ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ভ্রমণ

খেজুরের রসের খোঁজে

ভ্রমণ ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৩:৫১ পিএম, ০৮ জানুয়ারি ২০২৪

মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ

চলছে শীতকাল। আর এই শীতের সকাল খেজুরের রস ছাড়া যেন জমেই না। শীতের সকাল আর খেজুরের রস যেন একে অপরের পরিপূরক। কোনো একদিন ভোরে সেই রস পান করার ইচ্ছে ছিল অনেক দিনের। সেই ইচ্ছেটা আরও তীব্র হতে থাকে শীতকালীন ও নির্বাচনের লম্বা ছুটিতে বাড়ি আসায়।

ঢাকায় থাকাকালীন চিন্তাভাবনা থাকলেও বাড়িতে আসার পর সবকিছুই যেন হুটহাট ঠিক হয়ে যায়। ছুটিতে গ্রামের বাড়ি নরসিংদী আসার পর বেশ কয়েকটি স্থানে ঘোরার মাঝে খেজুরের রস খাওয়ার পরিকল্পনা হয়।

আরও পড়ুন: বিশ্বের যে ৮ দেশে এখনো রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই

আমি, আমার বন্ধু সাখাওয়াত ও ছোট ভাই অপি এই তিনজন মিলে সবকিছু ঠিকঠাক করলাম। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সবাই সাখাওয়াতের বাড়িতে ঘুরতে গেলাম। আমাদের সঙ্গে যুক্ত হলো আরেক বন্ধু সাইফুল।

সেদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরাঘুরির পর মোটামুটি ঠিক হয়ে গেলো যে আমরা পরদিন সকালেই খেজুরের রস খেতে যাচ্ছি। রাতে খাবারের পর থেকেই কীভাবে কি করবো না হবে সবকিছু ফাইনাল করা হয়।

মূলত আমাদের বড় ভাই মোবারক ভাই খেজুরের রস খাওয়াতে নিয়ে যাবেন। স্থানও মোটামুটি ফাইনাল হয়ে যায় রাতেই। সমস্যা হয়ে যায় এতো সকালে আমরা যাবো কীভাবে।

পরবর্তী সময়ে আমরা দুটো মোটরসাইকেলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। বলা বাহুল্য আমরা সবাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী।

jagonews24

আরও পড়ুন: শীতের রাতে ক্যাম্পিং করতে পর্যটকরা ছুটছেন সোনাইছড়ায়

শুক্রবার সকালে ফজরের নামাজের পর আমরা মোটরসাইকেলে করে রওনা দেই। কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে আমরা গন্তব্য স্থলে যাওয়া শুরু করি। পথে কুয়াশার জন্য মোটরসাইকেলের হেড লাইটেও কিছু দেখা যাচ্ছিল না।

এভাবেই ধীরে ধীরে আমরা মনোহরদী পৌঁছাই। সেখানে আমরা মোবারক ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করি। তিনি তার এক ছোটভাইকে নিয়ে আমাদেরকে নিয়ে আমারের নির্ধারিত গন্তব্য স্থলের দিকে আবারও রওনা হোন। পথিমধ্যে ভাইয়ের আরও কয়েকজন বন্ধু মোটরসাইকেলে করে এসে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হোন।

প্রায় ঘণ্টাখানেক পর আমরা আমাদের গন্তব্য স্থল গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার আমরাইদ বাজারের পাশের একটি খেজুরের রস বিক্রেতার গাছের নিচে পৌঁছাই। আমরা যাব তা আগে থেকেই উনাকে জানিয়ে রাখায় তিনি সেখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

jagonews24

আরও পড়ুন: ডোমখালী সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের ভিড়

শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়। মূলত খেজুর গাছ কেটে পরিষ্কার করে রস সংগ্রহ করা হয়। আমরা যার কাছ থেকে খেজুরের রস খেতে গিয়েছিলাম তার অনেকগুলো গাছ।

তিনি প্রতিদিন বিকেলে নলি, কোমরবন্ধ রশি সঙ্গে নিয়ে খেজুর গাছের সাদা অংশ পরিষ্কার করে রসের জন্য ছোট-বড় কলসি ও মাটির হাড়ি বেঁধে রাখেন।

মাটির কলসিতে সারারাত রস জমে। ভোরের আলো বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাছ থেকে মাটির হাড়ি নামিয়ে খেজুরের রস সংগ্রহ করেন। আমাদের সামনেই তিনি গাছ থেকে খেজুর রসের হাড়ি পেড়ে তা আমাদের ছেকে দেন।

শীতের সকালে গাছ থেকে নামানো কাঁচা রসের স্বাদ বর্ণনায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সেখানে গিয়ে অনেকেই রস পান করা শুরু করে দেয়, আবার কেউ কেউ আমার মতো রসের হাড়ি নিয়ে কিংবা খেজুর গাছে সঙ্গে ছবি তোলা শুরু করে।

jagonews24

আরও পড়ুন: শীতে হিমাচল ভ্রমণে ঘুরে দেখুন জনপ্রিয় ৬ স্পট

যাই হোক পরবর্তী সময়ে আমরা সবাই খেজুরের রস খাই। রস খাওয়ার পর আমরা সবাই মিলে ছবি তুলি। খেজুরের রস বিক্রেতাও অনেক মজার মানুষ ছিলেন। তিনি আমাদের সঙ্গে একটি ফানি ভিডিও করেন সেটি পরে আবার তার ফেসবুক পেইজে আপলোডও করেন তিনি।

যাই হোক, তার অনেক জায়গায় খেজুরের রসের অর্ডার থাকায় আমাদের মাত্র ৯ লিটার রস খেতে দিতে পেরেছিলেন। আসার সময় তাকে অনেক অনুরোধ করে বোতলে করে কয়েক লিটার রস নিয়ে আসি।

খেজুরের রসের স্বাদ সবাই উপভোগ করলেও অনেকেরই মেলেনি তৃপ্তি। মূলত আমরা মোবারক ভাই ও তার বন্ধুদের আতিথিয়েতায় মুগ্ধ। তারা না থাকলে হয়তো আমরা এমন বিশুদ্ধ খেজুরের রস খেতে পারতাম না।

পরবর্তী সময় আমরা তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করি ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। খেজুরের রস খাওয়া শেষে আমরা সবাই মনোহরদী এসে হালকা নাশতা করি। পরে তাদের থেকে বিদায় নিয়ে মোটরসাইকেলে করে যে যার বাড়িতে চলে যাই। সেদিন সকালটি সত্যিই স্মৃতি পাতায় স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

জেএমএস/এমএস

আরও পড়ুন