ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ভ্রমণ

সাফারি পার্কে কীভাবে যাবেন ও কী কী দেখবেন?

মামুনূর রহমান হৃদয় | প্রকাশিত: ০২:৪০ পিএম, ০৩ অক্টোবর ২০২৩

রোহান, আকাইদ ও সাব্বির ছোটবেলার বন্ধু। সময় পেলেই তারা বেড়িয়ে পরে প্রকৃতির সান্নিধ্যে। অনেকদিন তারা ঢাকার বাইরে ঘুরতে যায় না। পড়াশোনা, টিউশন করেই কাটছিল তাদের জীবন। ঈদে মিলাদুন্নবীর ছুটিকে কেন্দ্র করে অনেক দিন থেকেই চলছিল তাদের ভ্রমণের প্ল্যান। তবে কোথায় যাবে ঠিক করতে পারছিল না।

ভ্রমণের আগের দিন রাতে সাব্বির ফোন করে আকাইদকে জানালো তার চাচাতো ভাই সুমন গ্রাম থেকে এসেছে। তবে সারাদিন ঘরবন্দি জীবন তার কাছে একঘেয়েমি লাগছে। কাল সেও আমাদের সঙ্গে যাবে। তার শখ গাজীপুর সাফারি পার্ক দেখার।

আরও পড়ুন: কাশফুল দেখতে ঘুরে আসুন বৃন্দাবনে

সবায় মিলে সেখানে গেলে কেমন হয়? রোহানও এখানে যেতে রাজি। পরে আকাইদ আর না করল না। কারণ আকাইদেরও খুব ইচ্ছা সাফারি পার্ক দেখার। পরের দিন কাক ডাকা ভোরে উঠে তাড়াহুড়োয় সকলে কমলাপুর রেলস্টেশন পৌঁছালো।

কিছুক্ষণ বাদেই চলতে শুরু করল ট্রেন। হুইসেল বাজিয়ে ঝিকিঝিকি শব্দে ট্রেন ছুটে চলেছে জয়দেবপুরের দিকে। আড্ডা, হইহুল্লর, গান গেয়ে চলতে থাকল তাদের ট্রেন ভ্রমণ। তবে রোহানের কাছে ট্রেন ভ্রমণটি বিশেষ। কারণ এটি তার প্রথম ট্রেন ভ্রমণ।

ঘণ্টাখানেকের জার্নিতে তারা পৌঁছে গেলো জয়দেবপুরে। সকালে না খেয়ে বেড়িয়েছে সবাই। তাই প্রথমে সবাই ঢুকলো খাবারের হোটেলে। খাবার খেয়ে তাকওয়া বাসে চড়ে বসে সবাই বাঘের বাজার যাওয়ার জন্য।

আরও পড়ুন: কুয়াকাটা ট্যুরে কোন কোন স্পট ঘুরে দেখবেন?

বাঘের বাজার যেতেও তাদের এক ঘণ্টা সময় লাগলো। সেখান থেকে ২০ টাকায় ইজি বাইকে চরে পৌঁছে গেলো বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে। এতোটা পথ আর লম্বা সময় কোনোটিই গায়ে লাগেনি তাদের।

সুন্দর একটি স্থানে আসতে পেরে সবার ভালোই লাগছে। প্রধান ফটকটিও দেখতে চমৎকার। ১০০ টাকায় টিকিট কেটে ঢুকে পড়ল সাফারি পার্কের ভেতরে।

জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ স্থানটি সব সময়ই পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। তাদের মতো অনেকেই এখানে বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে এসেছেন।

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক সপ্তাহে ৬ দিন খোলা থাকে ও সাপ্তাহিক বন্ধ মঙ্গলবার। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এই পার্ক খোলা থাকে।

আরও পড়ুন: কুয়াকাটাকে হার মানাবে ছইলার চর

প্রায় ৪ হাজার একর জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে পার্কটি। ছায়া সুনিবিড় প্রাকৃতিক শোভায় ভরা এ পার্কে আছে ভাওয়াল গড়ের ঐতিহ্যবাহী গজারি গাছ, শালবন, আকাশ চুম্বি, আকাশ মনি, কাশবন, ছন।

