শাপলায় রঙিন গাজীপুরের নরাইট বিল

গাজীপুরের কাপাসিয়ায় বারিষাব ইউনিয়নের নরাইট বিল। বিলে ফুটে আছে শাপলা ফুল। যেন এক প্রাকৃতিক স্বর্গ। দেখেই চোখ জুড়িয়ে যায়। সবাই একে শাপলা বিল নামেই চেনে। সূর্যের সোনালি রশ্মি পানিতে পড়তেই কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয় বিলের সৌন্দর্য। বছরের এ সময়ে যারা ঢাকার আশেপাশে থাকেন, ছুটে আসেন বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। ছোট্ট এই গ্রাম এখন ভ্রমণপিপাসুদের কেন্দ্রবিন্দু। জুলাই থেকে শাপলা ফোটা শুরু হয়। বিলের সঙ্গে যাদের বাড়ি, শাপলা তুলতে কিংবা মাছ ধরতে নৌকাই তাদের একমাত্র বাহন। এক পলকে মনে হবে, কোনো ক্যানভাসে আঁকা লাল শাপলার চিত্র। বিলজুড়ে শাপলার রাজত্ব।

তানভীর তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী। তার শখ ছবি তোলা। সময় পেলেই সঙ্গীদের নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন প্রকৃতির সঙ্গে নিজেদের ছবি তুলতে। দীর্ঘদিন ধরেই ইচ্ছা শাপলা বিলে ছবি তুলবেন। ঢাকার আশেপাশে এমন জায়গা পাবে কোথায়! শেষে একটি জায়গার সন্ধান পেলেন। নরাইট বিল। গাজীপুরের কাপাসিয়ায় বারিষাব ইউনিয়নে এর অবস্থান। বছরের এ সময়ে শাপলা ফুল ফোটায় সবাই এটিকে শাপলা বিল বলেই ডাকেন। শাপলা বিলের হদিস পেতেই মনের মাঝে এক কল্পনার জগৎ তৈরি হলো তানভীরের।

আরও পড়ুন: ভাসমান পেয়ারা বাজারে কীভাবে যাবেন ও কত খরচ?

যারা এখানে যেতে চান, তাদের কাপাসিয়া উপজেলা থেকে প্রথমে আমরাইদ বাজারে যেতে হবে। আমরাইদ বাজারে যাওয়ার পর পূর্বদিকের রাস্তা ধরে গেলে জালাল মার্কেট। জালাল মার্কেটে গিয়ে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দেবে। দিকনির্দেশনা মতে তানভীর সকাল সকাল এসে পৌঁছান শাপলা বিলে। তানভীরের মতো দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা এসেছেন বিলের জলে ফুটন্ত লাল শাপলা দেখতে। আশা করা যায়, শিগগির এটি দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হবে।

গাঢ় সবুজের বুকে এ যেন বাংলার ‘লাল স্বর্গ’। বিলে লাল, সাদা ও বেগুনি রঙের শাপলা জন্মালেও লাল শাপলা বেশি। বিলের যত ভেতরে চোখ যায়; ততই লালের আধিক্য। একপর্যায়ে তানভীরের মনে হলো শাপলার রাজ্যে হারিয়ে গেছেন তিনি। দেখতে পেলেন, কেউ কেউ মুঠো ভরে শাপলা তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বুঝতে পারলেন, শাপলার বিল শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, জীবিকারও মাধ্যম। বিল থেকে শাপলা তুলে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে কিছু পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে। এলাকার কেউ কেউ বিলের শাপলার ওপর নির্ভরশীল। কেউ শাপলা তোলেন, কেউবা বিল থেকে মাছ শিকার করে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

আরও পড়ুন: ইলিশ খেতে মাওয়া ঘাটে কীভাবে যাবেন, খরচ কত?

অনেকের পছন্দের তরকারি শাপলা। গ্রামের মতো শহরেও দিন দিন এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। সহজলভ্য শাপলা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। শাপলায় আছে প্রচুর ক্যালসিয়াম। শাপলায় ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আলুর চেয়ে সাতগুণ বেশি। শাপলা চর্ম ও রক্ত আমাশয়ের জন্য বেশ উপকারী।

বিলে ভ্রমণের জন্য চাইলে স্থানীয়দের কাছ থেকে ছোট নৌকা ভাড়া করা যায়। বিলে ভেসে বেড়াতে বেড়াতে আত্মতৃপ্তি অনুভূত হবে। যেন এই তো শুধু আমার সোনার বাংলাদেশ নয়, সুখের ঠিকানা। এত কিছুর মাঝে আবার দেখা মিলবে অনেক পাখি। বক, মাছরাঙা, শালিক, চড়ুইসহ নাম না জানা পাখি এসে বিলের মাঝে কিচিরমিচির করে তাদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। যারা ঢাকার আশেপাশে থাকেন, তারা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে একদিনের জন্য ঘুরে আসতে পারেন। কম খরচে সহজে যাওয়ার জন্য উত্তম জায়গা এটি। এই বিলে নৌকায় চরে কাঁটাতে পারবেন সুন্দর মুহূর্ত।

এসইউ/এএসএম