পরিযায়ী পাখি দেখতে ঘুরে আসুন মহামায়ায়
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মহামায়া পরিযায়ী পাখিদের আগমনে মুখরিত। পর্যটন স্পট মহামায়ায় পাখিদের কিচিরমিচির পর্যটকদের মাঝে বাড়তি আনন্দ যোগ করেছে।
পরিযায়ী পাখিদের আগমনে মহামায়ার রূপ-বৈচিত্র্যে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। আর সেই পাখিদের সঙ্গে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে সৌন্দর্যপিপাসুরা ছুটে আসছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে।
আরও পড়ুন: বিশ্বের সবচেয়ে বড় গুহাটি কোথায়?
প্রায় ১১ বর্গকিলোমিটার লেক এখন পরিযায়ী পাখিদের দখলে। শীতের শুরু থেকে তারা এখানে আসতে শুরু করে। বর্তমানে পাখিদের কিচিরমিচির ডাকে মুখরিত হচ্ছে পুরো এলাকা।
মহামায়ায় আগত পর্যটকরাও মন ভরে উপভোগ করছেন পাখির ওড়াউড়ি, কালকাকলি আর কিচিরমিচির ডাক। অনেকে পাখিদের অবাধ বিচরণ আর ডানা মেলে উড়ে বেড়ানো কিংবা দলবেঁধে পানিতে ভেসে চলার ছবি ধারণ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
জানা গেছে, ষড়ঋতুর আবর্তে শীত এসেছে। শীত এলেই শুরু হয় পরিযায়ী পাখিদের আগমন। এ সময় মেরু অঞ্চল, ইউরোপ, সাইবেরিয়া, এশিয়ার কিছু অঞ্চল ও হিমালয়ের আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত বরফ পড়ার কারণে তুলনামূলক কম শীতের এই বাংলাদেশে খাদ্য ও নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় চলে আসে।
আরও পড়ুন: মহামায়ায় গিয়ে কায়াকিং করবেন যেভাবে
এ কারণে শীতে বাংলাদেশের বিভিন্ন হাওর-বাওড়, খাল-বিল ভরে ওঠে পাখিদের আনাগোনা ও কলকাকলিতে। আবার এরা দেশের সব স্থানে যায় না। সেসব স্থানে পাখিদের খাদ্যের প্রাচুর্য ও বিশালাকার জলাশয়ের এলাকাতেই এরা ছুটে যায়।
জানা গেছে, উত্তর মেরু অঞ্চল থেকে উড়ে আসতে শুরু করেছে ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখি। অন্য বছরের মতো এবারও বিভিন্ন প্রজাতির পাখি উড়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে দেশের অন্য স্থানের মতো মিরসরাই উপজেলার কৃত্রিম লেক মহামায়া প্রকল্পে।
সাত সাগর তেরো নদী পেরিয়ে বেড়াতে আসতে শুরু করেছে পরিযায়ী পাখিরা। নানা প্রজাতির পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হচ্ছে সমগ্র জনপদ। তবে শিকারীদের শ্যেন দৃষ্টি আর পরিবেশ দূষণের কারণে ধীরে ধীরে পরিযায়ী পাখিদের এ জনপদে ভ্রমণ কমে এসেছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন: বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বিশ্বের সবচেয়ে নিঃসঙ্গ বাড়ি
কোনো প্রকার সরকারি ঘোষণা ছাড়াই একসময় পাখির অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছিল মিরসরাইয়ের মুহুরি প্রজেক্ট এলাকার সুবিশাল বিল আর জলাশয়। এখন এ অঞ্চলে কমে আসছে পরিযায়ী পাখির আগমন।
শিকারিদের দৃষ্টি আর কৃত্রিম মাছের প্রকল্পে কীটনাশক ব্যবহারের কারণে বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ছুটে আসা পাখির বিচরণ কমতে শুরু করেছে বলে ধারণা করছেন এলাকার লোকজন।
ডিঙি নৌকায় চড়ে লেকের কাফতলি এলাকায় গিয়ে দেখা মেলে পরিযায়ীদের। ক্যামেরায় ক্লিক পড়তেই ঝাঁক বেঁধে কিচিরমিচির শব্দে উড়তে শুরু করে আকাশে। লেকের চারদিক চেয়ে দেখা মেলে নানা প্রজাতির ছোট-বড় অসংখ্য পাখির।
আরও পড়ুন: দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্রমণে কী কী দেখবেন?
