বিদেশ-বিভুঁইয়ের পথে-প্রান্তরে
বিমানবন্দরের অ্যামেক্স লাউঞ্জে বসে স্যান্ডউইচ আর কফি খেতে খেতে মনে হলো আবারো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে এ যাত্রায়। অবশ্য এবার আমেরিকার মতো প্রায় ২৪ ঘণ্টার বোরিং জার্নি নয়। ফ্লাইটে বসে কতগুলো মুভি দেখা যায় কিংবা কাতার, এমিরেটস কিংবা ইতেহাদ নামক এলভাট্রসের ফাঁকা সিটে ঘুমানো যায়। আপনি বসে বসে ফ্লাইট রুট দেখতে দেখতে ক্লান্ত। আট ঘণ্টা লাগবে কেবল আটলান্টিক পাড়ি দিতে। চোখ ক্লান্ত, ক্লান্ত দেহ ও মন। জেট ল্যাগ তো রয়েছেই।
যাক, এবারের দূরত্ব এতটা বেশি নয়। যাচ্ছি নাপোলিতে এক কনফারেন্সে। এ সেই নাপোলি যেখানে ফুটবল জাদুকর ম্যারোডোনা একযুগ খেলেছেন এবং নাপোলি ক্লাবকে বহু ট্রফি এনে দিয়েছিলেন। তাই এখানকার মানুষেরা ম্যারাডোনাকে ফুটবল-ঈশ্বরের আসনে বসিয়েছেন। ভীষণ জনপ্রিয় তিনি এখানে। আর নাপোলি বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খাবার পিৎজারও উৎপত্তিস্থল। ষোড়শ শতক থেকে অষ্টাদশ শতকে পিৎজার আদি রূপের বিকাশ ঘটে এ শহরে। এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে অবশ্য পিৎজা পরিবেশন করা হয় না। খেতে হলে যেতে হবে পিৎজা হাট কিংবা ডমিনোতে। অবশ্য আমি পিৎজার ভক্ত নই। আমার ছোট ছেলে পছন্দ করে বলে মাঝে মধ্যে যেতে হয়।
এবার যাচ্ছি টার্কিশ এয়ারলাইন্সে। ঢাকা টু ইস্তাম্বুল। ইস্তাম্বুল টু নাপোলি। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো সব সময় হোম এয়ারপোর্টে যাত্রীদের নানা দেশের নানা রুট থেকে নির্দিষ্ট ডেসটিনেশনে নিয়ে যায়। তো চলুন উঠে পড়ি টার্কিশ এয়ারলাইন্সের টিকে-৭১৩ নাম্বার ফ্লাইটে ২০১৮ সালের ৩০ জুন ভোর ৬টা ১৫ মিনিটে। টানা ফ্লাইট।
আতাতুর্ক এয়ারপোর্টে ফ্লাইট মাটি স্পর্শ করলো সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে। কানেকটিং ফ্লাইট আমার বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে। ফলে লম্বা সময়। ঢুকে পড়তে হবে লাউঞ্জে। এইচএসবিসি প্রিমিয়ার লাউঞ্জটি পছন্দ হলো। বলে রাখা ভালো, একেক লাউঞ্জে আপনি একেক ধরনের সেবা ও একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত থাকতে পারবেন। আমি ভ্রমণের আগে এগুলো চেক করেই যাই। আমাকে অনেক সময় ধরে লাউঞ্জটিতে থাকতে হবে। তাই পর্যাপ্ত সুবিধাগুলো চাই আমার। আর এ যাত্রায় এটিই ছিল পারফেক্ট লাউঞ্জ।
আরও পড়ুন
• চীনের এই স্থানে মাটির নিচে বাস করে তিন হাজারেরও বেশি মানুষ
• বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু রেস্টুরেন্টে বসে খেতে কোথায় যাবেন?
প্রথমে বাটার-ব্রেড ও বয়েল্ড এগ নিয়ে বসে পড়লাম লাউঞ্জের একপাশে। ওয়াইফাই কানেকশনটি নিয়ে নিলাম। নেটে সার্ফিং করতে করতে মনে হলো বাসায় মা ও বউয়ের সাথে কথা বলা উচিত। হঠাৎ খেয়াল করলাম এক মা দুই বাচ্চাকে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে লাউঞ্জে প্রবেশ করলেন। বুঝতে পারলাম তিনি দ্রুত খেয়ে নেক্সট ফ্লাইটটি কানেক্ট করবেন। বাচ্চা দুটো খুব কিউট। আমি হ্যালো করলে ছোট্ট ছেলেটি মিষ্টি হাসি দিয়ে হাই করলো। কিছুক্ষণ পরে দুটো সসেজ নিয়ে এককাপ কফি খেয়ে টিভিতে চোখ দিলাম। আর ফাঁকে ফাঁকে চোখ রাখছিলাম স্ক্রিনে। কখন আমার নাপোলির ফ্লাইট টিকে-১৪৫৩ এর ডাক আসে।
সময় অনুযায়ী বেরিয়ে পড়লাম। শুনতে পেলাম, flight TK-1453 to Napoli is now boarding...। সিকিউরিটি চেক হয়ে বোর্ডিং ব্রিজ পেরিয়ে বোয়িংয়ের নির্দিষ্ট সিটে বসে পড়লাম। স্থানীয় সময় বিকেল ৬টা ১০ মিনিটে ক্যাপোডিচিনো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের রানওয়ে স্পর্শ করে টিকে-১৪৫৩ ফ্লাইট। ফ্লাইটে খেয়াল করলাম, বেশ কজন বাংলাদেশিকে যারা ইতালির সিটিজেন। ইমিগ্রেশন চেক শেষে বাইরে আমার নামের প্ল্যাকার্ড নিয়ে অপেক্ষমান নির্দিষ্টজনকে পেলাম।
গাড়িতে উঠতেই পেয়ে গেলাম পরিচিত ড. সামাদকে। সামাদ পাকিস্তানি, বাড়ি পেশোয়ার। ওর সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে ২০১২ সালের কনফারেন্সে। গাড়িটি আমাকে নিয়ে Piazetta A. Scacchi 7 এ ড্রপ করল। লিফটে উপরে উঠে টপ ফ্লোরে রুমে ঢুকে শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিলাম বেডশিটের ওপর। কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে পরদিন সেকেন্ড সেশনে আমার প্রেজেন্টেশনের জন্য ল্যাপটপ খুলে বসলাম। পাওয়ার পয়েন্টগুলোকে ঠিকঠাক করে নিয়ে রাতের খাবার খেতে নাপোলির বাঙালি পাড়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম।
চলবে...
এসইউ/এমএস