শত বাঁধা পেরিয়ে দেশের ৬৪ জেলা ঘুরলেন আয়াতুল্লাহ
‘নতুন কোনো শহরে সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠা পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ আনন্দের একটি’, এমনটিই বলেছেন ফ্রেয়া স্টাক। কথায় কথায় আমরা দেশপ্রেমের আওয়াজ তুলি কিন্তু কিছু টাকা হলেই উড়ে যাই বিদেশ। নিজ মাতৃভূমিকে ভালোবেসে অনেকেই আগে দেশের সৌন্দর্য উপভোগ করেন না।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতাটি এ ক্ষেত্রে চিরস্মরণীয়, ‘বহু দিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে, বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে, দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা, দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু। দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া, একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশিরবিন্দু।’
আরও পড়ুন: ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে দেবতাখুম ভ্রমণ
একটি দেশকে পুরোপুরি জানতে হলে সেই দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে হবে। আর এই বিষয়গুলো জানা যায় পুরো দেশ ভ্রমণ করার মাধ্যম। আর এ কাজটিই করেছেন মুহাম্মাদ আয়াতুল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘আমি স্বপ্ন দেখতাম বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলা ঘুরে দেখার, যাতে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে লুকিয়ে থাকা ৬৪টি জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারি।’
আপন দেশের সবুজ প্রকৃতি, মাটির গন্ধ, দর্শনীয় স্থান ও প্রত্মতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলোর ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার উদ্দেশ্য দিনাজপুর জেলা ভ্রমণের মধ্য দিয়ে শুরু দেশ ভ্রমণের যাত্রা ও নেত্রকোনা জেলা ভ্রমণের মাধ্যমে শেষ হয় আয়াতুল্লাহর বাংলাদেশ ভ্রমণের যাত্রা।
আরও পড়ুন: ছুটির দিনে ঘুরে আসুন ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে
নিজ দেশের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে লাভ করেছি বাঙালিয়ানার স্বর্গীয় স্বাদ। দেশমাতৃকার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এরই মধ্যে একটি একটি করে দেশের ৬৪টি জেলা ভ্রমণ করেছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ছিল- বিভিন্ন সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, মানুষের বিভিন্ন আচার-আচরণ, বিভিন্ন জেলার মানুষের এক এক ধরনের বৈশিষ্ট্য, ইতিহাস, ঐতিহ্য ইত্যাদি জানা এবং শিখতে চাওয়া।’
‘আমি পুরো বাংলাদেশকে জানতে চেয়েছিলাম, দেশের প্রতিটি কোনায় কোনায় যেতে চাচ্ছিলাম। বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে শত-শত পুরোনোন ঐতিহাসিক স্থাপনা। এগুলো দেখাই ছিল আমার মূল লক্ষ্য।’
আরও পড়ুন: ছুটির দিনে ঘুরে আসুন ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে
‘এ কারণে আমি একা একা চষে বেড়িয়েছি দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত। আমি জেনেছি অনেক অজানা জিনিস। যেমনিভাবে মানুষের হ্রদয় নিংড়ানো ভালোবাসা পেয়েছি, তেমনিভাবে মুখোমুখি হয়েছি ভয়ংকর কিছু বিপদের। কিন্তু এই বিপদগুলোই আমার ভ্রমণের নেশাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।’
‘এই ভ্রমণকালে আমার স্মৃতির মানসপটে যুক্ত করেছে অসংখ্য স্মৃতি ও বেড়েছে অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার। এই দীর্ঘ ভ্রমণে আমার বন্ধু ছিলেন বাস ড্রাইভার, অটো ড্রাইভার, টেম্পু চালক, সিএনজি চালক, খাবার হোটেলের বয়, আবাসিক হোটেলের প্রহরী, রেল ও বাস স্টেশনের কোন আগন্তুক, মসজিদের ইমাম কিংবা মন্দিরের পুরোহিত।’
‘আমি রাত কাটিয়েছি রেলস্টেশন, লঞ্চঘাট, মসজিদ, মন্দির, মেস, হোটেল, ভার্সিটির হল, বাসা-বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায়। কখনো খেয়ে বা কখনো না খেয়ে, কখনো জ্যান্ত কাঁকড়া বা কখনো ব্যাঙ ভর্তা অথবা কখনো আধা কাচাঁ মুরগি খেয়ে ভ্রমণের দিনগুলো অতিবাহিত করেছি।’
আরও পড়ুন: ‘পৃথিবীর স্বর্গ’ বলা হলেও ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি
‘এভাবেই ধীরে ধীরে নিজেকে ভাসাতে থাকলাম এক পাহাড়ের চূড়া থেকে আরেক পাহাড়ের চূড়ায়, বিভিন্ন সমুদ্রসৈকতে, খালে-বিলে, হাওড়ে, পথে-প্রান্তরে, কখনো কখনো বুক সমান পানির নিচে অথবা কখনো কখনো ঝরনা বা জলপ্রপাতে।’
প্রাতিষ্ঠানিক বাধাঁ বা আর্থিক সমস্যা থাকার পরেও নিজের উপর দৃঢ় মনোবল থাকার কারণেই ৬৪ জেলা ভ্রমণ সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন আয়াতুল্লাহ। ভ্রমণে অর্থের চেয়েও দৃঢ় মনোবলের গুরুত্ব অত্যাধিক।
ভ্রমণে বের হয়ে পৃথিবীকে আমার বাড়ি ও আকাশকে আমার ছাদ মনে করে ভ্রমণ করেছি। যার কারণে কোনোকিছুই আমার নিকট বাঁধা মনে হয়নি।
আরও পড়ুন: যে দেশের রাস্তায় নেই ট্রাফিক সিগনাল, তবুও হয় না যানজট
বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার পাশাপাশি কিছু সামাজিক দায়িত্ব পালন করেছি। তার মধ্যে অন্যতম হলো- সন্তানকে শিক্ষিত করা, মাদকের ভয়াবহতা, ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষনের গুরুত্ব, ভ্রমণের গুরুত্ব, শিশু শ্রম বন্ধ করাসহ আরো অনেক বিষয়ে মানুষকে জানানোর চেষ্টা করেছি।
ভবিষ্যতে আমার বিশ্ব ভ্রমণের ইচ্ছে আছে। এরই মধ্যে আমাদের পাশের দেশ ভারতের কলকাতা, দিল্লি, সিক্কিম-গ্যাংটক ও দার্জিলিং ঘুরে এসেছি। শিগগিরই অন্যান্য দেশের উদ্দেশ্য বের হবো।
যারা ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন, তাদের প্রতি কয়েকটি অনুরোধ আছে। বিভিন্ন জেলার বা অঞ্চলের লোকজনের প্রতি সম্মান ও প্রকৃতি-প্রাণীর প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া প্রত্যাশা করছি। পাশাপাশি যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলানো থেকে বিরত থাকার প্রত্যাশা করছি।
জেএমএস/জেআইএম