মহামায়ায় ঘুরতে আসা পর্যটক ও পাখিপ্রেমী সাব্বির হোসেন বলেন, ‘বরাবরের মতো আমি পাখিপ্রিয় মানুষ। একসময় বাসায় পাখি লালন-পালন করতাম। বর্তমানে পাখিদের ছেড়ে দিয়েছি।’
‘গত বছর শীতের সকালে পাখি দেখবো বলে মহামায়ায় এসেছিলাম। এমন ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিদের দেখা মেলেনি। এবার সত্যিই তাদের দলবেঁধে আকাশে উড়ে বেড়ানো আর কলকাকলি দেখে ভালো লেগেছে।’
চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর থেকে মহামায়ায় পাখিদের সৌন্দর্য দেখতে আসা পর্যটক মোস্তফা হাকিম বলেন, ‘শীতকালে মহামায়াতে এর আগে কখনো আসা হয়নি। পরিযায়ী পাখিদের সঙ্গে শীতের মহামায়াকে সত্যিই সুশোভিত লাগছে।’
আরও পড়ুন: কম খরচে দার্জিলিং ভ্রমণে কী করণীয়?
স্থানীয় দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান বিপ্লব জানান, প্রতি বছর পাখিদের অভয়ারণ্য হয়ে ওঠে মহামায়া। পর্যটকদের বেশ আকৃষ্ট করে এটি। পাখি গবেষকের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে এটিও হতে পারে পাখিদের বড় অভয়াশ্রম।
এদিকে একসময় শীত এলেই উপজেলার উপকূলীয় মুহুরি প্রকল্প থেকে শাহেরখালী অঞ্চল পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকার খাল-বিল আর জলাশয় নানা রং আর আকৃতির পাখিদের কূজনে মুখরিত হতো।
এখন কমতে শুরু করেছে প্রকৃতির পরিযায়ীদের আগমন। একসময় বালিহাঁস ,পানকৌড়ি, ডাহুক, কানাবক, লেঞ্জা, সরালি, মাছরাঙা, গাঙচিলসহ অসংখ্য পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটতো এখানে।
আরও পড়ুন: বিশ্বের যে ৮ দেশে গিয়ে স্থায়ী হতে পারবেন সহজেই
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বর্তমানে গাঙচিল আর লেঞ্জা প্রকৃতির পাখি ছাড়া আর কোনো প্রজাতির পাখি এখানে চোখে পড়ে না। তারা এর জন্য শিকারিদের শ্যেন দৃষ্টি আর কৃত্রিম মাছের প্রকল্পে পাখিদের জন্য ক্ষতিকারক কীটনাশক (বিষ) ব্যবহারকে দায়ী করেন।
মুহুরি প্রকল্প এলাকার বাসিন্দা কামাল উদ্দিন জানান, একসময় শীতের শুরুতেই দলে দলে পরিযায়ী পাখিদের আগমন ঘটতো মুহুরি প্রকল্প এলাকায়। বিকেলবেলায় পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে এখানকার গ্রামগুলো মুখরিত হয়ে উঠতো। কিন্তু এখন তা কমে এসেছে।
মিরসরাইয়ের উপকূলীয় বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল গফুর মোল্লা বলেন, ‘এরই মধ্যে বিভিন্ন সময় আমরা পাখি ধরা কিংবা শিকারীদের বিষয়ে অভিযান করেছি। এখনো আমরা সজাগ রয়েছি। যে কেউ আমাদের এমন অপরাধের তথ্য প্রদান করলে আমরা তাৎক্ষণিক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
জেএমএস/এসইউ/জিকেএস