২১ বছরেই ১৯৬ দেশ ভ্রমণ তরুণীর, জানালেন অভিজ্ঞতা
মাত্র ২১ বছর বয়সেই ঘুরে ফেলেছেন বিশ্বের ১৯৬টি দেশ। এরই মধ্যে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে ভ্রমণের জন্য গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নামও তুলেছেন তিনি। বলছি, মার্কিন তরণী লেক্সি অ্যালফোর্ডের কথা। নিজের ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমেই ভ্রমণ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন লেক্সি।
সেখানেই বিশ্বের ৫টি বিস্ময়কর স্থানের গল্প তিনি বলেছেন। আর আশ্চর্যের বিষয় হলো, ওই তালিকায় পাকিস্তান এমনকি উত্তর কোরিয়ার মতো দেশেও পা রেখেছেন তিনি। বিশ্বভ্রমণের কথা বলতেই প্রথমে পাকিস্তানের নাম নেন তিনি।
আরও পড়ুন: গ্রামের কোনো ঘরে নেই দরজা, শাস্তির ভয়ে হয় না চুরিও
লেক্সির মতে, আমি পাকিস্তানে যেতে খুবই ভয় পেয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম আমি যেমনটা ভেবেছিলাম, তেমনটা একেবারেই নয়। ওই দেশেও অনেক অনেক ভালো মানুষ আছেন। মজাদার সব খাবার খাওয়ার অভিজ্ঞতা তো হয়েছেই। পাশাপাশি দুর্দান্ত সব জায়গাও ঘুরে দেখেছি।
এর পাশাপাশি বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক রাস্তাগুলোর মধ্যে অন্যতম কারাকোরাম হাইওয়েতে গাড়ি চালিয়ে দারুণ মজাও পেয়েছি। ফেয়ারি মেডোজ পর্বতের তৃণভূমি আর উঁচু নাঙ্গা পর্বত আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে।
এর পরেই লেক্সির কথায় উঠে এসেছে তুর্কমেনিস্তানের নাম। লেক্সি জানান, সেখানকার ভিসা হতে অনেক সময় লেগেছিল। আর এটি গোটা বিশ্বের একমাত্র জায়গা, যেখানে যেতে গেলে গাইড কোম্পানির সঙ্গে ট্যুর বুকিং করা আবশ্যক।
এর রাজধানী শহর অ্যাশগাবাতে দেখা মিলবে সোনা ও মার্বেলের তৈরি দালানের। শহরটি সাজানো-গোছানো সুন্দর হলেও ভারি অদ্ভুত শহর।
আরও পড়ুন: যে দেশে নেই রাস্তা, মধ্যরাতেও আকাশে থাকে সূর্য
এরপরেই লেক্সি ভেনেজুয়েলা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জানান। তার কথায়, ‘শুনেছিলাম ভেনিজুয়েলা খুবই ভয়ংকর জায়গা। তবে আমার তো তেমন কিছুই মনে হয়নি। বিশ্বের সর্বোচ্চ জলপ্রপাতগুলোর মধ্যে অন্যতম অ্যাঞ্জেল জলপ্রপাতের সৌন্দর্য মুগ্ধ করবে। তবে সেখানে যাওয়া কিন্তু একেবারেই সহজ নয়। অনেক প্রতিকূলতা ও দীর্ঘ পথ হেঁটে তবেই পৌঁছতে হয়।’
লেক্সির তালিকার চতুর্থ স্থানে রয়েছে আইসল্যান্ড। তিনি জানান, এখানে আগ্নেয়গিরি ও উষ্ণ প্রস্রবণ থেকে শুরু করে ঠান্ডা বরফে আবৃত উপহ্রদ ও চারপাশে বিশাল বিশাল তুষারাবৃত পর্বতের দৃশ্য উপভোগ করা যাবে। সূর্যাস্ত এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে। আর এখানে যেন প্রতিটি পাথর থেকেই জলধারা প্রবাহিত হচ্ছে।
সব শেষে মিশরের নাম করেন লেক্সি। তার বক্তব্য, প্রায় ৫ হাজার বছর ধরে মরুভূমির মাঝে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা এখানকার পিরামিডগুলো যেন যুগের পর যুগ ধরে মানুষকে তাক লাগিয়ে আসছে।
আরও পড়ুন: যে শহরে থাকতে লাগে না টাকা, সবাই স্বাধীন!
এগুলোকে আসলে বিশ্বের প্রাচীনতম অক্ষত পিরামিড বলে গণ্য করা হয়। তবে এমন একটা জায়গায় পর্যটক নেই বললেই চলে। আর এটা আমাকে ভীষণই হতাশ করেছে।
২০২২ সালের ৮ অক্টোবর গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের সনদপত্র হাতে নিয়ে ইনস্টাগ্রামে ছবি পোস্ট করেন লেক্সি। সেখানে ক্যপশনে তিনি লেখেন, ‘৪ অক্টোবর আমার সর্বশেষ গন্তব্য মোজাম্বিকে পা রেখে শৈশবের একটি স্বপ্ন পূরণ করেছি ও প্রতিটি দেশে ভ্রমণের জন্য সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তির বিশ্বরেকর্ড ভেঙেছি।’
তিনি আরও লেখেন, ‘উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ছোট পাহাড়ি শহরে বড় হয়েছেন লেক্সি। যেখানকার অনেক মানুষই বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেনি। সেখানকার একটি মেয়ে হয়ে বিশ্বের অন্যান্য স্থানে ভ্রমণ করা যেন মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার মতো ছিলো। তবে আমি আমার স্বপ্নপূরণ করতে পেরেছি।’
আরও পড়ুন: একদিনের ছুটিতেই ঘুরতে পারবেন দেশের যেসব স্থানে
তার বিশ্বভ্রমণের পুরো যাত্রা জুড়ে ছিল আনন্দ-বেদনার অসংখ্য মুহূর্ত। বিস্তীর্ণ ল্যান্ডস্কেপ, নতুন স্বাদ, স্থানীয়দের উদারতা ও সাহসিকতাসহ বিশ্বের প্রতিটি কোণে পাওয়া সৌন্দর্য আমার চোখ খুলে দিয়েছে, বলে জানান তিনি।
‘যাইহোক একাকীত্ব, একক ভ্রমণের সময় হয়রানি, ৭০০০ পৃষ্ঠার ডকুমেন্টেশন, ননস্টপ লজিস্টিক সমস্যা থেকে চাপ ও ক্রমাগত ভ্রমণের ধকল কাটিয়ে উঠতে পেরে গর্ববোধ করছি।’
‘আশা করছি আমার মতো অনেকেই আছেন যাদের মধ্যে আছে বিশ্বভ্রমণের নেশা। তারা আমাকে দেখে উৎসাহিত হতে পারেন ও নিজেরে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন।’
সূত্র: ডেইলিমেইল
জেএমএস/এএসএম