই আছে হরিণ ও কুমির প্রজননকেন্দ্র।

সুন্দরবন ভ্রমণে কী কী দেখবেন ও কোথায় থাকবেন?

একই সঙ্গে আছে প্রায় দেড় কিলো মিটারের একটা ট্রেইল বনের ভেতর দিয়ে। আছে ওয়াচ টাওয়ার ও বানরের আনাগোনা। ৪৬ টাকা প্রবেশ ফি দিয়েই ঢুকবে হবে যেখানে। করমজল ঘুরেই পথ ধরলাম আমরা মংলার। করমজল হতে ৩০ মিনিটে পথ মংলা, যদি পথে খুব বেশি জ্যাম না থাকে।

এরপর যথারীতি মংলা হতে কাটাখালি, কাটাখালি হতে ঢাকা। তবে রাত ৮-১০ টার মাঝেই ঢাকায় থাকতে পারবেন। আর তাই কম সময়ে রিল্যাক্স ট্রিপের জন্য এই বনবিবি ফরেস্ট রিসোর্ট অবশ্য সেরা পছন্দ হতে পারে আপনার।

জেএমএস/এমএস

আরও পড়ুন