নিকলী হাওর ভ্রমণে কীভাবে যাবেন ও কী কী দেখবেন?
সিয়াম, ফাহিম, রুহুল, আকাশ ও মেহের পাঁচ বন্ধু। শুক্রবার সবার ছুটি ও পড়াশোনারও অতিরিক্তি কোনো চাপ না থাকায় তিনদিন আগে থেকেই তারা পরিকল্পনা করলেন ঢাকার বাইরে কোথাও ঘুরতে যাবেন।
ছুটির এই দিনে বন্ধুরা মিলে অনেক জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার কথা উঠলেও শেষমেষ ঠিক হলো কিশোরগঞ্জে যাবে। কিশোরগঞ্জের নিকলী-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম হাওরে যাওয়ার উদ্যোগ নিলেন তারা। সঙ্গে যুক্ত হলো কামরুল, মেহেদী, ইমরান, সাকিব, নোমান ও রকিব। এখন তাদের দলের সদস্য সংখ্যা ১১।
আরও পড়ুন: ঢাকার কাছেই ঘুরে আসুন গোলাপের রাজ্যে
শনিবার কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে সবাই কমলাপুরে পৌঁছালেন। একদিনে ঘুরে দেখতে চাইলে অবশ্যই আন্তঃনগর এগারো সিন্ধুর প্রভাতী ট্রেনে আসতে হবে। এগারো সিন্ধুর প্রভাতী বুধবার বাদে বাকি ৬ দিন কমলাপুর ষ্টেশন থেকে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ছাড়ে।
তারপর বিমানবন্দর, টঙ্গী, নরসিংদী ও ভৈরব ষ্টেশন হয়ে কিশোরগঞ্জ পৌঁছায় সবাই। সিট বুঝে ট্রেনের টিকেট ভাড়া ১২০-২০০ টাকা পর্যন্ত। ট্রেনে উঠে গান-গল্প-আড্ডায় শুরু হলো তাদের যাত্রা।
মাঝপথে ট্রেন চলার সময় টিটি এসে টিকেট চেক করে গেলেন। যদি কেউ ট্রেনে আসে তাহলে সবচেয়ে ভালো হবে কিশোরগঞ্জ সদরে পৌঁছার আগের ষ্টেশন গচিহাটা ষ্টেশনে নেমে গেলে। ষ্টেশন থেকে ইজিবাইক অথবা সিএনজি দিয়ে সহজেই চলে যাওয়া যায় ১৫ কিলোমিটার দূরের নিকলীতে।
আরও পড়ুন: একদিনের নোয়াখালী ভ্রমণে কী কী দেখবেন?
গন্তব্যে পৌঁছেই তারা সকালের নাশতা সেরে নিলেন। এবার সৌন্দর্য্য উপভোগের পালা। কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও ইটনা উপজেলা জুড়ে বিস্তৃত নিকলী হাওর।
যতদূর চোখ যায় হাওরের স্বচ্ছ জলরাশি আর সাদা তুলার মতো মেঘ। বিশাল জলরাশির মাঝে ছোট ছোট গ্রাম। যেন একেকটি দ্বীপরাষ্ট্র। হাওরজুড়ে গলা ডুবিয়ে থাকা হিজল গাছের সারি, করচের বন, শুশুকের লাফালাফি মুহূর্তেই মন ভালো করে দেয়।
ভ্রমণপিপাসুদের মনের ক্লান্তি মেটানোর এক অপরুপ স্থান নিকলী হাওর। এখানে খুঁজে পাওয়া যায় গ্রামীণ পরিবেশের ছোঁয়া। রিজার্ভ করা নৌকায় শুরু হলো ভ্রমণ। এ এলাকার বাসিন্দারাই মূলত নৌকার মাঝি। তারা মাছ ধরা পেশার সঙ্গেও জড়িত।
আরও পড়ুন: শাপলার রাজ্য সাতলা গ্রামে ঘুরতে যাবেন কীভাবে, খরচ কত?
শহরের বাজারে সকাল থেকেই চলে হাওরের মাছ বেচাকেনা। তবে তাদের মূল কাজ কৃষি। শুকনো মৌসুমে হাওরের উর্বর ভূমিতে নানা ধরনের ফসল উৎপাদন করে তারা। চলতে চলতে সবাই পৌঁছালেন মিঠামইনের কামালপুরে।
সেখানকার খেয়াঘাটে নেমে ছাদখোলা লেগুনায় অষ্টগ্রাম যাওয়ার যাত্রা শুরু। কিশোরগঞ্জের হাওরগুলোর চিরায়ত রূপের সঙ্গে নতুন সংমিশ্রণ ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম এর লম্বা-সরু সুন্দর সড়কটি। দু’পাশে পানি আর মাঝ দিয়ে সুন্দর রাস্তা। আর আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে সাদা বক। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়।
কিশোরগঞ্জের সৌন্দর্য লেখায় ফুটিয়ে শেষ করার মতো নয়। তবে হাওরের পানির রূপ উপভোগ করতে চাইলে বর্ষাকাল বা তার পরপরই আসতে হবে। তাই নিকলী ভ্রমণের উপযুক্ত সময় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস। তবে সেপ্টেম্বরে তুলনামূলক পানি কম থাকে।
আরও পড়ুন: মা-মেয়েসহ ৬ পর্যটকের সফল মহাকাশ ভ্রমণ
এদিকে চোখ জুড়াবে জেলেদের নৌকা ও শিশুদের সাঁতার কাটা দেখেও। লোভ সামলাতে না পেরে পানিতে ঝাঁপাঝাঁপি করে ক্লান্ত শরীরকে ভিজিয়ে নিলো সবায়। তারপর আবারও রিজার্ভ করা একটি নৌকায় বসে হাওরের মাছ ও মাংস দিয়ে সকলে দুপুরের খাবার খেয়ে সবাই তৃপ্তি মেটালো।
ঘোরাঘুরি আর আড্ডায় বিকেল গড়িয়ে এলো। সবার ক্লান্ত শরীর বলছে ঘরে ফিরতে হবে আর মন বলছে আরেকটু থাকতে। তবে দিনশেষে আবারও ফিরতে হবে যান্ত্রিক জীবনে। ক্লান্ত শরীরে সকলে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে চললো ঢাকার উদ্দেশ্যে। সঙ্গে সবাই আনলো হাওরের সুন্দর স্মৃতি।
লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী
জেএমএস/এমএস