ছুটির দিনে ঘুরে আসুন বলধা গার্ডেনে
আহসান হাবিব
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিধন্য বলধা গার্ডেন দাঁড়িয়ে আছে ঢাকার ওয়ারীতে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাগানটি পরিদর্শনে এসেছিলেন ও জাপান থেকে সংগৃহীত ফুলের অপূর্ব সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তার বিখ্যাত ‘ক্যামেলিয়া’ কবিতাটি রচনা করেন এই বলধা গার্ডেনে বসে।
বলধা গার্ডেনের নাম এখন অনেকে না জানলেও বলধা গার্ডেন এখনও নগরীর ভেতরে ছায়াবিস্তার করছে অজস্র বৃক্ষ নিয়ে। ভাওয়াল জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ দিয়ে দুটি বাগান বানিয়েছিলেন। একটির নাম সাইকী অন্যটি সিবলী। পরবর্তী সময়ে ওই বাগান দুটিই বলধা গার্ডেন নামে রূপান্তর করা হয়।
আরও পড়ুন: নতুন বছরে সঙ্গীকে নিয়ে ঘুরে আসুন নীলগিরি
বলধা গার্ডেন ঢাকা শহরের ওয়ারী এলাকায় অবস্থিত একটি উদ্ভিদ উদ্যান কিংবা একটি বোটানিক্যাল গার্ডেন। চাইলে ছুটির দিনে ঘুরে আসতে পারেন দেশের ঐতিহাসিক এই স্থানে।
এই উদ্যানে প্রচুর দুর্লভ প্রজাতির উদ্ভিদ আছে। তদানীন্তন ঢাকা জেলা, বর্তমান গাজীপুর জেলার ভাওয়াল জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী ১৯০৯ সালে দুটি উদ্যান প্রতিষ্ঠা করেন।
৩.৩৮ একর জায়গার ওপর এই উদ্যান দুটি নির্মাণ করা হয়। বলধা গার্ডেন দুটি অংশে বিভক্ত। প্রথম উদ্যানটির নাম রাখেন ‘সাইকী’। পরবর্তী সময়ে তৈরি করা হয় দ্বিতীয় উদ্যান ‘সিবলী’। দুটি শব্দই গ্রিক পৌরাণিক শব্দ।
সাইকী অংশের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে- নীল, লাল, সাদা, হলুদ, জাতের শাপলায় ভরা অনেক শাপলা হাউস, বিরল প্রজাতির দেশি বিদেশি ক্যাকটাস, অর্কিড, এনথুরিয়াম, বিচিত্র বকুল, আমাজান লিলি ও সুড়ঙ্গসহ একটি ছায়াতর ঘর।
আরও পড়ুন: ভারতের যে ৫ স্থানে বেশি ভিড় করেন পর্যটকরা
সিবলী অংশের মূল আকর্ষণ হচ্ছে শঙ্খনদ, পুকুর, ক্যামেলিয়া, অশোক, আফ্রিকান টিউলিপস। এই বাগানের মোট ৮০০ প্রজাতির প্রায় ১৮ হাজার উদ্ভিদ আছে।
নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর মৃত্যুর পর কোনো এক সময়ে এ দুটি উদ্যানকে সম্মিলিতভাবে বলধা গার্ডেন নামে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। নরেন্দ্র নারায়ণ এখানে একটি পারিবারিক জাদুঘরও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
এখানে আরও আছে সূর্যঘড়ি, জয় হাউস।
বাগানের অন্যতম আর্কষণ ‘সেঞ্চুরি প্লান্ট’। ফুল ফোটে শতবর্ষে একবার। এখানে আরও আছে বাওবাব গাছ। মধ্য আফ্রিকার আদিবাসীরা মিসরের ফারাওদের অনেক আগে থেকেই এই গাছের খোঁড়লে মৃতদেহ রেখে মমি বানাত।
আরও পড়ুন: সুসং দুর্গাপুর ভ্রমণে কী কী দেখবেন?
বিখ্যাত এই গার্ডেনের মালিক ছিলেন জমিদার নারায়ণ চন্দ্র চৌধুরী। উনিশ শতকের শেষের দিকে এটি ছিল বলধার সেই জমিদারের বাগানবাড়ি। যা তখন ঢাকার উচ্চবিত্তদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। নিয়মিত সেখানে বসতো গান বাজনার আসর।
ধারণা করা হয়, বলধা নাম থেকেই বলধা গার্ডেনের নামকরণ হয়েছে। জমিদার নারায়ণ চন্দ্র চৌধুরী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে নানারকম ফুলগাছ ও অন্যান্য উদ্ভিদ এনে রোপণ করেছেন নিজের তৈরি এ গার্ডেনটিতে।
বলধা গার্ডেন প্রকৃতপক্ষে ফুল ও উদ্ভিদের একটি মিউজিয়াম। তবে সত্যিকারের একটি মিউজিয়ামও ছিল বলধা গার্ডেনে। তাতে কয়েকটি ধাতব মূর্তি ছিল।
আরও পড়ুন: বিশ্বের কোথায় প্রথমে দিন হয় জানেন কি?
বলধা গার্ডেনে যেমন দেশ বিদেশের বিভিন্ন উদ্ভিদ আছে, ঠিক তেমনই দেশ বিদেশের খ্যাতিমান লোকেরা বলধা গার্ডেন দেখতে আসতেন।
এখনো বলধা গার্ডেন নিয়ে ঢাকাবাসীর আগ্রহের কমতি নেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও বলধা গার্ডেন পরিদর্শন করেছিলেন। তখন তিনি এ গার্ডেনের বহু বিদেশি ফুলের বাংলা নামকরণ করেছিলেন।
১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরীর মৃত্যুর পর কলকাতা হাইকোর্টের নিয়ন্ত্রণ ট্রাস্টের মাধ্যমে এই বাগানের তদারকি করা হয়। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তান সরকারের আমলে কোর্ট অব ওয়ার্ডস বাগানের ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত ছিল।
তবে তাদের দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে বাগানের অবস্থার অবনতি হওয়ায় পাকিস্তান সরকার বাগানের ঐতিহ্য ধরে রাখতে ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে বলধা গার্ডেনের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেয় পূর্ব পাকিস্তান সরকারের বন বিভাগকে। বর্তমানে এটি জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান কিংবা বোটানিক্যাল গার্ডেন নামে পরিচিত।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
জেএমএস/এমএস