এখানে আছে বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক, জিরাফ, জেব্রা, বন্য গরুসহ কুমির, সাপ, উটপাখি। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক ৫টি অংশে বিভক্ত। যথা- ১. কোর সাফারি ২. সাফারি কিংডম ৩. বায়োডাইভারসিটি পার্ক ৪. এক্সটেনসিভ এশিয়ান সাফারি পার্ক ৫. বঙ্গবন্ধু স্কয়ার।

তবে সাফারি পার্কের মূল আকর্ষণ এই কোর সাফারি। যেখানে জনপ্রতি ১০০ টাকা টিকেটের বিনিময়ে বাসে করে একদম কাছ থেকে দেখতে পাবেন বাঘ, ভাল্লুক, সিংহ, জিরাফসহ বিভিন্ন প্রাণিদের।

আরও পড়ুন: দেশের ৬৪ জেলা ও বিশ্বের ২৮ দেশ ভ্রমণ চিশতীর

প্রথমে তারা সাফারি পার্কের ভেতর অসম্ভব সুন্দর ম্যাকাও পাখি দেখতে পায়। বড় খাচায় বন্দি নীল হলুদ রঙের ব্লু-ইয়েলো ম্যাকাও, গ্রিন উইংগড ম্যাকাও, স্কারলেট ম্যাকাও, গ্রে প্যারোট আরো বিরল প্রজাতির নানা পাখিদের ঘিরে ছিলো উৎসুক জনতার ঢল।

এরপর মৎস্য অ্যাকুরিয়ামে দিকে যায় সবাই। এরপর পিরানহাসহ অদ্ভুত রকমের নানা মাছ দেখে অবাক বনে যায় তারা। এরপর একেক করে কুমির, মদনটাক, ঈগল, সাদা ময়ুর, নীল ময়ুর, ধনেশ, রাজ ধনেশ, কলমি, ফ্লামিংগো, উট পাখি, এমু, আলপাকা, ঘোটক, শকুন, গিরগিটি, অজগর, ক্যাঙ্গারু, বানর সাদা রাজহাস, কালো রাজহাসসহ আরও অনেক প্রাণিদের দেখে মুগ্ধ হয় তার ৪ জন।

অনেক ঘোরাঘুরির পর তারা যায় টাইগার রেস্টুরেন্টে। সেখানে দুপুরের খাবার সেরে বিশ্রাম নিয়ে রওনা দেয় কোর সাফারির জন্য। বাসের জন্য কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হলো। এখানকার মূল আকর্ষণ কোর সাফারি হওয়ায় ভিড়ও অনেক।

আরও পড়ুন: নাপিত্তাছড়া ঝরনায় কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন ও খাবেন?

বাস ৪০ সিটের ছিল তাই তারা ৪ জনই দাঁড়িয়ে যাত্রা উপভোগ করতে লাগল। শুরতে দেখা হলো বাঘ মামা আর তার সঙ্গীদের সঙ্গে। এরপর সাক্ষাৎ হলো বোনের রাজা সিংহ মশাইয়ের সঙ্গে। তার সহধর্মিণী বাসের কাছে এসে গর্জন করে নিজের প্রভাব জানান দিল।

এরপর মায়া হরিণ আর চিত্রা হরিণ এর মায়ায় পড়ল সবাই। জেব্রা আর জিরাফ এর সঙ্গেও শুভেচ্ছা বিনিময় হলো। কারোও সঙ্গী সাথীর অভাব নেই। প্রত্যেককে সিমেন্টের দেওয়াল দিয়ে পৃথকভাবে রাখা হয়েছে ।

বিকেল ঘনিয়ে এলো। সময় হলো ঘরে ফেরার। ক্লান্ত শরীর নিয়ে চারজনে পার্ক থেকে বের হয়ে যেই পথে এসেছে সেই পথেই আবার হেঁটে অটোয় উঠলো। তারপর বাসে উঠে আবার জয়দেবপুর রেলস্টেশন। তারপর পৌঁছালো ঢাকা। তবে সেদিনের পুরো দিনটি ছিল তাদের জন্য উপভোগ্য।

লেখক: ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী

জেএমএস/এএসএম

আরও পড়ুন